Advertisement
০৮ মে ২০২৪
কোথাও দ্বন্দ্ব, কোথাও ক্ষোভ শাসক-শিবিরে

পাল্টা কমিটি গড়ারও প্রস্তাব

দলের নতুন জেলা কমিটি গঠনের আগে বৈঠকে বসলেন পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের দুই নেতা সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কে পি সিংহদেও-রে অনুগামীরা। তাতে হাজির থাকলেন দুই নেতাও। মঙ্গলবার পুরুলিয়া শহরের রাঁচি রোডের একটি ধর্মশালায় হওয়া সেই বৈঠকে উপস্থিত কর্মীরা জেলার ওই দুই শীর্ষ নেতার পাশে থাকার বার্তা দিলেন।

বৈঠকের পরে সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও কে পি সিংহদেও।—নিজস্ব চিত্র।

বৈঠকের পরে সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও কে পি সিংহদেও।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৪ ০০:৪৪
Share: Save:

দলের নতুন জেলা কমিটি গঠনের আগে বৈঠকে বসলেন পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের দুই নেতা সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কে পি সিংহদেও-রে অনুগামীরা। তাতে হাজির থাকলেন দুই নেতাও। মঙ্গলবার পুরুলিয়া শহরের রাঁচি রোডের একটি ধর্মশালায় হওয়া সেই বৈঠকে উপস্থিত কর্মীরা জেলার ওই দুই শীর্ষ নেতার পাশে থাকার বার্তা দিলেন।

সব মিলিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল, জেলা তৃণমূলে কোথাও কি তা হলে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী অর্থাত্‌ জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সুর শোনা যাচ্ছে?

এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি কে পি সিংহদেও বা সুজয়বাবু। বৈঠকের পরে বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা কে পি সিংহদেওয়ের দাবি, “শীঘ্রই দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হবে। মানুষ যে কারণে পরিবর্তন এনেছেন অর্থাত্‌, মানুষের জন্য কাজ করা, সেই লক্ষ্য থেকে কর্মীরা যেন বিরত না হয়, তা দেখতেই কর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলাম।” তৃণমূল সূত্রে অবশ্য অন্য খবরই মিলছে। ওই বৈঠকে হাজির জেলা তৃণমূলের এক পুরনো নেতার স্পষ্ট কথা, “কিছু কর্মী প্রস্তাব দিয়েছেন, জেলা সভাপতি পুরনো মুখদের সম্মান না দিলে দরকারে পাল্টা জেলা কমিটি গড়ে দলনেত্রীর কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হোক। ওই কর্মীরা আরও বলেন, তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল করেন। শান্তিরাম মাহাতোর নয়!”

কেন এই ক্ষোভ?

গত রবিবার কলকাতায় বৈঠকে জেলা কমিটি ভেঙে দিয়েছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নতুন ‘অ্যাডহক’ কমিটিতে জেলা সভাপতি হিসেবে শান্তিরামবাবুর নাম ঘোষণা করা হলেও জেলা চেয়ারম্যান কে পি সিংহদেও বা দলের কাযর্করী সভাপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ঘোষণা করা হয়নি। তা নিয়ে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে জেলার তৃণমূল নেতা-কর্মীর একটা বড় অংশের মধ্যে। মঙ্গলবার শুধু আনন্দবাজারেই সেই খবর প্রকাশিত হয়েছে। আর তার পরেই এ দিনের বৈঠক, যেখানে সুজয়বাবু এবং কে পি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দলের জেলা নেতা গোপাল দাস, বিষ্ণু মেহেতা, জেলা পরিষদের একাধিক কর্মাধ্যক্ষ এবং ব্লক স্তরের একাধিক পরিচিত নেতা। ছিলেন দীর্ঘদিন দলের যুব সংগঠনের দায়িত্ব সামলানো সুদীপ মুখোপাধ্যায়ও।

বস্তুত, গত রবিবারের কলকাতায় অনুষ্ঠিত দলের বৈঠক থেকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে বার্তা দিয়েছেন, তাতে কর্মীদের কাছে একটা ব্যাপার স্পষ্ট, দলের নতুন জেলা কমিটি গঠনে বর্তমান জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোই মোটামুটি শেষ কথা বলবেন। যদিও শান্তিরামবাবুর বক্তব্য, রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষেই কমিটি তৈরি হবে। দলের দীর্ঘদিনের (বিক্ষুব্ধ অংশের কথায় দুর্দিনের) কর্মীরা এই জায়গাতেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাঁদের প্রশ্ন, পুরনো নেতাদের তা হলে কি অন্ধকারে রেখেই কমিটি তৈরি হবে? তা হলে কি সুজয়বাবু বা কে পি-র মতো নেতাদের কি ছেঁটে ফেলা হবে নতুন কমিটি থেকে? বিশেষ করে, এই দু’জনই যেখানে জেলা রাজনীতিতে শান্তিরামবাবুর বিরোধী শিবিরের হিসেবে কর্মীদের কাছে পরিচিত।

এ দিনের বৈঠকে কিছু কর্মী বলেন, “শুভেন্দু অধিকারীকেই এ ভাবে ছেঁটে ফেলা হল! কী বার্তা যাচ্ছে সাধারণ কর্মী বা মানুষের কাছে?” কেউ কেউ বলেন, “পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটে দলের প্রার্থীর জন্য কাজ করেছি নিজের অবস্থান না ভেবেই। কিন্তু, পুরনোদের যোগ্য সম্মান না দিলে আমরা অন্য রকম ভাবতে বাধ্য হব।” বৈঠক থেকে বেরিয়ে গোপাল দাস বলেন, “শুভেন্দু অধিকারীর বিষয়টিকে কর্মীরা দলীয় নেতৃত্বের কাছে পুনর্বিবেচনার জন্য আমাদের বলেছেন। তা ছাড়া পুরনো কর্মীরা যেন যোগ্য সম্মান পান, সেই দাবি তাঁরা করেছেন।”

কে পি সিংহদেও বলেন, “দলনেত্রী যেভাবে সংগঠন চালাবেন, আমরা সেইভাবেই কাজ করব। তিনি রবিবার যে বার্তা দিয়েছেন, তাই কর্মীদের কাছে এ দিনের বৈঠকে জানালাম।” সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কর্মীরা কিছু কথা আমাদের জানিয়েছেন। আমরা তা রাজ্যে নেতৃত্বের কাছে পৌঁছে দেব।” তাঁদের নাম অ্যাডহক কমিটিতে না রাখায় এ দিনের বৈঠক জেলা কমিটি গঠনের আগে জেলা সভাপতি বা তাঁর অনুগামীদের বার্তা দিতেই আয়োজন করা হয়েছে কি না, সে প্রশ্নের জবাবে সুজয়বাবুরর বক্তব্য, “কোন পদই কারও জন্য বাঁধা নয়। দলের জন্য কাজ করাটাই বড় কথা। তা ছাড়া, কর্মীদের নিয়ে বৈঠক দলীয় কাজের মধ্যেই পড়ে।”

তা হলে বৈঠকে জেলা সভাপতি নেই কেন?

সুজয়বাবুর জবাব, “শান্তিরামদা না থাকলে বৈঠক হবে না, এমন কথা কোথায় বলা আছে? তিনি অন্যত্র কাজে রয়েছেন।” শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “এ দিন জেলায় এমন কোনও বৈঠকের কথা আমার অন্তত জানা নেই। তবে, দলীয় কাজের জন্য বৈঠক হতেই পারে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

purulia district tmc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE