নদীর ভাঙন রোখার দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। পাগলা নদীর তীরের মুরারই থানার খুটকাইল, উত্তর রামচন্দ্রপুর এবং হরহরিয়া গ্রামের বাসিন্দাদের সেই দাবি মেনে কাজও শুরু করেছিল প্রশাসন। কিন্তু তৃণমূলের স্থানীয় দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বে থমকে গিয়েছে সেই কাজ। ভরা বর্ষায় নদী পাড় ভাঙতে থাকায় গ্রামবাসী বাড়িছাড়া হওয়ার আশঙ্কা করছেন।
মুরারইয়ের উত্তর রামচন্দ্রপুর ও খুটকাইল— এই দুটিকে গ্রামকে পাগলা নদী ব-দ্বীপের মতো ঘিরে রেখেছে। নদীর ভাঙনে এই দু’টি গ্রাম ছাড়া সংলগ্ন হরহরিয়া গ্রামের বেশ কিছু অংশ নদীগর্ভে চলে গিয়েছে। গ্রামবাসী গোবর্ধন রবিদাস ফুরকান শেখদের বাড়ি নদী প্রায় গ্রাস করে ফেলেছে। বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে সম্প্রতি নদীর পাড় বোল্ডার দিয়ে বাঁধানোর সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন।
২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে এ জন্য ৬২ লক্ষ টাকা অনুমোদন করে সেচ দফতরকে কাজটি দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেচ দফতরের নলহাটি বিভাগের সহকারি বাস্তুকার সুকান্ত দাস বলেন, “১০০ দিনের প্রকল্পে কাজটি করা হচ্ছে। প্রথম দিকে কাজের জন্য অনুমোদন ধরা হয়েছিল ৬২ লক্ষ টাকা। পরে শ্রমিকদের মজুরির হার বেড়ে যাওয়ার জন্য এখন কাজের প্রকল্প ব্যয় ধার্য হয়েছে ৭২ লক্ষ টাকা।” তিনি জানান, কাজের জন্য নির্দিষ্ট এজেন্সি মোট কাজের ৩০ শতাংশ বোল্ডার এবং তার ফেলে দেয়। প্রথম দিকে সামান্য পরিমাণ কাজ হওয়ার পরেও শ্রমিকের অভাবে কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে জানান তিনি।
গ্রাম সূত্রে খবর, স্থানীয় তৃণমূল নেতা দশরথ রবিদাস ও জুয়েল শেখের কোন্দলই শ্রমিক না পাওয়ার কারণ। ফরওয়ার্ড ব্লক কর্মী দশরথ রবিদাস এ বছর জানুয়ারি মাসে তৃণমূলে যোগ দেয়। ২০১৩-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে খুটখাইল গ্রাম থেকে তৃণমূল প্রার্থী মজিদা বিবি জয়ী হন। নদী পাড়ের কাজ নিয়েই দশরথ এবং মজিদার স্বামী জুয়েল শেখের মধ্যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়। তা মেটাতে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ হস্তক্ষেপ করলেও কাজ হয়নি।
দশরথ রবিদাসের অভিযোগ, “ভাঙন প্রতিরোধের কাজ হোক সেটা জুয়েল শেখ চায় না। তাই ও শ্রমিকদের পাঠায়নি।” জুয়েল শেখের পাল্টা অভিযোগ, “দশরথ এখন তৃণমূল করছে। ওদের সঙ্গে লড়াই করে তৃণমূলের টিকিটে আমার স্ত্রী জিতেছে। প্রথম থেকেই আমি উন্নয়নের পক্ষে। কিন্তু দশরথ আমার মাধ্যমে শ্রমিক পাঠাতে চায়নি। সরাসরি প্রধানের মাধ্যমে পাঠিয়েছিল। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যাকে গুরুত্ব না দিয়ে দশরথ নিজে কাজের দেখভাল করতে চাইছে। সে জন্যই আমি আমার শ্রমিকদের পাঠাইনি।”
সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন পঞ্চায়েত প্রধানও। আমডোল পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের স্মৃতি কোনাই বলেন, “দশরথ এবং জুয়েল তৃণমূল করলেও দু’জনের বিরোধে শ্রমিক পাওয়া যায়নি। এর ফলে কাজটি থমকে আছে।” মঙ্গলবার এলাকায় গিয়ে নদীপাড়ের বাসিন্দাদের অবস্থার কথা জেনে রাজনীতির ঊর্দ্ধে উঠে দলাদলি ভুলে গিয়ে কাজটি যাতে দ্রুত শেষ করা যায় তার জন্য বিডিও, পঞ্চায়েত প্রধান ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী। তিনি বলেন, “প্রধানকে সকল পঞ্চায়েত সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করতে বলা হয়েছে। কাজ যাতে দ্রুত শেষ করা যায় সে জন্য পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কে বলা হয়েছে। বিডিওকেও কাজের দেখভাল করার জন্য বলা হয়েছে।”
কাজ না হওয়ার ফলে পাগলা নদীর ভাঙনে আমডোল পঞ্চায়েতের উত্তর রামচন্দ্রপুর, খুটখাইল, হরহরিয়া যেমন প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা আছে, তেমনই জাজিগ্রাম পঞ্চায়েতের কুলোড়া, বসন্তপুর, কুরবানপুর, কামালপুরের মতো গ্রাম গুলি প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা আছে বলে জানাচ্ছেন বাসিন্দারা। পঞ্চায়েত প্রধান স্মৃতিদেবী বলেন, “পঞ্চায়েতে আমাদের পক্ষে সে সমস্ত সদস্য আছেন তাদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। সেখানে কাজ না হলে জেলাশাসকের নির্দেশ মেনে গ্রামে মাইকিং করে যে সমস্ত শ্রমিক কাজের জন্য ইচ্ছুক তাদের নিয়ে বাঁধ সংস্কারের কাজ করা হবে।” মুরারই ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সিপিএমের আলি রেজা বলেন, “তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর জন্য কাজ থমকে আছে। এ বারে শ্রমিক নিয়ে সমস্যা দেখা দিলে পঞ্চায়েত সমিতি শ্রমিক জোগান দেবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy