বিশ্বভারতী ছাড়লেন কলাভবনের নির্যাতিতা ছাত্রী। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
বিশ্বভারতীতে তাঁর পড়াশোনায় শেষ পর্যন্ত ইতি টেনে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল কলাভবন-কাণ্ডে নির্যাতিত ছাত্রী।
শুক্রবার বিশ্বভারতীর উপাচার্যের কার্যালয় থেকে ছাত্রকল্যাণ আধিকারিকের দফতর--সর্বত্রই লিখিত ভাবে এ কথা জানিয়ে দিলেন কলাভবনের প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রী। দুপুরে ছাত্রী নিবাস থেকে নিজের জিনিসপত্র নিয়ে ফিরে যাওয়ার আগে বন্ধুদের জড়িয়ে ধরে তাঁর আক্ষেপ ছিল, “অনেক স্বপ্ন নিয়ে শান্তিনিকেতনে পড়তে এসেছিলাম। সেই স্বপ্নটাই ভেঙে গেল। আর পড়ার ইচ্ছে নেই।”
এ দিন রাতে, ওই ছাত্রীর বাবা অবশ্য দাবি করেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর তরফ থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে সবরকম ‘সাহায্যের’ আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “সন্ধ্যায়, প্রথমে স্বরাষ্ট্র দফতর থেকে আমাকে ফোন করে জানতে চাওয়া হয়েছিল কেন আমরা মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে দেখা করতে চাই। পরে মুখ্যমন্ত্রীর তরফ থেকেই ফোন করে আগামী সপ্তাহে সাক্ষাতের সময় দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।” আজ, সিকিম ফিরে গেলেও আগামী সপ্তাহে তাঁরা ফের আসবেন বলেও জানান তিনি।
বিশ্বভারতীর তরফে ওই ছাত্রীর শান্তিনিকেতন-ত্যাগ নিয়ে অবশ্য এ দিনও মুখ খোলেননি কেউ। তবে ওই ছাত্রীর সহপাঠীদের অনেককেই বলতে শোনা গিয়েছে, ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার ব্যাপারে যতটা ‘তৎপর’ ছিলেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ, তাঁর পাশে দঁড়িয়ে ভরসা জোগানোর প্রশ্নে ততটাই ‘নির্বিকার’ ছিলেন আধিকারিকেরা। ছাত্রীটিকে আটকাতে বিশ্বভারতী কোনও উদ্যোগ নিল না কেন? জবাব দেননি ছাত্র পরিচালক হরিশচন্দ্র মিশ্র। বহু বার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি কলাভবনের অধ্যক্ষ শিশির সাহানার সঙ্গে। তবে, রাতে তিনি মোবাইলে এসএমএস করে জানান--“আমরা খুবই দুঃখিত।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েক দিনের মতো এ দিনও ওই ছাত্রীর সহপাঠীদের সঙ্গে শিশিরবাবুকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ অবশ্য এ ব্যাপারেও মুখে কুলুপ এঁটে ছিলেন।
বিশ্বভারতী ছেড়ে দিলেও এ দিন অবশ্য শান্তিনিকেতন ছেড়ে যাননি ওই ছাত্রী। শ্যামবাটিতে রাজ্য সরকারের একটি অতিথিশালায় আপাতত বাবা-মায়ের সঙ্গেই রয়েছেন তিনি। এ দিন সকাল থেকেই বিশ্বভারতী ছাড়ার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র নিতে ভিন্ রাজ্যের ওই ছাত্রী বিশ্বভারতীর বিভিন্ন দফতরে যান। সকালে বোলপুরে মহকুমা পুলিশ অফিসারের দফতর থেকে ছাত্র পরিচালকের দফতরে যান তিনি। সেখানে বিশ্বভারতী ছাড়ার লিখিত আবেদন জমা দিয়ে তার প্রতিলিপি জমা দেন ছাত্রকল্যাণ আধিকারিককে। চিঠি দেন কলাভবনের অধ্যক্ষকেও। শেষে, উপাচার্যের দফতরে গিয়ে ওই চিঠি জমা দিয়ে ফিরে যান। এ দিন ছাত্রী নিবাস ছেড়ে যাওয়ার আগে ওই ছাত্রীর মায়ের আক্ষেপ, “খুব খারাপ অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে যাচ্ছি। তবে বিশ্বভারতীর সবাই খারাপ নন। কিছু মানুষের জন্যই রবীন্দ্রনাথের হাতে গড়া এই শিক্ষায়তনে কালি লাগছে।”
এ দিনই বোলপুর আদালত অভিযুক্ত তিন ছাত্রের জামিনের আবেদন ফের নাকচ করে দিয়েছে। সরকারি আইনজীবী ফিরোজকুমার পাল জানান, এসিজেএম সঙ্ঘমিত্রা পোদ্দার ধৃতদের ফের জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর তিন ছাত্রকে আবার আদালতে হাজির করানো হবে বলে জানা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy