বিক্ষোভে গেট বন্ধ। সার দিয়ে দাঁড়িয়ে কয়লার ট্রাক।—নিজস্ব চিত্র।
জেলা পরিষদের সভাধিপতির উপস্থিতিতে বৈঠকের পরে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে ডিভিসি-র তাপবিদ্যুত্ প্রকল্প নিয়ে তৈরি হওয়া জটিলতা আপাতত কাটার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবারও দিনভর প্রকল্পের মূল গেট আটকে বিক্ষোভ অবস্থান হয়েছে। এর ফলে টানা দু’দিন বন্ধ থাকল প্রকল্পের নির্মাণকাজ।
রঘুনাথপুরে ডিভিসি-র এই প্রকল্পটি তৈরি হচ্ছে আসানসোল লাগোয়া পুরুলিয়ার নিতুড়িয়া ও রঘুনাথপুর ২ ব্লকের সীমানা এলাকায়। নিতুড়িয়ার ভালডুবি গ্রামে প্রকল্পের ছোট একটি গেট সোমবার থেকে ডিভিসি কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকেই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে এলাকায়। সোমবার থেকে গেটটি খুলে দেওয়ার দাবিতে রঘুনাথপুর ২ ব্লকে থাকা প্রকল্পের মূল গেট আটকে বিক্ষোভ-অবস্থান শুরু করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও শ্রমিকদের একাংশ। সোমবার আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। তবে এ দিনের অবস্থানে সামিল হয়েছেন ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার মতো অন্য কিছু দলের কর্মী-সমর্থকেরাও। এ দিন সকাল থেকেই মূল গেটের সামনে বসে পড়েন আন্দোলনকারীরা। ফলে প্রকল্পস্থলে ঢুকতে পারেননি ডিভিসি-র কর্মী বা অন্য ঠিকাদার সংস্থার শ্রমিকেরা। ফলে, প্রকল্পের নির্মাণকাজ পুরোপুরি বন্ধ ছিল বলে ডিভিসি সূত্রের খবর। গেট বন্ধ থাকায় ঢুকতে পারেনি ঝাড়খণ্ড থেকে আসা কয়লা বোঝাই গাড়িও।
সোমবার কাজ না হওয়ার পরেই ডিভিসি কর্তৃপক্ষ সব জানান পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতোকে। কারণ, আগেও এই ভালডুবি গেট বন্ধ করার জেরে আন্দোলন হওয়ায় প্রশাসনিক বৈঠক হয়েছিল সভাধিপতির উপস্থিতিতেই। সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ছোট গেটটি বন্ধ করার আগে স্থানীয় বাসিন্দা ও শ্রমিকদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য পাশে রাস্তা তৈরি করা হবে। ডিভিসি-র অর্থ সাহায্যে রাস্তা করবে জেলা পরিষদ। সেই মতো সোমবার পরিস্থিতির বিষয়ে সভাধিপতিকে ওয়াকিবহাল করনে ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার সকালেই প্রকল্পে-র চিফ ইঞ্জিনিয়ার হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায়-সহ ডিভিসি-র পদস্থ কর্তারা জেলা পরিষদ ভবনে গিয়ে দেখা করেন সৃষ্টিধরবাবুর সঙ্গে। দুপুরের দিকে জেলা পরিষদে ডেকে পাঠানো হয় আন্দোলনকারী তৃণমূল ও ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার স্থানীয় নেতাদের।
দুপুর থেকে দীর্ঘ আলোচনা হয় জেলা পরিষদ ভবনে। সূত্রের খবর, এ দিনের আলোচনায় গেট বন্ধ রাখা যাবে না বলে দাবি তোলেন তৃণমূল-সহ অন্য দলের স্থানীয় নেতারা। অন্য দিকে ডিভিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, প্রকল্পের নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যা এবং সিআইএসএফের কাছ থেকে বিশেষ রিপোর্ট পাওয়ার প্রেক্ষিতেই ওই গেটটি বন্ধ করা হয়েছে। হিরন্ময়বাবু বলেন, “আমরা সভাধিপতিকে পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছি। উনি মনোযোগ দিয়ে আমাদের কথা শুনেছেন। গেট বন্ধ করাকে ঘিরে তৈরি হওয়া জটিলতা কেটে যাবে বলেই আমরা আশাবাদী।”
বৈঠকে ঠিক হয়েছে, ভালডুবি গ্রামের কাছের গেটটি বন্ধ করার পরিবর্তে ভালডুবি ও ঘুটিতোড়া গ্রামের মধ্যের এলাকায় প্রকল্পের মধ্যে যাতায়াতের সুবিধার জন্য অন্য একটি ছোট গেট তৈরি করে দেবে ডিভিসি। আন্দোলনকারীদের অন্যতম, তৃণমূলের স্থানীয় নেতা গুনারাম গোপ বলেন, “ভালডুবি গেট বন্ধ করার পরিবর্তে অন্য একটি ছোট গেট তৈরির দাবি আমরা জানিয়েছিলাম। ডিভিসি কর্তৃপক্ষ তাতে সম্মত হয়েছেন। ওঁরা কথা রাখলেই আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেব।” সভাধিপতির দাবি, “ভালডুবি ও ঘুটিতোড়া গ্রামের মাঝে অন্য একটি ছোট গেট তৈরি করার ব্যাপারে ডিভিসি সম্মত হয়েছে। তাই সমস্যাও মিটেছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy