Advertisement
E-Paper

বিজেপি-ই হারিয়ে দিল, বলছেন বিমর্ষ বাসুদেব

সংসদে আর দেখা যাবে না কালো, ছোটখাটো চেহারার মানুষটাকে। পাক্কা সাড়ে তিন দশক পরে কঠিন সত্যিটার সামনে পড়তেই হল বাসুদেব আচারিয়াকে! জেতাটাকে প্রায় অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছিলেন বাঁকুড়ার এই বাম সাংসদ। এ বার আর হল না।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৪ ০১:৪১
সিপিএমের অফিসে টিভিতে চোখ বাসুদেবের। শুক্রবার অভিজিত্‌ সিংহের তোলা ছবি।

সিপিএমের অফিসে টিভিতে চোখ বাসুদেবের। শুক্রবার অভিজিত্‌ সিংহের তোলা ছবি।

সংসদে আর দেখা যাবে না কালো, ছোটখাটো চেহারার মানুষটাকে। পাক্কা সাড়ে তিন দশক পরে কঠিন সত্যিটার সামনে পড়তেই হল বাসুদেব আচারিয়াকে!

জেতাটাকে প্রায় অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছিলেন বাঁকুড়ার এই বাম সাংসদ। এ বার আর হল না। রাজনীতিতে একেবারে আনকোরা তৃণমূলের তারকা প্রার্থী শ্রীমতি দেববর্মা ওরফে মুনমুন সেনের কাছে ৯৮ হাজারেরও বেশি ভোটে হেরে গেলেন বাসুদেববাবু। ফল ঘোষণার আগে বলেছিলেন ‘এ বার কঠিন লড়াই’। আর ফল জানার পরে বিদায়ী থেকে প্রাক্তন সাংসদ হয়ে যাওয়া বর্ষীয়ান এই সিপিএম নেতার স্পষ্ট স্বীকারোক্তি, “মানুষের মন বুঝতে ভুল হয়েছিল!”

কথাটা বলছেন বাঁকুড়ার টানা ৯ বারের সাংসদ! প্রথমে ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিল না। এমনিতেই আবেগ বা কষ্টের অভিব্যক্তির প্রকাশ বাসুবাবুর মুখে থাকে না। এ দিনও নিরুত্তাপ গলাতেই বলে চললেন, “আমরা কিন্তু চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখিনি। ফলাফল অন্য রকম হবে, তার কোনও আগাম বার্তাও পাইনি প্রচারে গিয়ে। আসলে মানুষের নাড়ি (পাল্‌স) ঠিক ভাবে বুঝতে পারিনি!”

চেষ্টার খামতি অবশ্য সত্যিই রাখেননি বাসুবাবু। এই বয়সেও চড়া রোদ মাথায় নিয়ে বাঁকুড়ায় ঘাঁটি গেড়ে টানা দেড় মাস চষে ফেলেছিলেন ছ’টি বিধানসভা এলাকা। জেতার বিষয়ে এতটাই নিশ্চিত ছিলেন যে, ফল ঘোষণার দু’দিন আগেও হারার প্রশ্ন তুললে জবাব দিয়েছিলেন, “কাল্পনিক প্রশ্নের উত্তর হয় না।” অথচ এত দ্রুত যে এমন রূঢ় বাস্তবের মুখোমুখি হতে হবে তাঁকে, তা সত্যিই ভাবতে পারেননি বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের সঙ্গে সমার্থক হয়ে যাওয়া বাসুদেব আচারিয়া।

বৃহস্পতিবার রাতেই বাঁকুড়ায় দলীয় কার্যালয়ে চলে এসেছিলেন এই বাম প্রার্থী। সকালে স্নানের পরে রুটি,সব্জি দিয়ে প্রাতরাশ সেরে সাদা হাফ শার্ট ও কালো ট্রাউজার্স পরে কার্যালয়ের দোতলায় টিভির সামনে বসে পড়েছিলেন। পাশেই ছিলেন সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্র, পুরুলিয়ার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রদীপ রায়। টিভির পর্দায় চোখ রেখেই কাটিয়েছেন বাসুদেববাবু। একবারের জন্যও গণনা কেন্দ্রে যাননি। প্রথম রাউন্ডের ফল ঘোষণার পরে তৃণমূল প্রার্থীর চেয়ে সামান্য ভোটে এগিয়ে ছিলেন বাসুদেবাবু। দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় তখনই বুঝে গিয়েছিলেন, গতবারের প্রায় দেড় লক্ষ ভোটে জয়ের ব্যবধান ধরে রাখা দূর অস্ত, আসন হাতছাড়া হতে পারে। বেলা যত গড়িয়েছে, বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল বাসুদেববাবুর কাছে।

গণনা কেন্দ্র থেকে রাউন্ড ভিত্তিক ফল এসেছে দলীয় কার্যালয়ে। চলেছে কাঁটাছেড়া। বিপর্যয়ের কারণ কী? সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বাসুবাবু বললেন, “বিজেপি ফ্যাক্টর হয়েছে।” অথচ, সিপিএমের হিসাব ছিল, বিজেপি তৃণমূলের ভোট কাটবে। তাতে তাদের ফায়দা হবে। বাস্তবে যে উল্টোটাই হয়েছে, দিনের শেষে মেনেছেন বাসুদেববাবু। তাঁর কথায়, “আমাদের সাংগঠনিক রিপোর্ট ছিল বিজেপি যে পরিমাণ ভোট কাটবে, তার মধ্যে বেশির ভাগটাই তৃণমূলের। সামান্য ভোট হারাবো আমরা। কিন্তু, বাস্তবে আমাদেরই ভোট বেশি কেটেছে বিজেপি। তার সাথে যোগ হয়েছে দেশ জুড়ে মোদী-হাওয়া এবং বাঁকুড়ায় এসে নরেন্দ্র মোদীর প্রচার।”

বাঁকুড়াতে বিজেপি যে সত্যিই ‘ফ্যাক্টর’ হয়েছে, তা স্পষ্ট বাসুদেববাবুর খাসতালুক রঘুনাথপুর বিধানসভার ফল থেকেই। এখানে ছয় হাজারের বেশি ভোটে তৃণমূল প্রার্থীর চেয়ে পিছিয়ে পড়েছেন তিনি। আর নিতুড়িয়া, রঘুনাথপুরের মতো এলাকায় বাসুদেববাবু পিছিয়ে ছিলেন বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকারের চেয়ে। অথচ বাসুদেববাবু আগে দাবি করেছিলেন, রঘুনাথপুরে পাঁচ হাজারের বেশি ভোটের ‘লিড’ পাবেন তিনি। বস্তুত, বাঁকুড়া কেন্দ্রে সুভাষবাবু পেয়েছেন আড়াই লক্ষেরও বেশি ভোট। এবং এই ভোটের সবচেয়ে বড় অংশ সিপিএমের ঝুলি থেকেই বিজেপি-র দিকে গিয়েছে। রঘুনাথপুরের তৃণমূল বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরির অবশ্য দাবি, “সাংসদ হিসাবে উন্নয়ন করতে ব্যর্থ হয়েছেন বাসুদেববাবু। তাই মানুষ তাঁকে প্রত্যাখান করেছে।” পরাজিত বাম প্রার্থীর মন্তব্য, “পঞ্চায়েত ভোটে আমাদের পাওয়া প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট এ বার কমে ৩০ শতাংশের কাছাকাছি দাঁড়াবে।”

সংসদকে ‘মিস’ করবেন না?

উত্তর দিতে কিছুটা সময় নিলেন লোকভায় সিপিএমের সদ্য প্রাক্তন দলনেতা। টিভির পর্দায় চোখ রেখেই বললেন, “মানুষের রায় মেনে নেওয়ার শিক্ষা, ক্ষমতা আমাদের রয়েছে।” ভাত, রুটি, ডাল, সব্জি. টক দই ও স্যালাড সহকারে মধ্যাহ্নভোজন সেরে বিশ্রামে নিতে চলে গেলেন বাসুদেববাবু।

সংসদ থেকে বিশ্রাম। রাজনীতি থেকেও কি? প্রশ্নটা করার সুযোগ মিলল না। বিশ্রামে গিয়েছেন বাসুদেব আচারিয়া।

bjp basudeb acharya subhaprakash mondal bankura
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy