Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ফোনের টাওয়ার দেখে জালে নারীপাচার চক্র

ছেলে-সহ পাচার হয়ে যাওয়া এক বধূকে উদ্ধার করতে নেমে নারী পাচারকারী চক্রকে ধরল বাঁকুড়া পুলিশ। ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছে এক মহিলা-সহ চার জন। পুলিশ জানিয়েছে ধৃতদের মধ্যে সাইদুল আলি মোল্লা, তার স্ত্রী হাফিজা বিবি ও ইউনিস গায়েন দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘি থানার কঙ্কণডিহি এলাকার বাসিন্দা। অন্য ধৃত বিশাল সচদেব উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের ইন্দ্রপুরী এলাকার বাসিন্দা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:২০
Share: Save:

ছেলে-সহ পাচার হয়ে যাওয়া এক বধূকে উদ্ধার করতে নেমে নারী পাচারকারী চক্রকে ধরল বাঁকুড়া পুলিশ। ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছে এক মহিলা-সহ চার জন। পুলিশ জানিয়েছে ধৃতদের মধ্যে সাইদুল আলি মোল্লা, তার স্ত্রী হাফিজা বিবি ও ইউনিস গায়েন দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘি থানার কঙ্কণডিহি এলাকার বাসিন্দা। অন্য ধৃত বিশাল সচদেব উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের ইন্দ্রপুরী এলাকার বাসিন্দা।

গত ৯ জানুয়ারি বাড়ি থেকে ওষুধ কিনতে বেরিয়ে নিখোঁজ হন বাঁকুড়ার জয়পুর থানা এলাকার ওই বধূ। তাঁর সঙ্গে ছিল পাঁচ বছরের ছেলে। ওই দিনই জয়পুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন বধূটির স্বামী। এই ঘটনার দু’দিন পরে ১১ জানুয়ারি ওই বধূর স্বামীর মোবাইলে স্ত্রীর নম্বর থেকে ফোন আসে। ফোনে এক ব্যক্তি স্বামীকে পুলিশের কাছে যেতে নিষেধ করে। তাঁর স্ত্রী দ্রুত বাড়ি ফিরে আসবে বলেও জানায়। ওই বধূও তাঁর স্বামীর সঙ্গে ফোনে কথা বলে দ্রুত ফিরে আসার কথা বলেন। ঘটনাটি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় পুলিশকে জানান ওই বধূর স্বামী। পুলিশ বুঝতে পারে ওই বধূকে অপহরণ করা হয়েছে। এর পরেই ওই বধূর ফোনের কললিস্ট খতিয়ে পুলিশ দেখে, একটি বিশেষ নম্বর থেকে বেশ কয়েক দিন ধরেই ওই বধূকে ফোন করা হচ্ছিল। ওই ফোন নম্বরের ‘টাওয়ার লোকেশন’ দেখে পুলিশ জানতে পারে, কঙ্কণডিহি এলাকা থেকে ফোনটি করা হচ্ছিল। এর পরেই বৃহস্পতিবার জয়পুর থানার ওসি সলিল পালের নেতৃত্বে বাঁকুড়া পুলিশের একটি দল কঙ্কণডিহি যায়। সেখানে ওই নম্বরে ফোন করে হাফিজা বিবির খোঁজ পায় পুলিশ। জেরার মুখে হাফিজা জানিয়ে দেয়, তার স্বামী এবং এলাকার আর এক বাসিন্দা ইউনিস গায়েন জয়পুরের বধূকে বিক্রি করতে গাজিয়াবাদে নিয়ে গেছে। হাফিজাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

শুক্রবারই গাজিয়াবাদ থেকে গ্রামে ফেরে সাইদুল ও ইউনিস। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে বিশাল সচদেবের খোঁজ পায়। গাজিয়াবাদ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইন্দ্রপুরীর বাসিন্দা বিশালের উপরে নজর রাখতে বলে বাঁকুড়া পুলিশ। সোমবার বাঁকুড়া পুলিশের একটি দল সেখানে গিয়ে বিশালকে পাকড়াও করে। তার বাড়ি থেকেই পাচার হয়ে যাওয়া বধূ ও তাঁর ছেলেকে উদ্ধার করা হয়। সাত দিনের ট্রানজিট রিমান্ডে বুধবারই বাঁকুড়ায় আনা হয় ধৃত তিন জনকে। এ দিন নিজের দফতরে একটি সাংবাদিক বৈঠকের আয়োজন করেন বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ওই বধূ, তাঁর স্বামী ও পাঁচ বছরের ছেলে। পুলিশ সুপার বলেন, “তদন্তে জানা গেছে, এই চক্রটি বিভিন্ন নম্বরে ফোন করে মহিলাদের বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে ফুসলিয়ে নিয়ে যেত। তার পর বিক্রি করে দিত। আপাতত চার জনকে আমরা গ্রেফতার করেছি। আরও কেউ এই চক্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” ওই বধূ অবশ্য এ দিন কোনও কথা বলেননি। তবে তাঁর স্বামী বলেন, “বিভিন্ন নম্বর থেকে প্রায়ই আমার স্ত্রীকে ফোন করা হত। এখন বুঝেছি, তারা সব নারী পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

trafficking women bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE