Advertisement
০৩ মে ২০২৪
আত্মঘাতী বধূ

ধর্ষণের নালিশ চাপা দেওয়ায় অভিযুক্ত নেতা

ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আগেই উঠেছে। এ বার পাত্রসায়রে একটি সালিশিতে গিয়ে ধর্ষণে অভিযুক্তকে ছাড়িয়ে নেওয়া এবং থানায় অভিযোগ না জানানোর হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) বাঁকুড়ার প্রাক্তন জেলা সহ-সভাপতি সুব্রত দত্ত ওরফে গোপের বিরুদ্ধে। শুক্রবার দুপুরে আত্মঘাতী হন ওই মহিলা। অপমানেই স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেছেন তাঁর স্বামী। ওই রাতেই মৃতার স্বামী পড়শি যুবক শীর্ষেন্দু দত্তের বিরুদ্ধে ধর্ষণ এবং স্ত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ জানান থানায়।

অভিযুক্ত সুব্রত দত্ত।

অভিযুক্ত সুব্রত দত্ত।

দেবব্রত দাস
পাত্রসায়র শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৪ ০১:২৩
Share: Save:

ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আগেই উঠেছে। এ বার পাত্রসায়রে একটি সালিশিতে গিয়ে ধর্ষণে অভিযুক্তকে ছাড়িয়ে নেওয়া এবং থানায় অভিযোগ না জানানোর হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) বাঁকুড়ার প্রাক্তন জেলা সহ-সভাপতি সুব্রত দত্ত ওরফে গোপের বিরুদ্ধে। শুক্রবার দুপুরে আত্মঘাতী হন ওই মহিলা। অপমানেই স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেছেন তাঁর স্বামী।

ওই রাতেই মৃতার স্বামী পড়শি যুবক শীর্ষেন্দু দত্তের বিরুদ্ধে ধর্ষণ এবং স্ত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ জানান থানায়। তৃণমূলের ছাত্রনেতা গোপের বিরুদ্ধেও আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ করেন তিনি। শনিবার রাত পর্যন্ত পুলিশ অভিযুক্তদের ধরেনি। মৃতার স্বামীর দাবি, অভিযোগপত্র ‘রিসিভ’ করার স্ট্যাম্পও মেলেনি থানা থেকে।

পাত্রসায়র থানার দাবি, বধূর দেহ উদ্ধারের পর একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয়। মামলাটির সঙ্গেই বধূর স্বামীর অভিযোগের ভিত্তিতে নতুন ধারাগুলিও যুক্ত হবে। তদন্ত হচ্ছে। পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার এ নিয়ে মন্তব্য করেননি।

শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ গোপেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। আনন্দবাজারের কাছে গোপে দাবি করেছেন, “আমি দু’পক্ষের ডাকে মীমাংসা করতে গিয়েছিলাম মহিলার সম্মানরক্ষার জন্য। কাউকে চাপ দিইনি। কোনও নিদানও দিইনি। ভবিষ্যতেও কেউ মীমাংসা করতে ডাকলে যাব।”

মৃতার স্বামীর অভিযোগ, গত সোমবার বাড়ির সবাই মনসাপুজোয় ব্যস্ত ছিলেন। সেই সুযোগে শীর্ষেন্দু বাড়িতে ঢুকে তাঁর স্ত্রীকে ধর্ষণ করে। তিনি ওই যুবককে পাকড়াও করে একটি ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেন। পরে গোপে বাড়িতে এসে চুপচাপ বিষয়টি মিটিয়ে নিতে চাপ দেন এবং থানা-পুলিশ না করার জন্য হুমকি দিয়ে গোপে অভিযুক্তকে ছাড়িয়ে নিয়ে চলে যান। এর পর থেকে শীর্ষেন্দু তাঁর স্ত্রীর উদ্দেশে কটূক্তি করতে থাকে এবং ফের ধর্ষণের হুমকি দিতে থাকে। মৃতার স্বামী এ-ও অভিযোগ, তৃণমূলের নেতাদের টাকা দেওয়ায় কেউ তাকে কিছু করতে পারবে না বলেও শাসায় শীর্ষেন্দু।

শুক্রবার দুপুরে বাড়ির দোতলায় ২৮ বছরের ওই বধূর ঝুলন্ত দেহ মেলে। শনিবার সকালে তাঁর স্বামী বলেন, “গোপের কোপে পড়ে যাওয়ার ভয়েই প্রথমে থানায় যাইনি। তখনই শীর্ষেন্দুকে পুলিশে ধরিয়ে দিলে স্ত্রী অপমানে আত্মঘাতী হতো না। গোপে প্রচুর টাকার বিনিময়ে শীর্ষেন্দুকে না ধরানোর জন্য আমাকে চাপ দিয়েছিল। শীর্ষেন্দুও সাহস পেয়ে নোংরা কথা বলায় আমার স্ত্রী আত্মহত্যা করেছে। ওদের শাস্তি চাই।” এ দিন শীর্ষেন্দুকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তাঁর এক আত্মীয় জানান, ওই বধূর মৃত্যুর পরেই সে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। যদিও এলাকার কিছু লোকজনের দাবি, শীর্ষেন্দু এলাকাতেই রয়েছে। রাজ্যে সিপিএমের আমলের মতোই এখন শাসক দল তৃণমূলের নেতারাও নানা কারণে সালিশিতে জড়াচ্ছেন। সম্প্রতি আরামবাগের তিরোলে মা-ছেলের বিবাদে নাক গলিয়েছিলেন পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য ঝর্না সিংহ। ধূপগুড়ির সালিশি সভায় বাবাকে জরিমানা করার প্রতিবাদ করেছিল মেয়ে। পরের দিন মেয়ের দেহ মেলে রেললাইনের ধারে। মৃতার ভাসুর বলেন, “থানার পাশেই গোপে দত্ত-র পার্টি অফিস। সেখানে তিনি বহাল তবিয়তে ছিলেন। অথচ পুলিশ কেন ধরছে না?”

জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ খাঁ বলেন, “অভিযোগ করলে তো হবে না। পুলিশ আগে তদন্ত করবে। তারপরে ব্যবস্থা নেবে।” গোপের বিরুদ্ধে আগে দলের কয়েক জনকে মারধর ও ভাঙচুরের অভিযোগ রয়েছে পুলিশের কাছে। এক সিপিএম কর্মীকে খুনের অভিযোগে গোপেকে কয়েক মাস হাজতবাসও করতে হয়। এলাকায় তাঁর বিরুদ্ধ শিবিরের বলে পরিচিত ব্লক তৃণমূল নেতা স্নেহেশ মুখোপাধ্যায় বলেন, “গোপে ধর্ষণের ঘটনার মীমাংসা করতে গিয়েছিলেন বলে শুনেছি। এটা ওঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। দল সালিশিসভা সমর্থন করে না।” বিজেপি-র রাজ্য সহ সভাপতি সুভাষ সরকারের কটাক্ষ, “একের পর এক নারীদের অপমানের ঘটনায় বারবার অভিযুক্ত হচ্ছে তৃণমূল। এটাই ওদের চরিত্র।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

patrasayer subrata dutta rape case
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE