পাঁচ বছর আগে লোকসভা নির্বাচনের দিন সকালে বলরামপুরের বিরামডির বুথে পৌঁছে ভোটকর্মীরা দেখেন, স্কুল চত্বরে একটি লাল পতাকা পোঁতা। যৌথবাহিনী মাটি থেকে পতাকাটি তুলতে গেলে পতাকার তলায় থাকা ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ ঘটে। সেই বিস্ফোরণে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এক জওয়ান জখম হন।
২০০৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের শেষে বান্দায়ানের গঙ্গামান্না-সিরকা গ্রামের রাস্তা ধরে ভোটকর্মীদের গাড়ি পাহারা দিয়ে ফিরছিলেন সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জওয়ানরা। রাস্তায় ল্যান্ডমাইন ফেটে দুই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জওয়ানের মৃত্যু হয়। আহত হন ৬ জন জওয়ান।
রাজ্যে পালাবদলের পরে মাওবাদীদের নাশকতামূলক ঘটনা এই জেলায় বন্ধ হয়ে গেলেও লোকসভা ভোটের আগে ঝুঁকি নিতে চাইছে না জেলাপুলিশ প্রশাসন। বিশেষত বৃহস্পতিবার ঝাড়খণ্ডের দুমকার শিকারিপাড়ায় ভোটের মধ্যে মাওবাদী হামলায় আটজনের মৃত্যুর পরে আরও সতর্ক হয়েছে এই জেলার পুলিশ। পুরুলিয়ায় ৭ মে নির্বাচন। নির্বাচনের দিন ওই দু’টি বড় নাশকতাও এই জেলার ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া এলাকাতেই ঘটেছিল। ফলে এ বার সীমানায় আরও নিরাপত্তা বাড়াচ্ছে প্রশাসন। এই প্রেক্ষিতে ঝাড়খণ্ডের ছ’টি জেলার পুলিশ কর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসছে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। আজ সোমবার পুরুলিয়ায় এই বৈঠক হতে যাচ্ছে।
পুরুলিয়ার গা ঘেঁষে ঝাড়খণ্ড রয়েছে প্রায় ৩৮০ কিলোমিটার জুড়ে। ইতিমধ্যেই চলতি নির্বাচনে ছত্তীসগঢ়, ওড়িশা, বিহার ও ঝাড়খণ্ডে একাধিক মাওবাদী নাশকতা ঘটে গিয়েছে। আপাত দৃষ্টিতে পুরুলিয়া এখন অবধি নিস্তরঙ্গ হলেও ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া এলাকায় ভোটের সময় মাওবাদীরা চোরাগোপ্তা হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কমিশন।
পুরুলিয়ার জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার বলেন, “এই বৈঠকে ধানবাদ, বোকারো, সরাইকেলা-খরসঁওয়া, রাঁচি, রামগড় ও পূর্ব সিংভূম এই ছ’টি জেলাকে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এটি মূলত সমন্বয় রক্ষার বৈঠক। কারণ আমাদের কাছেও মাওবাদীদের গতিবিধি সম্পর্কে কিছু খবর আসছে। তার জন্যেই আমরা এই বৈঠকের আয়োজন করেছি।” জেলা পুলিশ কর্তারা মনে করছেন, নিরাপত্তা আঁটোসাঁটো করতে পার্শ্ববর্তী রাজ্যের পুলিশের অভিজ্ঞতা সহায়তা দেবে।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বান্দোয়ান, বরাবাজার, ঝালদা ও অযোধ্যাপাহাড় এলাকায় সংগঠন গোছাতে নতুন করে যাতায়াত শুরু করেছে মাওবাদীরা। কিন্তু জঙ্গলমহলের গ্রামগুলিতে তাঁদের ভিত্তি তেমন মজবুত না হওয়ায় সাংগঠনিক ভাবে ততটা সক্রিয় নয় মাওবাদীরা। কিন্তু এই তত্ত্বের উপর ভরসা করে বসে থাকতে রাজি নয় কমিশন। ঝালদার সীমানা লাগোয়া পুরুলিয়ার খামার, কর্মাডি ও ডাকাই গ্রামে কয়েকদিন আগে লাল কালিতে ভোট বয়কটের ডাক দেওয়া মাওবাদী নামাঙ্কিত কিছু পোস্টারও পড়ে। তবে ওই পোস্টারগুলি মাওবাদীদের কি না তা নিয়ে পুলিশের মধ্যে সংশয় রয়েছে। পুলিশ সুপার বলেন, “পোস্টারগুলি কারা লাগিয়েছে তা স্পষ্ট নয়। তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আঁটোসাটো করা হয়েছে।”
২০০৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের সময় পুরুলিয়ায় মাওবাদী কার্যকলাপ যখন তুঙ্গে, তখন ভোট নির্বিঘ্নে সারতে ৫৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী পাওয়া গিয়েছিল। জেলা পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, এ বারে ৮৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী আসছে। তার সঙ্গে জেলায় মোতায়েন থাকা ১১ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীও রয়েছে। এই তথ্যেই পরিস্কার এ বারে পুরুলিয়ার ভোটকে নিরাপত্তার দিক থেকে কোন চোখে দেখতে চাইছে কমিশন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy