Advertisement
২১ মে ২০২৪

বিকল্প চাষে সরকারি সাহায্য

জঙ্গলমহলের রুক্ষ পাথুরে মাটিতে ধান, সব্জি-সহ বিভিন্ন ফসল ফলাতে যে খরচ হয় তাতে আর্থিকভাবে বিশেষ লাভবান হন না চাষিরা। এই সব ফসল উত্‌পাদন খরচ যেনন বেশি তেমনি লাভও কম। ধান, সব্জি চাষের পাশাপাশি লাক্ষা চাষ করলে আয় বাড়বে। তাই বিকল্প চাষ হিসেবে লাক্ষা চাষ করার জন্য জঙ্গলমহলের মানুষকে পরামর্শ দিলেন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা।

চাষিদের হাতে লাক্ষা বীজ তুলে দিচ্ছেন মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা। —নিজস্ব চিত্র

চাষিদের হাতে লাক্ষা বীজ তুলে দিচ্ছেন মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রানিবাঁধ শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৪০
Share: Save:

জঙ্গলমহলের রুক্ষ পাথুরে মাটিতে ধান, সব্জি-সহ বিভিন্ন ফসল ফলাতে যে খরচ হয় তাতে আর্থিকভাবে বিশেষ লাভবান হন না চাষিরা। এই সব ফসল উত্‌পাদন খরচ যেনন বেশি তেমনি লাভও কম। ধান, সব্জি চাষের পাশাপাশি লাক্ষা চাষ করলে আয় বাড়বে। তাই বিকল্প চাষ হিসেবে লাক্ষা চাষ করার জন্য জঙ্গলমহলের মানুষকে পরামর্শ দিলেন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা। শনিবার বাঁকুড়ার একদা মাওবাদী অধ্যুষিত রানিবাঁধের ঝিলিমিলিতে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এলাকার শতাধিক চাষির হাতে লাক্ষা বীজ তুলে দিয়ে এ কথা বলেন মন্ত্রী।

প্রশাসন সূত্রের খবর, বাঁকুড়ার রানিবাঁধ ও খাতড়া, পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলপাহাড়ি ও পুরুলিয়ার বান্দোয়ান জঙ্গলমহলের এই ৪টি ব্লকে লাক্ষাচাষ বৃদ্ধির লক্ষে একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতর। ওই দিন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের তরফে ঝিলিমিলির দুর্গামন্দির প্রাঙ্গণে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এলাকার চাষিদের হাতে লাক্ষা বীজ তুলে দেওয়া হয়। রানিবাঁধ ও খাতড়া ব্লকের প্রায় ৪০০ জন চাষির হাতে পাঁচ কেজি করে লাক্ষা বীজ দেওয়া হয়। মন্ত্রী বলেন, “ধান, গম, নানা শাক-সব্জি চাষ করার খরচ প্রচুর। ব্যাপক পরিমাণে জল ও সার প্রয়োজন। কিন্তু লাক্ষা চাষ করার খরচ অপেক্ষাকৃত কম। এই চাষ করলে এলাকার চাষিদের উপার্জন বাড়বে।” সুকুমারবাবু জানান, বছরে তিন বার এই চাষ করা যাবে। জঙ্গলমহলের কিছু এলাকায় লাক্ষা চাষ দীর্ঘদিন ধরে হচ্ছে। কিন্তু তা কম। এই চাষে জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ এলাকার চাষিদের সামিল করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে বেলপাহাড়ি, বান্দোয়ান, রানিবাঁধ ও খাতড়া এই চারটি ব্লকে লাক্ষা চাষ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। ওই চারটি ব্লকে সাড়ে তিন হাজার চাষিকে লাক্ষা বীজ দেওয়া হবে।

ওই দিনের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন কৃষি বিজ্ঞানী গঙ্গারাম মুর্মু। গঙ্গারামবাবু বলেন, “বিভিন্ন গাছে লাক্ষা চাষ করা যায়। তবে চাষিদেরকে বলা হয়েছে মূলত কুল, পলাশ ও কুসুম গাছে লাক্ষা বীজ ছড়ানোর জন্য। কী ভাবে লাক্ষা চাষ করা যাবে, উন্নতমানের ও বেশি ফলনের জন্য পরিচর্যা করতে হবে সে ব্যাপারেও হাতে কলমে চাষিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৩০ জন চাষি পিছু একজন করে সুপারভাইজার নিযুক্ত করা হচ্ছে। সুপারভাইজাররা চাষিদের গাছের পরিচর্যা-সহ চাষের নানা কাজে সাহায্য করবেন।” এদিকে, লাক্ষা বীজ পেয়ে খুশি জঙ্গলমহলের বহু চাষি। তাঁদের মধ্যে ঝিলিমিলির মহাদেব হাঁসদা, বৈষ্ণবপুরের রাজীব সোরেন, কষাকেন্দ্রের সর্ব্বেশ্বর মুর্মু বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই আমরা বিচ্ছিন্নভাবে লাক্ষা চাষ করছি। সরকারি ভাবে কোনও সাহায্য সে ভাবে পাইনি। এখন সরকারের তরফে এই চাষ করার জন্য বীজ, প্রশিক্ষণ পাচ্ছি। তবে সরকারিভাবে উত্‌পন্ন লাক্ষা বিক্রির ব্যবস্থা হলে আমরা ভীষণ উপকৃত হব। সরকার এই দিকে নজর দিলে খুশি হব।” মন্ত্রীর আশ্বাস, “জঙ্গলমহলে লাক্ষার প্রসেসিং ইউনিট তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। চাষিরা যাতে ন্যায্য দাম পান সে দিকেও নজর রাখা হবে। সরকারি ভাবে বিপণনের ব্যবস্থা করা হবে।” ওই দিনের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন বাঁকুড়া জেলা পরিষদের-সহ সভাধিপতি বিভাবতী টুডু, জেলা পরিষদ সদস্য চিত্তরঞ্জন মাহাতো-সহ আরও অনেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

alternate farming government aid ranibadh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE