Advertisement
E-Paper

পাত্রসায়রে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বাড়ছেই

স্থানীয় এক সমবায় সমিতির সম্পাদক পদ থেকে ব্লক তৃণমূলের এক নেতার অপসারণকে কেন্দ্র করে শাসকদলের গোষ্ঠী কোন্দল ফের প্রকাশ্যে চলে এল পাত্রসায়রে। বৃহস্পতিবার অনাস্থা এনে পাত্রসায়রের কৃষ্ণবাটি সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক পদ থেকে তৃণমূল নেতা নব পালকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

দেবব্রত দাস

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৪ ০০:৩৭

স্থানীয় এক সমবায় সমিতির সম্পাদক পদ থেকে ব্লক তৃণমূলের এক নেতার অপসারণকে কেন্দ্র করে শাসকদলের গোষ্ঠী কোন্দল ফের প্রকাশ্যে চলে এল পাত্রসায়রে। বৃহস্পতিবার অনাস্থা এনে পাত্রসায়রের কৃষ্ণবাটি সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক পদ থেকে তৃণমূল নেতা নব পালকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনাকে ঘিরে দলের ব্লক সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ব্লকেরই দাপুটে নেতা নব পালের বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে। তাঁকে অনৈতিক ভাবে ওই পদ থেকে সরানো হয়েছে বলে ব্লকের কো-অপারেটিভ ইন্সপেক্টরের কাছে অভিযোগ করেছেন নববাবু।

পাত্রসায়র অঞ্চল এখন কার্যত বিরোধী-শূন্য। পঞ্চায়েত ভোটে বিপুল জয় পেয়েছে তৃণমূল। সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনেও এখানে শাসকদলের বিরুদ্ধে এক তরফা ভোট করানোর অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। এ হেন পাত্রসায়রে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ক্রমেই তীব্র আকার নিচ্ছে। বিশেষ করে স্নেহেশ-গোষ্ঠী ও নব-গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব এখন জেলা তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের কাছে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেই দল সূত্রের খবর।

গত ১৯ মে রাতে মৌকুচি মোড়ের কাছে, পাত্রসায়র-বিষ্ণুপুর রাস্তায় তৃণমূলের ব্লক সভাপতির গোষ্ঠীর নেতা-কর্মীদের উপরে হামলার অভিযোগ নব পালের গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। ওই রাতেই স্নেহেশবাবুর অনুগামীরা বামিরা গ্রামে নববাবুর গোষ্ঠীর পার্টি অফিসে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। তার পরে পরেই কৃষ্ণবাটি সমবায় সমিতির সম্পাদক পদ থেকে নববাবুর অপসারণের ঘটনায় দলেরই একাংশ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেরই ছায়া দেখতে পাচ্ছেন। বস্তুত, এই ঘটনাকে ঘিরে ব্লকের ওই দুই নেতার কাজিয়া সে দিকেই ইঙ্গিত করছে।

বামিরার বাসিন্দা নব পাল গত তিন বছর ধরে সমিতির সম্পাদক। একই সঙ্গে তিনি পাত্রসায়র থানা কো-অপারেটিভ মার্কেটিং সোসাইটির চেয়ারম্যানও। এক সময় স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়ের বিশেষ ‘আস্থাভাজন’ ছিলেন নব পাল। বর্তমানে অবশ্য ব্লক সভাপতির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক যথেষ্ট ‘তিক্ত’। পাত্রসায়র ব্লকের বালসি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতটি নববাবুর গোষ্ঠীর দখলে। বালসি-২ পঞ্চায়েত এলাকা আবার স্নেহেশবাবুর গোষ্ঠীর দখলে। রাজনৈতিক বিন্যাসে এলাকায় স্নেহেশবাবুর গোষ্ঠী যথেষ্ট শক্তিশালী। কৃষ্ণবাটি সমবায় সমিতির সদস্য এই বালসি ১ এবং বালসি ২ পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারাই।

জেলা তৃণমূল সূত্রের খবর, নিজের এলাকাতেই নব পালকে কোণঠাসা করতে এখন কোমর বেঁধে আসরে নেমে পড়েছেন স্নেহেশবাবুর অনুগামীরা। সে জন্যই অনাস্থা অনে কৃষ্ণবাটি সমবায় সমিতির সম্পাদক পদ থেকে নববাবুকে সরিয়ে দিয়ে তাঁকে জোরালো ধাক্কা দিতে চেয়েছেন ব্লক সভাপতির গোষ্ঠী। ওই সমিতির অন্যতম ডিরেক্টর তথা বালসি ২ পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য শেখ মিরাজ বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই সমিতির অফিসে গরহাজির নব পাল। সরকারি ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের জন্য যে ছাড় সমবায় থেকে দেওয়ার কথা, তা এখনও দেওয়া হয়নি। দলের কর্মীদের পাশাপাশি সমিতির ডিরেক্টরদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করেছেন নববাবু। তাই আমরা আগাম নোটিস দিয়ে অনাস্থা এনে বৃহস্পতিবার তাঁকে সম্পাদক পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছি।” ওই সমবায় সমিতির ম্যানেজার প্রদ্যুত্‌কুমার রায় জানান, সমিতির পরিচালকমণ্ডলীর ১২ জনের মধ্যে ১০ জন এ দিন উপস্থিত ছিলেন। তাঁরাই সর্বসম্মতিতে সম্পাদক বদল করেছেন। নতুন সম্পাদক হয়েছেন প্রদীপ সেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সব দফতরে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

পাত্রসায়র ব্লকের কো-অপারেটিভ ইন্সপেক্টর বা সমবায় পরিদর্শক সুকান্ত দে বলেন, “সরকারি নিয়ম মেনে সমবায় সমিতির পরিচালকমণ্ডলী যে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কৃষ্ণবাটি সমবায় সমিতির সম্পাদক বদলের চিঠি এখনও আমি পাইনি। তবে, নব পাল অভিযোগ করেছেন যে তাঁকে ওই সমিতির সম্পাদক পদ থেকে অবৈধ ভাবে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।”

নববাবুর দাবি, রাজনৈতিক চক্রান্ত করে গাজোয়ারি করে তাঁকে সম্পাদক পদ থেকে সরিয়েছেন ব্লক সভাপতির অনুগামীরাই। মঙ্গলবার রাতে সমিতির সভাপতির বাড়ি গিয়ে অনাস্থার নোটিসে সই করানো সত্ত্বেও তাতে আগের তারিখ দেওয়া হয়েছে। এটা নিয়মবিরুদ্ধ। নববাবু বলেন, “ভয় দেখিয়ে সমবায়ের ডিরেক্টরদের অনাস্থায় সই করতে বাধ্য করা হয়েছে।” স্নেহেশবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, “এলাকার মানুষ নব পালের মতো অত্যাচারী নেতাকে চাইছেন না। এই সার সত্যটা নব যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবে, ততই ওর মঙ্গল হবে, এলাকারও মঙ্গল হবে।” তাঁর আরও হুঁশিয়ারি, “কিছু গুন্ডা, তোলাবাজকে নিয়ে রাজনীতি করার মাসুল নবকে এক দিন দিতেই হবে।”

দুই গোষ্ঠীর কাজিয়ার মধ্যেই বুধবার রাতে দেউলি মোড়ে এক তৃণমূল কর্মীর খাটালে ভাঙচুর করা হয়েছে। অভিযোগের তির পাত্রসায়র ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি সুবিমান ঘোষের দিকে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই নেতা। তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা কো-চেয়ারম্যান তথা জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী অবশ্য গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটাতে কড়া বার্তা দিয়ে বলেছেন, “দলের নাম করে যারা এলাকায় বিশৃঙ্খলা করছে, তাদের দলে বেশি দিন ঠাঁই হবে না। দলের নেতৃত্ব কড়া নজর রাখছেন। এলাকায় যারা গণ্ডগোল করছে, পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক।”

clash in tmc debabrata das patrasayar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy