Advertisement
E-Paper

মায়ের মেয়ে হিসেবেই প্রচার শুরু মুনমুনের

দুপুর থেকেই কেন্দুয়াডিহির পিচরাস্তার ধারে মেয়ে-বউদের জটলাটা ঠায় দাঁড়িয়েছিল। যাঁকে দেখার জন্য অপেক্ষা, তাঁর গাড়ি এল বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ। হুশ করে কিছুটা দূর চলে গিয়েই ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষল। ওঁরা এক ছুটে গাড়ির সামনে। মাঝের জানলার কাচটা নেমে এল। ভিতরের মানুষটিকে একটু ছোঁয়ার জন্য তখন রীতিমতো হুটোপুটি চলছে মহিলাদের মধ্যে। গাড়ির ভিতর থেকেই মাখনের মতো নরম আর ফর্সা হাত তাঁদের স্পর্শ গ্রহণ করল।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৪ ০৩:২৪
মুনমুনকে বরণ। বাঁকুড়া স্টেডিয়ামে তৃণমূলের কর্মিসভায় সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।

মুনমুনকে বরণ। বাঁকুড়া স্টেডিয়ামে তৃণমূলের কর্মিসভায় সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।

দুপুর থেকেই কেন্দুয়াডিহির পিচরাস্তার ধারে মেয়ে-বউদের জটলাটা ঠায় দাঁড়িয়েছিল। যাঁকে দেখার জন্য অপেক্ষা, তাঁর গাড়ি এল বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ।

হুশ করে কিছুটা দূর চলে গিয়েই ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষল। ওঁরা এক ছুটে গাড়ির সামনে। মাঝের জানলার কাচটা নেমে এল। ভিতরের মানুষটিকে একটু ছোঁয়ার জন্য তখন রীতিমতো হুটোপুটি চলছে মহিলাদের মধ্যে। গাড়ির ভিতর থেকেই মাখনের মতো নরম আর ফর্সা হাত তাঁদের স্পর্শ গ্রহণ করল।

গাড়িটা বেরিয়ে যাওয়ার পরে আল্পনা মণ্ডল, নীলিমা মাঝিরা আপ্লুত স্বরে বললেন, “আমরা সুচিত্রা সেনের মেয়ের সঙ্গে হাত মেলালাম! স্বপ্নের মতো লাগছে।”

সুচিত্রা সেনের মেয়ে এই ভাবেই রবিবার নিজের পরিচয় দিয়েছেন শ্রীমতী দেববর্মা ওরফে মুনমুন সেন নিজেও। বাঁকুড়া কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী হিসাবে তাঁর নাম ঘোষণার পরে এ দিনই জেলায় পা রাখলেন তিনি। এক দিকে যেমন তারকা ইমেজ ভেঙে বেরোনোর চেষ্টা করলেন, তেমনই মায়ের মেয়ে হিসেবে সুচিত্রার তারকা-ছটাকে ঘিরে আম বাঙালির আবেগ উস্কেও দিলেন। ভিড়ে ঠাসা বাঁকুড়া স্টেডিয়ামের কর্মিসভায় বক্তৃতা দিতে উঠে মুনমুন প্রথমেই বললেন, “সুচিত্রা সেন আমার মা। বাঁকুড়ায় আমার দাঁড়ানো মানে আমার মায়েরই দাঁড়ানো! তাঁর আশীর্বাদ সব সময় সঙ্গে রয়েছে।”

রাজনীতিতে কেন এলেন?

তার মূলেও মায়েরই ‘মমতা’! “আমার মা যখন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, এক মহিলা আমার কাছে এসে বলেছিলেন, ‘আমি ওঁকে (সুচিত্রা) একদমই ডিস্টার্ব করব না। আমি শুধু বলতে এসেছি, উনি বাংলার শিরায় আছেন।’ ওই মহিলা কে জানেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!”

মুনমুন স্বীকার করেছেন, মায়ের অসুস্থতার ওই সময় থেকেই ‘মমতাদির প্রতি আমার বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়েছে’। তাই মমতার কথায় তিনি ভোটে লড়তে এসেছেন। মুনমুন জানিয়েছেন, তৃণমূল নেত্রী তাঁকে বেশ কিছু কেন্দ্রের নাম দিয়ে জানতে চেয়েছিলেন, কোথায় দাঁড়াতে চান। তিনি বেছে নিয়েছেন বাঁকুড়াকেই! কেন? সেখানেও ‘মা’! “মা বলতেন, শিক্ষার মধ্যে দিয়েই একে অপরকে বোঝা যায়। বাঁকুড়ার অধিকাংশ মেয়ে শিক্ষিত, এটা ভাবতেই গর্ব হয়।” তা ছাড়া মুনমুনের কথায়, “বাঁকুড়ায় অনেক আদিবাসী আছেন। দেখে মনে হচ্ছে, তাঁদের সঙ্গে আমার অনেক দিনের পরিচয়। আমি তাঁদের উন্নয়নের কাজ করতে চাই।” হাততালির বহর বুঝিয়ে দিল, বাঁকুড়া খুশি!

মুনমুন কবে আসবেন, দলীয় কর্মীদের কাছে এই প্রশ্নটা গত কয়েক দিন ধরেই জেলার নেতাদের অহরহ শুনতে হচ্ছিল। মুনমুনের নামে দেওয়াল লিখন শুরু হয়ে গেলেও প্রার্থী কেন আসছেন না, সে প্রশ্ন উঠছিল। রিয়া-রাইমাও মায়ের সঙ্গে আসবেন কি না, জানতে চেয়ে নেতাদের মোবাইলে ফোন আসছিল। এ দিন কয়েক জন রিয়া-রাইমার নাম লেখা পোস্টারও এনেছিলেন। মুনমুন পা-রাখা ইস্তক ভিড়ের তোড়ে এ সব প্রশ্ন কোথায় যেন ভেসে গেল! মুনমুনকে দেখে উল্লাসে ফেটে পড়লেন জেলার প্রায় ২৫ হাজার তৃণমূল কর্মী। কেউ তাঁর হাতে তুলে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি, কেউ দিলেন ফুলের তোড়া। কয়েক জনকে দেখা গেল, মুনমুনের দিকে গোলাপ ছুড়তে। সেই গোলাপই মুনমুন আবার পাল্টা ছুড়ে দিয়েছেন কর্মীদের দিকে। মুনমুনের হাতের গোলাপ বলে কথা! কুড়োতে হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছে কর্মীদের মধ্যে!

বাঁকুড়ায় এখন হন্যে হয়ে মুনমুনের জন্য বাড়ি খুঁজছেন তৃণমূলের নেতারা। কর্মিসভা সেরে সুচিত্রার মেয়ে এ দিন চলে যান বাঁকুড়া বাইপাস লাগোয়া বিকনা এলাকার এক আবাসনে। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্বামী ভরত দেববর্মা এবং রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। পরে আসেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। মুনমুন আবাসনে পৌঁছতেই তাঁকে ঘিরে ধরলেন অন্য বাসিন্দারা। এক মহিলার অনুরোধে তাঁর মেয়ের সঙ্গে ছবিও তুলতে হল। মুনমুন ঘরে চলে যাওয়ার পর মেয়ের মা তপতী প্রধান বললেন, “সুচিত্রা সেনের মেয়ে আমার মেয়ের সঙ্গে ছবি তুলেছেন। এটাই আমার কাছে বিরাট প্রাপ্তি।”

মুনমুন পরে জানান, তাঁর মেয়েরাও বাঁকুড়ায় আসতে চেয়েছেন। ভোটে জিতলে তিনি যে ‘ডুমুরের ফুল’ হয়ে যাবেন না, সেই আশ্বাসও এ দিন শোনা গিয়েছে তাঁর মুখে। মুনমুন বলেছেন, “জিতলে আমি মাসে অন্তত সাত দিন বাঁকুড়ায় থাকব। এখানকার মানুষের জন্য কাজ করব।” তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী যে টানা ন’বারের সিপিএম সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া, তা নিয়ে বিলক্ষণ সচেতন তিনি। কর্মিসভাতেই মুনমুন বললেন, “অনেকেই আমাকে বলছেন, আমার বিরুদ্ধে আছেন ন’বারের সাংসদ। কিন্তু তিন বছর ধরে তৃণমূল বাঁকুড়ায় উন্নয়নের কাজ শুরু করেছে। তাই আমার কাছে এটা কোনও সমস্যা নয়!”

বাসুদেববাবু নিজে অবশ্য খানিকটা কটাক্ষের সুরেই প্রতিদ্বন্দ্বী সম্পর্কে বলছেন, “আমার সঙ্গে ওঁর (মুনমুন) পরিচয় নেই। কিন্তু ওঁর তো পরিচিতি সুচিত্রা সেনের মেয়ে হিসেবেই!”

ক্ষতি কী? প্রথম বারের ভোট-সফর তো মায়ের পরিচয়েই শুরু করেছেন শ্রীমতী!

munmun sen rajdip bandopadhay bankura
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy