Advertisement
১৯ মে ২০২৪

দেওয়াল জোড়া প্রচার আছে, ছড়া কোথায়

দেওয়াল লিখন থেকে প্রায় উধাও ভোটের ছড়া। পুরুলিয়া জেলার রাজনীতিবিদেরাই শুধু নন, প্রবীণ নাগরিকেরাও বলছেন, আগে ভোট এলেই দেওয়ালে দেওয়ালে জমে উঠত লিখনের লড়াই। দেওয়ালের সাদা রঙের ক্যানভাসে লাল-নীল-সবুজ বা কালো রং দিয়ে ভোটের ছড়া ফুটে উঠত গ্রাম-শহরে। এক পাড়ায় কোনও দল প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করে ছড়া লিখলে অন্য পাড়ায় দিন কয়েকের মধ্যে জবাবি ছড়া লিখে ফেলত তাদের বিরোধী দল। ভোটের আগে এই নির্মল ও কুৎসাহীন ‘ছড়ার লড়াই’ দেখতে অভ্যস্ত ছিলেন সাধারণ মানুষ।

লক্ষ্মণপুরে তৃণমূলের দেওয়াল লিখন। ছবি: প্রদীপ মাহাতো।

লক্ষ্মণপুরে তৃণমূলের দেওয়াল লিখন। ছবি: প্রদীপ মাহাতো।

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৪ ০০:২৪
Share: Save:

দেওয়াল লিখন থেকে প্রায় উধাও ভোটের ছড়া।

পুরুলিয়া জেলার রাজনীতিবিদেরাই শুধু নন, প্রবীণ নাগরিকেরাও বলছেন, আগে ভোট এলেই দেওয়ালে দেওয়ালে জমে উঠত লিখনের লড়াই। দেওয়ালের সাদা রঙের ক্যানভাসে লাল-নীল-সবুজ বা কালো রং দিয়ে ভোটের ছড়া ফুটে উঠত গ্রাম-শহরে। এক পাড়ায় কোনও দল প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করে ছড়া লিখলে অন্য পাড়ায় দিন কয়েকের মধ্যে জবাবি ছড়া লিখে ফেলত তাদের বিরোধী দল। ভোটের আগে এই নির্মল ও কুৎসাহীন ‘ছড়ার লড়াই’ দেখতে অভ্যস্ত ছিলেন সাধারণ মানুষ।

জেলার বর্তমান রাজনৈতিক নেতারা কিন্তু মানছেন, বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে তাতে ভোটের ছড়ায় অনেকটাই ভাটার টান। তার একটা কারণ, অন্য প্রচারে এতই ব্যস্ত কর্মীরা, যে বহু ক্ষেত্রে তাঁরা দেওয়ালে ছড়া লেখার সময়ই পাচ্ছেন না। কিন্তু, ছড়া যে একেবারেই নেই, তা নয়। তবে, অনেক জায়গাতেই এ ধরনের ছড়া দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। আবার অনেক ছড়া লেখা হচ্ছে, যা মানে ও গুণে আগের চেয়ে অনেক কমজোরি। ছড়ার আড়ালে থাকছে ব্যক্তি-কুৎসাও। তবু কিছু জায়গায় এখনও ভাল ছড়া লেখা হচ্ছে। যেমন, হুড়ার ভাগাবাঁধ অঞ্চলের একটি দেওয়ালে তৃণমূল লিখেছে, ‘বাংলার এত উন্নয়ন, কোন ম্যাজিকে ভাই, তাই তো এ বার ভারতবাসী, দিল্লিতে মমতা ম্যাজিক চাই’। কাশীপুরের দেওয়ালে বামফ্রন্টের লিখন, ‘ফলন ভাল, ন্যায্য দাম কৃষক পেল কই, কৃষিক্ষেত্রে পরিবর্তন, ফড়েরা মারে দই।’ কিংবা আদ্রা এলাকায় বামফ্রন্টের একটি লিখনে ইতিমধ্যেই উঠে এসেছেন বীরভূমের দাপুটে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল ও সারদা-কাণ্ড।

মাঝেরগ্রাম এলাকার একটি দেওয়ালে লেখা হয়েছে, ‘টেট পরীক্ষায় জুয়াচুরি, বেকার যুবক পায় না চাকুরি, সারদার প্রতীক তুমি, তাই করতে চাও না সিবিআই। পরিবর্তনের এই জোড়াফুল, অনুব্রত আর আরাবুল’। আবার নিখাদ মজাও রয়েছে হুড়ার লক্ষ্মণপুরে তৃণমূলের দেওয়াল লিখনে‘দেশটা গেল রসাতলে, সিংহমামার বিয়েতে, দিল্লি চলো এ বার ভাই, ঘাসফুল ফোটাতে’। কংগ্রেস পরিচিত একটি লিখনেই বেশি দেওয়াল ভরেছে। তারা লিখেছে, ‘দিদির পায়ে হাওয়াই চটি, ভাইয়েরা সব কোটিপতি’ অথবা ‘এক বৃন্তে দু’টি ফুল, চিটফান্ড আর তৃণমূল’।

ছড়ায়-ছন্দে বামেদের দেওয়াল লিখনে। —নিজস্ব চিত্র।

এগুলি বিক্ষিপ্ত উদাহরণ বলেই মানছেন জেলা তৃণমূলের কাযর্করী সভাপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মন্তব্য, “কংগ্রেস এত বড় বড় কেলেঙ্কারি করে রেখেছে যে ছোট ছড়ায় তা তুলে ধরা শক্ত কাজ। তবে এটা ঠিক, যে কোওন কারণেই হোক, ছড়ার লিখন কমে যাচ্ছে। আমরা যে লিখিনি তা নয়। তবে কম।”

সিপিএমের পুরুলিয়া শহর জোনাল কমিটির সম্পাদক কৌশিক মজুমদারও স্বীকার করছেন, “ছড়ায় ভোটের লেখা বড় আকর্ষণ।” তা হলে বামফ্রন্টের লেখাতেও ছড়া সেভাবে নেই কেন? কৌশিকবাবুর ব্যাখ্যা, “দেওয়াল এখন পেশাদার শিল্পীরা লেখেন। অন্য বিষয়গুলি নিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন যে এই বিষয়টি আমরা মাথা থেকে সরিয়ে দিয়েছি, তা বুঝতেই পারিনি।”

পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রথীন্দ্রনাথ মাহাতোর কথায়, “এ বার গোটা লোকসভা এলাকায় দেওয়ালে দেওয়ালে তেমন ভাবে ছড়া নজরে পড়েনি। এটা একটা ফাঁক তো অবশ্যই। তবে, আমরা এ বার ছড়ার থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি ঝুমুর-সহ জেলার যে সমস্ত লোকগান রয়েছে, সে দিকে। সেই গানের মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রার্থীকে ভোট দেবার আহ্বান জানাচ্ছি।” তৃণমূলের এক কর্মী উত্তম সিংহের আক্ষেপ, “আগে ছড়া লিখতেন দলের কর্মীরাই। নানা পত্রপত্রিকা, খবরের কাগজ থেকে ছড়া আগে থেকেই লিখে রাখা হত। দেওয়ালে দেওয়ালে লেখা সে ধরনের ছড়ায় সেই প্রস্তুতিরই প্রতিফলন দেখা যেত। এখন দেওয়াল লেখেন পেশাদার শিল্পীরা। তাঁরা আর তেমন মানের ছড়া উপহার দিতে পারছেন কই?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE