Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

দারিদ্রকে জয় করেও কৃতী সৌরভ, উজ্জ্বল আরও চার

এ বারও মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় বাঁকুড়ার জয়জয়কার। সেরা ১০ জনের মধ্যে উঠে এসেছে এই জেলার পাঁচ জনের নাম। ৬৭৮ পেয়ে পঞ্চম হয়েছে বিষ্ণুপুর শিবদাস সেন্ট্রাল গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী নিবেদিতা কাউড়ী ও খাতড়া শিশু নিকেতনের ছাত্র সৌমিক মহান্তি। সংবাদমাধ্যমে খবর জানাজানি হতেই নিবেদিতার বাড়িতে শুভেচ্ছা জানাতে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৪ ০০:৫৮
Share: Save:

এ বারও মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় বাঁকুড়ার জয়জয়কার। সেরা ১০ জনের মধ্যে উঠে এসেছে এই জেলার পাঁচ জনের নাম।

৬৭৮ পেয়ে পঞ্চম হয়েছে বিষ্ণুপুর শিবদাস সেন্ট্রাল গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী নিবেদিতা কাউড়ী ও খাতড়া শিশু নিকেতনের ছাত্র সৌমিক মহান্তি। সংবাদমাধ্যমে খবর জানাজানি হতেই নিবেদিতার বাড়িতে শুভেচ্ছা জানাতে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। স্কুলেও সহপাঠী ও শিক্ষিকাদের মধ্যে উচ্ছাসের আবহ দেখা যায়। ভৌত বিজ্ঞান ও জীবন বিজ্ঞানে ১০০ নম্বর পাওয়া নিবেদিতা বলছে, “ভবিষ্যতে ডাক্তার হতে চাই।” বিষ্ণুপুরের মাধবগঞ্জে নিবেদিতার বাড়িতে চলছিল মিষ্টিমুখ পর্ব। তার মা সঞ্চিতাদেবী ওন্দা গার্লস হাইস্কুলের ইংরেজির শিক্ষিকা, বাবা অক্ষয়কুমার পঞ্চায়েত অফিসের কর্মী। নিবেদিতা জানায়, মায়ের কাছে ইংরেজি পড়েছে সে। বাকি বিষয়গুলির জন্য দু’জন গৃহশিক্ষক ছিলেন। পড়াশোনার বাইরে নিবেদিতা ছবি আঁকা আর পরিবারের সকলের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতে সে ভালবাসে। পরীক্ষার পরেই তারা পুদুচেরি ঘুরে এসেছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মধুমিতা কুণ্ডু বলেন, “গতবার আমাদের স্কুলের ছাত্রী অলকানন্দা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে দশম হয়েছিল। এ বার নিবেদিতা পঞ্চম হল। পর পর এমন সাফল্যে আমরা সবাই খুশি।”

বাঁ দিক থেকে, সৌরভ চট্টোপাধ্যায়, সৌমিক মহান্তি, নিবেদিতা কাউড়ী, প্রীতম দত্ত ও সৌরভ কৈবর্ত। ছবিগুলি তুলেছেন শুভ্র মিত্র ও দেবব্রত দাস।

স্কুলে কোনওদিন দ্বিতীয় হয়নি খাতড়ার সৌমিক মহান্তি। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে ‘দুষ্টু’ ছেলেটা বরাবরই ক্লাসের পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে। গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানে সে ১০০ র মধ্যে ১০০ পেয়েছে। আদি বাড়ি সারেঙ্গার জামবনি গ্রামে হলেও বাবা তাপসকুমার মহান্তি খাতড়া ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে এবং মা সীমা মহান্তি স্বাস্থ্য দফতরের কর্মী হওয়ায় তাঁরা এখন খাতড়ার বিদ্যাসাগর পল্লিতে থাকেন। তার ছ’টি বিষয়েই গৃহশিক্ষক ছিল। সৌমিক জানায়, সারাদিনে মেরেকেটে ৪-৫ ঘণ্টা সে পড়াশোনা করেছে। এর বাইরে ক্রিকেট খেলতে, গল্পের বই পড়তে সে ভালবাসে। তবে বন্ধুরা এক জায়গায় জড়ো হলে আড্ডা হবেই। সৌমিকের নিজের কথায়, “মাধ্যমিকে ভাল করব বলে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। কিন্তু এতটা ভাল হবে ভাবিনি।” ফল দেখে চমকে গিয়েছেন তাঁর বাবা তাপসবাবু, খাতড়া শিশু নিকেতনের প্রধান শিক্ষিকা দীপালি ঘোষ-ও। দু’জনেই বলেছেন, “আশা ছিল ভাল ফল হবে। এ যে দেখছি অভাবনীয় সাফল্য।” গৃহশিক্ষকদের সঙ্গে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেনি মাধ্যমিকের এই কৃতী ছাত্র। সে জানিয়েছে, পদার্থবিদ্যায় তার কৌতূহল রয়েছে। তাই বিজ্ঞান নিয়েই উচ্চশিক্ষা করতে চায় সে।

৬৭৬ পেয়ে মেধা তালিকায় সপ্তম স্থানে রয়েছে বিষ্ণুপুর হাইস্কুলের প্রীতম দত্ত ও পাত্রসায়রের হদলনারায়ণপুর হাইস্কুলের ছাত্র সৌরভ চট্টোপাধ্যায়। স্কুল শিক্ষক বাবা আনন্দমোহন দত্ত-র সঙ্গে স্কুলে মার্কশিট আনতে এসেছিল প্রীতম। গণিত ও ভৌতবিজ্ঞানে সে ১০০ নম্বরই পেয়েছে। লাজুক হেসে সে বলে, “রোজ ৬ ঘণ্টা পড়েছি। এর বাইরে ক্রিকেট খেলা ও ক্যুইজে যোগ দিয়েছি। ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ার ইচ্ছা।” বিষ্ণুপুরের গোপালগঞ্জে তাদের বাড়ি। বাবা বলেন, “ছোট থেকেই পড়াশোনার ব্যাপারে ওর কোনও ফাঁকি নেই। ভাল রেজাল্ট হবে এমনটাই আশা করেছিলাম।” স্কুলের প্রধান শিক্ষক শিক্ষক হারাধন মণ্ডল জানান, বরাবরই প্রীতম প্রথম হয়ে আসেছে। সে স্কুলের মুখ উজ্জ্বল করবে বলে প্রত্যাশা ছিলই।

পাত্রসায়রের রামপুর গ্রামের সৌরভ নিতান্তই ছাপোষা কৃষক পরিবারের সন্তান। সে পদার্থ বিজ্ঞান ও জীবনবিজ্ঞানে ১০০-র মধ্যে ১০০ পেয়েছে। কলা ও বিজ্ঞান বিভাগে তার দু’জন গৃহশিক্ষক ছিল। সারাদিনে ৬-৭ ঘণ্টা সে পড়াশোনা করত। অবসরে ক্রিকেট খেলা, গোয়েন্দা উপন্যাস পড়তে সে ভালবাসে। ভবিষ্যতে সে অধ্যাপক হতে চায়। তার কথায়, “স্কুলের শিক্ষকরা আমাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছেন।” সৌরভের বাবা আনন্দময় চট্টোপাধ্যায় এবং হদলনারায়ণপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অচল মুখোপাধ্যায় একসুরে বলেন, “ও আমাদের গর্ব”।

এই তারাদের ভিড়ে জ্বলজ্বল করছে আরও একজন। কোতুলপুর থানার প্রত্যন্ত লেগো রামব্রহ্ম রামকুমার বিদ্যাপীঠের ছাত্র সৌরভ কৈবর্ত। ৬৭৫ পেয়ে মেধা তালিকায় অষ্টম স্থান পাওয়া এই কৃতী ভৌত বিজ্ঞান ও জীবন বিজ্ঞানে ১০০-র মধ্যে ১০০ পেয়েছে। বাড়িতে দারিদ্রের আঁধার। জমি নেই। টিনের ছাউনির কাঁচা বাড়ি। বাবা অশোক কৈবর্ত বিষ্ণুপুরের একটি গেঞ্জি কারখানায় সামান্য মজুরীতে কাজ করেন। টানাটানির সংসারে থেকেও ছেলের এই সাফল্যে খুশি বাবা-মা। সৌরভ জানায়, স্কুলের শিক্ষকরাই স্কুলের বাইরেও তাকে পড়াশোনা দেখিয়ে দিয়েছে বলেই সে এতদূর এসেছে। গ্রামে চিকিত্‌সক নেই বলে তার ইচ্ছে বড় হয়ে ডাক্তার হবে। কিন্তু বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করার বিপুল খরচ কোথা থেকে আসবে সেই দুর্ভাবনায় মাধ্যমিকেরা সাফল্যকে ভাল ভাবে অনুভব করতে পারছে না সে। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিলীপ ঘোষাল বলেন, “পঞ্চম শ্রেণি থেকেই ওর মধ্যে সম্ভাবনা লক্ষ্য করেছি। আমরা সবাই সাধ্যমতো ওকে পড়াশোনায় সাহায্যের চেষ্টা করেছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

madhyamik result sourav ujjyal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE