বাঁকুড়া জেলার আরও দু’টি ঐতিহাসিক মন্দির সংরক্ষণে এগিয়ে এল ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ দফতর। পাত্রসায়র থানার বীরসিংহ গ্রামের বৃন্দাবনচন্দ্র মন্দির ও রাধাদামোদর মন্দির ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বা আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (এএসআই) সংরক্ষণ করতে ‘গেজেট নোটিফিকেশন’ জারি করেছে। বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক পলাশ সেনগুপ্ত বলেন, “ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ ওই দু’টি মন্দির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গেজেট নোটিফিকেশন জারি করেছে। সেই চিঠি আমরা সম্প্রতি পেয়েছি।”
পাত্রসায়রের বীরসিংহ গ্রামের রাধাদামোদর (বাঁ দিকে) ও বৃন্দাবনচন্দ্র
মন্দিরের পুরনো চেহারা ফিরে পাওয়ায় আশায় বাসিন্দারা। ছবি: শুভ্র মিত্র
১৬৩৮ সালে বৃন্দাবনচন্দ্র মন্দিরটি তৈরি করেন বিষ্ণুপুরের মল্লরাজা রঘুনাথ সিংহ। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেই ঐতিহাসিক নিদর্শ এখন ভগ্নদশাপ্রাপ্ত। ওই সময়েই এলাকায় তৈরি হয়েছিল নবরত্ন অর্থাৎ ন’টি চূড়া বিশিষ্ট রাধাদামোদর মন্দিরটিও। শৈলির দিক থেকে ওই মন্দিরের গায়ের অপূর্ব টেরাকোটার কাজ এখনও নজর কাড়া অবস্থায় রয়েছে।
এই খবরে স্বভাবতই খুশি গ্রামবাসী। ওই মন্দির দু’টি সংরক্ষণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন। সংরক্ষণের দাবিতে প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে তাঁরা বহু চিঠিপত্র লেখেন। অবশেষে তাঁদের আর্জি পূরণ হওয়ার প্রাথমিত পর্যায়ের কাজ শুরু হচ্ছে জেনে খুশি এলাকার বাসিন্দারা। তাঁরা জানান, ওই দু’টি মন্দির সংরক্ষণের দাবিতে এক সময়ে তাঁরা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ককে প্রচুর পোস্টকার্ড ছাড়েন। গ্রামবাসী জলধর হালদার বলেন, “আমরা দীর্ঘ ১২ বছর ধরে সরকারের কাছে এই প্রাচীন মন্দির দু’টি সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে আসছিলাম। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ আমাদের দাবি মানায় আমরা খুশি।”
ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেল মন্দির দু’টির গায়ে বিজ্ঞপ্তি সাঁটা রয়েছে। গ্রামবাসী অজিত পাল, সুনীল দে, অনিমেষ পাল তা দেখিয়ে বলেন, “আমরা আশাবাদী সংরক্ষণের কাজ শেষ হলে এই প্রাচীন মন্দির দেখতে পর্যটকরা ভিড় জমাবেন। যার সূত্রে এলাকার ছোট ব্যবসায়ী ও স্থানীয় শিল্পীরা লাভের মুখ দেখবেন।” এই এলাকার রেশম ও তসরজাত তাঁতশিল্প বিখ্যাত। তাঁতশিল্পী উত্তম হেঁস, শালপাতা শিল্পী রাজীব কাপড়িরা বলেন, “পর্যটকরা ভিড় জমালে আমাদের শিল্পসামগ্রীও বিক্রি হবে। এতে এলাকার অর্থনীতিও চাঙ্গা হবে।”
এলাকার ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা শোনালেন বিষ্ণুপুর সংগ্রহশালার সচিব চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, “ওই এলাকার কয়েক কিলোমিটার মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রত্নক্ষেত্র রয়েছে। তার মধ্যে ডুমনিগড় প্রাক্ মুসলিম যুগের এক গড়। তার পাশেই মণিরামপুরে রয়েছে রাজা মণিরাম পালের তৈরি সপ্তদশ শতকের একটি শিবমন্দির। পাশাপাশি সুপ্রাচীন বীরসিংহ দিঘি ও ডুমনি দিঘিও বিখ্যাত। ওই মন্দির দু’টি সংরক্ষিত হলে এলাকায় পর্যটকদের আনাগোনা বাড়বে। তা হলে অন্য প্রত্নস্থলগুলির গুরুত্বও বাড়বে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy