Advertisement
E-Paper

বারবার এসপি বদল, ক্ষোভ নীচু মহলে

বড় সাহেব (পুলিশ সুপার) বদলি হওয়ার আগে নীচু তলার পুলিশ কর্তারা তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত্‌ করবেন এটাই দস্তুর। জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়াকে বদলি করা হচ্ছে এই কথা জানাজানি হতেই তেমনই সৌজন্য সাক্ষাতের পর্ব চলছে। তবে সেই সাক্ষাত্‌ প্রার্থীদের তালিকায় থাকা কয়েকজন পুলিশ আধিকারিক আবার এমন ইচ্ছে নিয়ে দেখা করলেন, যাওয়ার আগে যদি বড় সাহেব তাঁর বা তাঁদের একটা অনুরোধ রেখে যান শেষ পর্যন্ত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৪৩

বড় সাহেব (পুলিশ সুপার) বদলি হওয়ার আগে নীচু তলার পুলিশ কর্তারা তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত্‌ করবেন এটাই দস্তুর। জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়াকে বদলি করা হচ্ছে এই কথা জানাজানি হতেই তেমনই সৌজন্য সাক্ষাতের পর্ব চলছে। তবে সেই সাক্ষাত্‌ প্রার্থীদের তালিকায় থাকা কয়েকজন পুলিশ আধিকারিক আবার এমন ইচ্ছে নিয়ে দেখা করলেন, যাওয়ার আগে যদি বড় সাহেব তাঁর বা তাঁদের একটা অনুরোধ রেখে যান শেষ পর্যন্ত। বলা তো যায় না পরের বড় সাহেব কী পদক্ষেপ নেন! তখন আবার ঝামেলা বাড়বে। দীর্ঘদিন একই থানায় পড়ে থাকা জেলার এক ওসি’র কথায়, “বড় সাহেবকে বলতে চেয়েছিলাম স্যার যাওয়ার আগে আমাকে অন্তত ওই থানা থেকে অন্যত্র সরিয়ে দিয়ে যান।” যদিও এই ওসির সেই ইচ্ছে পূরণ হয়নি বলেই জানা গিয়েছে। আসলে নতুন পুলিশ সুপারের সঙ্গে পারস্পরিক টিউনিং বা অ্যাডজাস্টমেন্ট তৈরি হতেই তো সময় লাগে জেলা পুলিশ মহলের। চিন্তা সেখানেই।

তিনি বদমেজাজি, কটূভাষী না ঠান্ডা স্বভাবের? ঠিক কী ধরনের অপরাধ দমনে তিনি জোর দিতে চাইছেন? না কি তিনি পুলিশের ভিন্ন ভাবমূর্তি দেখিয়ে মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরিতে বিশ্বাসী? একজন পুলিশ সুপার কোনও জেলার দায়িত্বে এলে জেলার পুলিশ মহলে এমন নানা আলোচনা চলে। আস্তে আস্তে সেই পুলিশ সুপার সম্পর্কে ধারণা তৈরি হয় পারস্পরিক যোগাযোগ বা সমন্বয়। কিন্তু গত কয়েক বছরে পুলিশ সুপার বদলের যা হিড়িক তাতে ঠিক কোন পথে এগোবে জেলার ‘পুলিশিং’— তাই নিয়েই জোর আলোচনা চলছে পুলিশ মহলে। কারণ, এক বছর যেতে না যেতেই অলোক রাজোরিয়াকে বদলি করে আনা হচ্ছে বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারকে। সোমবারই তিনি এই জেলার দায়িত্ব নেবেন। মাত্র পাঁচ মাস দায়িত্বে থাকতে না থাকতেই জেলা পুলিশ সুপার সি সুধাকরকে বদলে রাজেরিয়াকে নিয়ে আসা হয়েছিল। যে কোনও পুলিশ কর্মী তিনি এসপি বা ওসি যেই হোক না কেন, ওই এলাকায় তাঁদের ২ বছরের জন্য দায়িত্ব করা হয়। এটাই সাধারণ নিয়ম। কিন্তু বীরভূম জেলার ক্ষেত্রে তার ঠিক উল্টো চিত্র। এত ঘনঘন এসপি বদল হলে একাধারে যেমন কাজের ছন্দ নষ্ট হয়, অপরাধ নির্ধারণ ও দমন ক্ষতিগ্রস্ত হয় সোজা কাথায় এর সরাসারি প্রভাব পড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়, এমনটাই মনে করছে জেলা পুলিশ মহল।

দেখা গিয়েছে, লোবা-কাণ্ডের পরেই যে কোনও অভিযানের ক্ষেত্রে পুলিশ কিছুটা গুটিয়ে গিয়েছিল। সেই ধারা অব্যাহত ছিল এবং দুবরাজপুরের টাউনবাবু অমিত চক্রবর্তী উপরে হামলা, থানা ভাঙচুর— এই সব ঘটনায় বার বার পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মাখড়া-কাণ্ডের পরে সেই জায়গা থেকে পুলিশ কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছিল বলে দাবি পুলিশকর্মীদের। অভিযুক্তদের ধরার ক্ষেত্রে শাসকদলের লোকেদের রেয়াত দেওয়া হয়নি। সেটাই হয়তো ফের ধাক্কা খেল। কারণ, জেলার পুলিশ কর্মীদের কথায়, নতুন কেউ এলে তিনি ঠিক কেমন ধরনের মানুষ বুঝতে না বুঝতেই তো ছ’মাস কেটে যায়। উল্টো দিকে একজন নতুন এসপি’র সময় লাগে জেলার ভৌগলিক পরিচয় জানতে, রাজনৈতিক সমীকরণ ও জেলা পুলিশের দক্ষ এবং কাজের অফিসার কারা সেগুলি বুঝতেই। বিশেষ করে সেই জেলা যদি বর্তমানের বীরভূম জেলা হয়! জেলা পুলিশ মহলে এমনও আলোচনা চলছে, এক একজন ওসি এক থানায় থাকতে থাকতেই বদল হয়ে গেলেন পাঁচ জন পুলিশ সুপার।

সুধাকরের আগে মুরলীধর শর্মা এক বছরও ছিলেন না জেলার পুলিশ সুপারের দায়িত্বে। লোবা-কাণ্ডের জেরে সারানো হয়েছিল পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনাকে। তাঁর আগে জেলার দায়িত্বে থাকা নিশাদ পারভেজ ও রবীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়দের কার্যকালের মেয়াদ ছিল ১১ মাস করে। যতই বলা হোক এটা রুটিন বদলি আদতে সেটা যে নয় তা সবাই বুঝেছেন মত, জেলাপুলিশ কর্তাদের অনেকেরই। তাঁদের দাবি, “বদলি হওয়ার মতো এমন কোনও কাজও এসপি করেননি। আসলে সরকারকে খুশি করার মতো কাজ না করতে পারলেই যে আর উপায় থাকে না!”

suri sp grievance
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy