Advertisement
০২ মে ২০২৪

মুনমুন নয়, রিয়া-রাইমাকেই চেনে হিড়বাঁধ

মুনমুন সেন? উ কেট্যা? হিড়বাঁধের আদিবাসী গৃহবধূ লক্ষ্মী মান্ডি, দুর্গা সোরেন না চেনেন ফিল্মস্টার মুনমুনকে, না চেনেন তৃণমূল প্রার্থী শ্রীমতী দেববর্মাকে। দু’জনেই ঘাড় নেড়ে বললেন, “নামটা তো আগে কখনও শুনিনি বাপু।” আর বাসুদেব আচারিয়া? “বাড়ায়াম উনি অকয় (জানেন উনি কে)?”

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
হিড়বাঁধ শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৪ ০২:০৬
Share: Save:

মুনমুন সেন? উ কেট্যা?

হিড়বাঁধের আদিবাসী গৃহবধূ লক্ষ্মী মান্ডি, দুর্গা সোরেন না চেনেন ফিল্মস্টার মুনমুনকে, না চেনেন তৃণমূল প্রার্থী শ্রীমতী দেববর্মাকে। দু’জনেই ঘাড় নেড়ে বললেন, “নামটা তো আগে কখনও শুনিনি বাপু।”

আর বাসুদেব আচারিয়া? “বাড়ায়াম উনি অকয় (জানেন উনি কে)?” বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের ন’বারের সাংসদ, বছর বাহাত্তরের বাসুদেব আচারিয়াকে দেখিয়ে প্রশ্নটা করলেন সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্র। এ বারেও মাথা দোলালেন লক্ষ্মী আর দুর্গা। কিন্তু অমিয়বাবুর মুখে নামটা শোনার পরেই মুখের ভাব বদলে গেল তাঁদের। মিছিলের সামনে-থাকা দীর্ঘদেহী বামপ্রার্থী নমস্কার করতে মুখে কাপড় দিয়ে হেসে ফেললেন দু’জনে। বোঝা গেল, মুখ না চিনলেও নাম জানেন।

ঘটনাস্থল দক্ষিণ বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম হিড়বাঁধ। চৈত্রের পড়ন্ত বিকেলে প্রচারে এসেছেন সিপিএমের পোড়-খাওয়া সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া। বাঁকুড়ায় হিড়বাঁধ বামেদের সান্ত্বনা, সবুজের সমুদ্রে লাল দ্বীপ। গত পঞ্চায়েত ভোটে জেলা জুড়ে ভরাডুবি হয়েছে সিপিএমের, ২২টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে দখলে আছে শুধু হিড়বাঁধ। ব্লকের পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত এখনও বামেদের। জেলা পরিষদের আসনটিও বামেদের।

হিড়বাঁধ তাই তৈরি ছিল প্রবীণ বাম নেতার অভ্যর্থনায়। বাসুদেববাবু আসতেই বেজে উঠল ধামসা-মাদল। শ’য়ে শ’য়ে আদিবাসী পরিবার মিছিলে হাঁটার জন্য তৈরি। শিশু কোলে নিয়েই মিছিলে হাঁটলেন মহিলারা। হিড়বাঁধ ব্লকের প্রায় ৩০% পরিবার আদিবাসী। অধিকাংশের পেশা দিনমজুরি।

ব্লকের নেতাদের দাবি, প্রায় প্রতি মাসেই বাসুদেববাবু আসেন। সিপিএম সমর্থক সুকুমার মান্ডি, বিভীষণ হাঁসদার মতো অনেকে অবশ্য মনে করতে পারলেন না, শেষ কবে তাঁকে দেখেছেন। ন’বারের সাংসদকে মিছিলে হাঁটতে দেখে সবাই বলাবলি করছিলেন, “একটু রোগা হয়ে গিয়েছেন।” আর এক সিপিএম সমর্থক জিতেন মল্ল বললেন, “বয়স হলেও, অতটা বোঝা যাচ্ছে না।”

জোনাল অফিস থেকে কয়েকশো মিটার দূরে আদিবাসী পাড়ায় গিয়ে থামল মিছিল। সেখানেই নির্বাচনী বৈঠক। বাসুদেববাবু ১০০ দিনের কাজের বকেয়া মজুরি, নারী নির্যাতন, সারের দাম বৃদ্ধি-- একের পর এক বিষয় নিয়ে রাজ্য সরকারকে তুলোধোনা করলেন। মাটির বাড়ির উঠোনে, গাছের তলায় দাঁড়িয়ে সবাই তাঁর কথা শুনল। এরই মাঝে কখনও বাঁধন খুলে ঘর থেকে গরু দৌড় মারল মাঠের দিকে। ঘরের কর্তা ছুটলেন গরুর পিছনে। কখনও মুরগিদের চিৎকার, ঝটাপটি। উঠোনে বসে বাসুদেববাবুর কথা শুনতে শুনতে কৈলাশ মল্ল ফিসফিস করলেন, “কত দিন পর দেখলাম।” গুরুপদ মান্ডির জবাব, “উয়ারা তো থাকে দিল্লিতে। ইখানে উয়াদের কাজ লাই।” হয়তো সেই জন্যই কোনও দাবি-দাওয়া নিয়ে বাসুদেববাবুর সামনে দাঁড়ালেন না কেউ। প্রায় আড়াই ঘন্টার প্রচারে চা পর্ব ছিল না। তবে এক পার্টি কর্মী নিজের গাছের একটি শশা দিলেন বাসুদেববাবুকে। “উনি তো তেমন কিছু খান না, তাই দিলাম।”

তবু জঙ্গলমহল এ বার খালি হাতে ফেরাবে কি না বাম প্রার্থীকে, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। জঙ্গলমহলে সন্ত্রাস কমেছে, উন্নয়ন হচ্ছে, তাই মানুষের সমর্থন পাবেন মুনমুন ওরফে শ্রীমতী, দাবি তৃণমূলের। বাসুদেববাবুও বলেন, “লড়াই এ বার কঠিন। বিধানসভা এবং পঞ্চায়েতের ফলে আমরা পিছিয়ে।” তবু জঙ্গলমহলে প্রচারে মানুষের উৎসাহ দেখে তাঁর আশা, মানুষ ভোট দিতে পারলে তিনিই জিতবেন। দশম বার যাবেন সংসদে।

তবে হাওয়া কোনদিকে ঘোরে, বোঝা শক্ত। গ্রামের মেয়েরা মুনমুনের নাম না-শুনলেও, স্থানীয় যুবক উত্তম মহন্ত, আশিস পাত্ররা জানেন, মুনমুন সেন সিনেমা করেন। তবে তাঁর কোনও ছবি দেখা নেই। রিয়া সেনের ‘স্টাইল’ নামের হিন্দি ছবিটা বার কয়েক টিভিতে দেখেছেন। টিভিতে ইন্টারভিউ দেখেছেন রাইমার। ভোট প্রচারে যদি রিয়া-রাইমা আসে? “উয়ারা যদি প্রচারে আসে, নিশ্চয় যাব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE