Advertisement
১৯ মে ২০২৪

পণ চেয়ে পাত্রের হম্বিতম্বি, বিয়ে ভাঙলেন পাত্রীই

দু’হাতের বাহু অবধি বাহারি মেহেন্দিটা তখনও উজ্জ্বল হয়ে আছে। চোখে মুখে রাতজাগা ক্লান্তির ছাপ। তবুও পাড়াপড়শি, আত্মীয়স্বজন সকলের কাছে সে এখন এক সাহসী কিশোরী। পণের জন্য জোরাজুরি করায় বিয়ের আসরেই হবু বরকে প্রত্যাখ্যান করেছে সদ্য মাধ্যমিক উত্তীর্ণা অলিমা খাতুন।

আলিমা খাতুন। ছবি: অনির্বাণ সেন।

আলিমা খাতুন। ছবি: অনির্বাণ সেন।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
মুরারই শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৪ ০৩:৪৫
Share: Save:

দু’হাতের বাহু অবধি বাহারি মেহেন্দিটা তখনও উজ্জ্বল হয়ে আছে। চোখে মুখে রাতজাগা ক্লান্তির ছাপ। তবুও পাড়াপড়শি, আত্মীয়স্বজন সকলের কাছে সে এখন এক সাহসী কিশোরী। পণের জন্য জোরাজুরি করায় বিয়ের আসরেই হবু বরকে প্রত্যাখ্যান করেছে সদ্য মাধ্যমিক উত্তীর্ণা অলিমা খাতুন।

শনিবার মুরারই থানার ভাদীশ্বর গ্রামের ওই ঘটনায় পুলিশ পাত্র-সহ ছ’জনকে আটক করলেও রাতেই তাঁদের ছেড়ে দেয়। রাত পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের না হলেও নাবালিকা বিয়ে এবং পণ আদায়ের মতো দু’টি গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশ কেন উপযুক্ত ভূমিকা নিল না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের তরফে প্রশাসনকেও কিছু জানানো হয়নি বলে অভিযোগ বিডিও-র। অলিমা জানায়, সে নাবালিকা, বাবা-মায়ের মুখের দিকে চেয়ে বিয়েতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু মুরারইয়ের ওসি মাধব মণ্ডলের দাবি, আলিমা সাবালিকা। তাই এসপি-র নির্দেশে পাত্রপক্ষকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বীরভূমের এসপি অলোক রাজোরিয়া অবশ্য বলছেন, “আমাকে বলা হয়েছিল, মেয়েটি সাবালিকা। তাই ওই নির্দেশ দিয়েছিলাম। মেয়েটি নাবালিকা হলে ওই ঘটনায় কড়া পদক্ষেপ করা হবে।” মুরারই ১ বিডিও আবুল কালাম বলেন, “আমাকে কেউ ঘটনার কথা জানাননি। জানতে পারলে ব্যবস্থা নিতাম। কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেব।” রবিবারই এক তৃণমূল নেতার মধ্যস্থতায় দু’পক্ষ বিষয়টি নিজেদের মধ্যে মিটিয়ে নিয়েছে বলেও খবর।

পুলিশি সূত্রের খবর, শনিবার দুপুরে ভাদীশ্বরের প্রান্তিক চাষি লতিফ শেখের মেয়ে আলিমার সঙ্গে ঝাড়খণ্ডের পাকুড় জেলার লক্ষ্মণপুর গ্রামের যুবক পেশায় রাজমিস্ত্রি পিয়ারুল শেখের বিয়ের দিন ছিল। লতিফের দাবি, পণ বাবদ পাত্রপক্ষ বিয়ের দিনে নগদ ৪৫ হাজার টাকা এবং বিয়ের পরে দু’ভরি সোনার গয়না দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল। শনিবার সকালে ৬০ জন বরযাত্রীকে নিয়ে পাত্রপক্ষ হাজির হয়। পাত্রপক্ষের দুপুরের খাবারের পরে শুরু হয় বিয়ে পড়ানো। আলিমার মা জামনেরা বিবি জানান, পাত্রের বোন পাত্রীর কাছে জানতে চান, দু’ভরি গয়না কোথায়। ৬ আনা দিয়ে তৈরি নতুন কানের দুল আলিমা বিয়ের দিনই পরেছিল। বাকি সোনা কথামতো বিয়ের পরে দেওয়া হবে বলে আলিমা তার হবু ননদকে জানায়। জামনেরা বলেন, “ওই কথা শুনেই পাত্রের বোন দাবি করেন, আমাদের নাকি বিয়ের সময়ই গয়না দেওয়ার কথা ছিল।” এ নিয়ে বচসা শুরু হতেই পাত্র ঘোষণা করেন, সোনা না পেলে বিয়ে করবেন না।

বচসা গড়ায় সন্ধ্যা পর্যন্ত। পাত্রীপক্ষ ‘অপরাধ’ স্বীকার করে পাত্রপক্ষের কার্যত পায়ে পড়লেও সমস্যা মেটেনি। এই টানাহেঁচড়ায় ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে আলিমার। রাগে-দুঃখে-অপমানে দৃঢ় ভাবে সে বাবা-মাকে জানায়, এই বিয়ে আর তার পক্ষে করা সম্ভব নয়। বাড়িতে বসে প্রত্যয়ী কিশোরী বলে, “বিয়ের আগেই যদি ওঁরা আমার পরিবারের সঙ্গে এমন ব্যবহার করেন, তা হলে বিয়ের পরে আমার কী হাল হবে বুঝতে পারছিলাম। ওঁদের প্রতি মনটা বিষিয়ে গিয়েছে।” এর পরেই বাবা-মা-দাদাকে ডেকে সে বিয়ে করবে না বলে জানিয়ে দেয়।

রবিবার সকালে থানাতেই পাত্র পিয়ারুল-সহ ছ’জনকে দেখা গেলেও পুলিশ তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে দেয়নি। থানা চত্বরে পিয়ারুলের মামা আবুল হোসেন দাবি করেন, “বিয়ের সময় গয়না দেওয়ার কথা ছিল। সেটা তো ওরা দিতেই পারল না, উল্টে এখন বিয়ের সব খরচ চাইছে।” সোনা না পেয়েও তাঁরা বিয়ে দিতে রাজি ছিলেন বলে তাঁর দাবি। পাত্রের বন্ধু কাদির শেখের অভিযোগ, পাত্রীপক্ষই বিয়েতে বেঁকে বসে তাঁদের মারধর করে ক্লাবঘরে আটকে রাখে। দুপুরে বাসিন্দাদের একাংশের থেকে খবর আসে, দু’পক্ষ আলোচনায় বসে কিছু টাকার বিনিময়ে মিটমাট করেছে।

মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়েও আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় কোথাও ভর্তি হতে পারেনি অলিমা। কেউ পাশে দাঁড়ালে স্কুলে ভর্তি হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখতে চায় ওই কিশোরী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE