Advertisement
২৫ মে ২০২৪

দু’বছর পরে পুরুলিয়া শহরে ফিরল বইমেলা

দু’বছর পরে বইমেলা ফিরে এসেছে পুরুলিয়ায়। তাই শীতের কনকনানি উপেক্ষা করেই বইপ্রেমীরা অনেক রাত পর্যন্ত মেলা চত্বরে ভিড় করে থাকছেন। নতুন বই হাতে নাড়াচাড়া করার সুযোগ পেয়ে মেলা থেকে তাঁরা নড়তে নারাজ। অনেকে আবার সকালে চড়ুইভাতি করতে গেলেও সন্ধ্যায় মেলায় চলে এসেছেন। রবিবার পুরুলিয়া বইমেলায় ঘুরে এমনই নানা দৃশ্য দেখা গেল।

বইপ্রেমীদের নিজের বই পড়ে শোনাচ্ছেন লেখক। নিজস্ব চিত্র।

বইপ্রেমীদের নিজের বই পড়ে শোনাচ্ছেন লেখক। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:০৬
Share: Save:

দু’বছর পরে বইমেলা ফিরে এসেছে পুরুলিয়ায়। তাই শীতের কনকনানি উপেক্ষা করেই বইপ্রেমীরা অনেক রাত পর্যন্ত মেলা চত্বরে ভিড় করে থাকছেন। নতুন বই হাতে নাড়াচাড়া করার সুযোগ পেয়ে মেলা থেকে তাঁরা নড়তে নারাজ। অনেকে আবার সকালে চড়ুইভাতি করতে গেলেও সন্ধ্যায় মেলায় চলে এসেছেন। রবিবার পুরুলিয়া বইমেলায় ঘুরে এমনই নানা দৃশ্য দেখা গেল।

বড়দিনের আগের দিন, গত বৃহস্পতিবার ভিক্টোরিয়া স্কুলের মাঠে শুরু হয়েছে ২৯তম পুরুলিয়া বইমেলা। এই শহরে শেষ বইমেলার আসর বসেছিল ২০১১ সালে। তারপরে দু’বছর মেলা হয়েছে রঘুনাথপুরে ও বলরামপুরে। মেলা সরে যাওয়ায় আক্ষেপ ছিল পুরুলিয়াবাসীর। তাই এ বার সদরে মেলা ফিরে আসায় তাঁরা খুশি। বইমেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক কীর্তন মাহাতো বলেন, “আমরা শহর ও মফস্‌সল মিলিয়ে মিশিয়ে বইমেলা করছি। বই পড়ার আগ্রহ বাড়াতে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মেলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মানুষ তা স্বাগতও জানাচ্ছেন।”

তবে অনেকে আবার বইমেলার স্থান-কাল নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ। সম্প্রতি পুরুলিয়া শহরে শেষ হয়েছে লিটল ম্যাগাজিন মেলা। পুরুলিয়ার লিটল ম্যাগের এক প্রকাশক রঞ্জন আচার্য বলছিলেন, “বইমেলা হল উত্‌সব। লিটল ম্যাগ একটা জগত, কিন্তু বইমেলা আরও বৃহত্তর। এই মেলা নানা ধরনের মানুষকে একই বৃত্তে নিয়ে আসে।” মেলায় ঘুরে গিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোও। তাঁর মতে, বইয়ের চিরদিনই আকর্ষণ রয়েছে। বরং তা বাড়ছে।”

মেলায় দেখা মিলল হিমালয় ভ্রমণের লেখক ও প্রকাশক কালীদাস চক্রবর্তীর। তাঁর বাড়ি বেহালায় হলেও নিজেকে এখন উত্তরাখণ্ডের গাড়োয়ালের বাসিন্দা বলতেই তিনি পছন্দ করেন। বছরের ১০ মাস সেখানকার একটি আশ্রমেই তিনি থাকেন। তাঁর কথায়, “আমাকে বড্ড টানত হিমালয়, বরফের দেশ। তারপর হিমালয়ে গিয়ে আবিস্কার করলাম এ এক অন্য জীবন। ব্যাস প্রেমে পড়ে গেলাম। আজও সেই প্রেমের টান থেকে বেরোতে পারিনি।” নিজের লেখা বই পাঠকদের হাতে তুলে দিয়ে এমনই বলে যাচ্ছিলেন কালীদাসবাবু। বহরমপুরের একটি কলেজের পদার্থবিদ্যার অবসরপ্রাপ্ত এই শিক্ষক ইতিমধ্যেই লিখে ফেলেছেন পাঁচ খণ্ডের ‘হিমালয় দর্শন’। তার সঙ্গে হিমালয়কে নিয়ে আরও কত বই। সত্তোরর্ধ এই ‘যুবক’ নিজেই বই হাতে নিয়ে বইপ্রেমীদের পড়ে পড়ে হিমালয়ের রূপের কথা শোনাচ্ছিলেন। জানালেন, বছরের দু’মাস তিনি রাজ্যের বিভিন্ন জেলার বইমেলায় ঘোরেন। পাহাড়ে একটি আশ্রম গড়েছেন। বই দেখানোর পাশাপাশি আশ্রমের ঠিকানা দিয়ে আগ্রহীদের উত্তরাখণ্ডে তাঁর আশ্রমে যাওয়ার আমন্ত্রণও করছেন।

বই বিক্রি হচ্ছে কেমন? কালীদাসবাবু বলেন, “গ্রন্থাগারের লোকজনকে দেখাচ্ছি। তাঁদের অনেকেরই বক্তব্য, এ সব বইয়ের নাকি তাঁদের পাঠক নেই। তবে সাধারণ মানুষ কিন্তু কিনছেন। না কিনলেও দেখছেন। সবচেয়ে বড় কথা পাঠকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি। এও তো বড় পাওনা।”

আবার অন্য ধরনের বই যাঁরা প্রকাশ করেন, তাঁদের আক্ষেপ গ্রন্থাগার ছাড়া সাধারণ মানুষ বিশে বই কিনছেন না। প্রিয়া বুক হাউসের রাজু চন্দ্র বললেন, “গ্রন্থাগারগুলিকে বাদ দিলে খুচরো বিক্রি নেই বললেই চলে।” আর এক প্রকাশক খোন্দকার নজরুল ইসলামের কথায়, “৩০টি গ্রন্থাগারকে পেয়েছি। তাও অল্প টাকার বই কিনছে। সাধারণ ক্রেতার বিক্রি নেই। বছর দুয়েক আগে রঘুনাথপুরে অবশ্য সাধারণ ক্রেতারা ভালো বই কিনেছিলেন।” নমিতা রায় নামে এক প্রকাশক জানান, বাজার একেবারেই ভালো নয়। খরচও পোষাবে না। তবে নামী প্রকাশকদের কাউন্টারের অবস্থা অবশ্য ভালো। দেজের সুদীপ পাল বা পত্রভারতীর শুভাশিস লাহিড়ির কথায়, “বিক্রি হচ্ছে। তবে যে রকম আশা করেছিলাম, সে রকম নয়।”

কিন্তু এ বারও বই প্রেমে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে সেই ধুলো। মেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক কীর্তন মাহাতো জানান, দমকল ডেকে একদিন অন্তর জল ছড়ানো হচ্ছে। কিন্তু বাজেট কম থাকায় রোজ জল দেওয়াও যাচ্ছে না। প্রকাশকদের স্টলে স্টলে অবশ্য পানীয় জল পৌঁছে যাচ্ছে। জল নিয়ে যাচ্ছেন পুরুলিয়া মফস্‌সল থানার রামনগরের জলধর মাহাতো। প্রকাশকরা বলছেন, “হাঁড়ি নিয়ে স্টলে স্টলে ‘জল খাবেন না কি, জল খাবেন না কি’ বলে উকি ডাক দিয়ে যাচ্ছেন। ওর নামখানা কিন্তু খাসা— ‘জলধর’।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

book fair purulia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE