Advertisement
E-Paper

প্রাপ্য টাকা ফিরিয়ে দিচ্ছে ক্রেতা সুরক্ষা আদালত

প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই আবেনকারীরা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করে ন্যায্য বিচার পেয়েছেন। বিচারক আবেদনকারীদের ক্ষতিপূরণ-সহ প্রাপ্য টাকা ফিরিয়ে দিতে নির্দেশও দিয়েছেন। সিউড়ি ক্রেতা সুরক্ষা আদালতেও এ রকম কয়েকটি মামলার কথা জানা গিয়েছে। তার মধ্যে ট্রাকের মামলাটি সাম্প্রতিক।

অরুণ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:৫৯

দৃশ্য ১: ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু স্ত্রীর নামে থাকা বিমার টাকা দিতে রাজি হয়নি একটি সরকারি বিমা কোম্পানি।

দৃশ্য ২: আবার সড়ক দুর্ঘটনায় পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় একটি ট্রাক। ওই ক্ষেত্রেও প্রাপ্য টাকা দেয়নি একটি বিমা কোম্পানি।

প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই আবেনকারীরা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করে ন্যায্য বিচার পেয়েছেন। বিচারক আবেদনকারীদের ক্ষতিপূরণ-সহ প্রাপ্য টাকা ফিরিয়ে দিতে নির্দেশও দিয়েছেন। সিউড়ি ক্রেতা সুরক্ষা আদালতেও এ রকম কয়েকটি মামলার কথা জানা গিয়েছে। তার মধ্যে ট্রাকের মামলাটি সাম্প্রতিক।

ক্রেতার হয়ে মামলা লড়েছে সিউড়ির একটি ক্রেতা সুরক্ষা বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সংস্থার সভাপতি কুমকুম বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ২০১২ সালের ৫ মার্চ মহম্মদবাজারের ট্রাক ব্যবসায়ী সামসুজ্জোহা ইলামবাজার থেকে ট্রাকে ধান ভর্তি করে আনার সময় দুবরাজপুরে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। তাঁর ট্রাকটি মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একটি বিমা কোম্পানির সিউড়ির শাখায় ট্রাকটির বিমা করানো ছিল। সামসুজ্জোহা ক্ষতিপূরণ বাবদ ওই বিমা কোম্পানির কাছে ১ লক্ষ ৬৬ হাজার টাকা দাবি করেন। কিন্তু সংস্থা তাঁকে মাত্র ৭৫ হাজার টাকা দিতে রাজি হয়। এমনকী, সংস্থা তাঁকে প্রয়োজনীয় কোনও নথি দিতেও রাজি হয়নি বলে অভিযোগ। তখন ওই আবেদনকারী বর্ধমান ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা দাখিল করেন। কিন্তু বীরভূমের আওতাধীন যুক্তি দেখিয়ে ওই আদালত তাঁকে বীরভূমের ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলাটি করতে পরামর্শ দেয়। ওই ট্রাক ব্যবসায়ী শেষমেশ সিউড়ি ক্রেতা সুরক্ষা বিষয়ক ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কুমকুমদেবী জানান, আরটিআই করে ওই বিমা সংস্থার কাছ থেকে যাবতীয় নথি সংগ্রহ করা হয়। তারপর সিউড়ি ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। তিনি বলেন, “গত ৪ সেপ্টেম্বর সিউড়ি ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দুই বিচারক আব্দুল কাদের (সভাপতি) এবং রিনা মুখোপাধ্যায় (সদস্য) ওই সংস্থাকে আবেদনকারীকে ১ লক্ষ ৬২ হাজার টাকা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। এবং যে দিন থেকে মামলা চলছে, ৯ শতাংশ সুদের হারে এবং মামলা খরচ বাবদ ৫ হাজার টাকা দেওয়ার নির্দেশও দেন।” বিমা সংস্থার আইনজীবী শিবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন।

একই ভাবে একটি সরকারি জীবনবিমা সংস্থাকে সাঁইথিয়ারই চণ্ডীচরণ সেনকে তাঁর প্রাপ্য টাকা মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সিউড়ি ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। ওই সংস্থার সাঁইথিয়া শাখায় তাঁর স্ত্রীর নামে ১ লক্ষ টাকার বিমা করা ছিল। বিমা করার কয়েক বছর পরে তাঁর স্ত্রী ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। কিন্তু ওই জীবনবিমা কোম্পানি চণ্ডীচরণবাবুকে টাকা দিতে অস্বীকার করেন। তখন একই ভাবে তিনি ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দ্বারস্থ হন। সংস্থার সাহায্যে তিনি সিউড়ি ক্রেতা সুরক্ষা আদলতে মামলা দায়ের করেন। রায়ে বিচারপতি ওই বিমা কোম্পানিকে মোট১ লক্ষ ৪৭ হাজার টাকা দেওয়ার নিদের্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি এ বছরই ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করে একটি বিমা সংস্থার কাছ থেকে টাকা পেয়েছেন সাঁইথিয়ার এক মোবাইল দোকান ব্যবসায়ী। কুমকুমদেবী জানিয়েছেন, বছর দু’য়েক আগে ওই দোকানের সমস্ত মোবাইল চুরি হয়ে যায়। দোকানের মালিক বাবলি দে বিমা সংস্থার কাছে দেড় লক্ষ টাকা দাবি করেন। কিন্তু ওই সংস্থা তাঁকে মাত্র ৫২ হাজার টাকা দিতে রাজি হয়েছিল। তিনি সেই টাকা নিতে অস্বীকার করেন। পরে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে সিউড়ি ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন। ওই মামলার রায়ে বিচারপতি বিমা কোম্পানিকে ক্ষতিপূরণ-সহ ১ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

কুমকুমদেবী বলেন, “অনেকে এখনও জিনিসপত্র কিনে রসিদ নেন না। ফলে ঠকে গেলেও কিছু করার থাকে না। আমাদের পরামর্শ, চিকিত্‌সা থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার ক্ষেত্রে যেন রসিদ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেন। তাহলে প্রাপ্য টাকা পেতে কোনও সমস্যা হবে না।”

consumer forum money return arun mukhopadhay suri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy