Advertisement
১৯ মে ২০২৪
বাকিদেরও চিহ্নিত করা শুরু পুলিশের

যাত্রী খুনে ধৃত অটোচালক

বচসার জেরে শনিবার যাত্রী খুনের ঘটনায় এক অটোচালককে গ্রেফতার করল পুলিশ। পুলিশ জানায়, ধৃত অটোচালকের নাম রাজেশ লেট। বাড়ি রামপুরহাট সানঘাটাপাড়া এলাকায়। রবিবার ধৃতকে ১৪ দিন জেল হাজতে পাঠিয়েছে রামপুরহাট আদালত। রামপুরহাট এসডিপিও জোবি থমাস কে বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে অটোচালক রাজেশ লেটকে পুলিশ শনিবার রাতেই গ্রেফতার করে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:০০
Share: Save:

বচসার জেরে শনিবার যাত্রী খুনের ঘটনায় এক অটোচালককে গ্রেফতার করল পুলিশ। পুলিশ জানায়, ধৃত অটোচালকের নাম রাজেশ লেট। বাড়ি রামপুরহাট সানঘাটাপাড়া এলাকায়। রবিবার ধৃতকে ১৪ দিন জেল হাজতে পাঠিয়েছে রামপুরহাট আদালত।

রামপুরহাট এসডিপিও জোবি থমাস কে বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে অটোচালক রাজেশ লেটকে পুলিশ শনিবার রাতেই গ্রেফতার করে। রাজেশ তাঁর সঙ্গে যাত্রীদের ভাড়া নিয়ে বচসার ঘটনা স্বীকার করে জানিয়েছে সে কাউকে খুন করার মতো মারধর করেনি। পুলিশি তদন্তে অবশ্য ওই ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে বলে জানতে পারা গিয়েছে। সেক্ষেত্রে অন্য অটোচালকও জড়িত থাকতে পারে।”

শনিবার সন্ধ্যায় রামপুরহাট থানার বড়শাল মোড় এলাকার ঘটনায় অটো চালকের সঙ্গে বচসার জেরে খুন হন, উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার জগদ্দল থানার শ্যামনগর নতুনপল্লী এলাকার বাসিন্দা স্বপন নস্কর (৪৫)। পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী স্বপনবাবু-সহ তাঁর আরও পাঁচজন বন্ধু শুক্রবার তারাপীঠে এসেছিলেন। শনিবার বিকালে তাঁদের কলকাতা ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। সেইজন্য শনিবারই তারাপীঠ থেকে রামপুরহাট স্টেশন পর্যন্ত ছ’জনে একটি অটো করে আসছিলেন। অটোযাত্রী নিমি সাউ জানান, ওই চালকের সঙ্গে তারাপীঠ থেকে রামপুরহাট স্টেশন পর্যন্ত যাত্রী পিছু ১৫ টাকা ভাড়া ঠিক হয়েছিল। পথে রামপুরহাট থানার বরশাল মোড়ে অটো খারাপ হয়ে যায়। অটোচালক যাত্রীপিছু ১৫ টাকা করে ভাড়া মিটিয়ে দেওয়ার জন্য দাবি করেন। এবং অন্য অটো ধরে যাত্রীদের রামপুরহাট স্টেশন পর্যন্ত চলে যেতে বলেন। যাত্রীরা আপত্তি করলে ওই চালকের সঙ্গে বচসা বাধে। ইতিমধ্যে অন্য অটোচালকেরা জড়ো হয়ে যান।

নিমি সাউ বলেন, “যে জায়গায় অটো চালকদের সঙ্গে গন্ডগোল হচ্ছিল সেখানে একটি কাঠের দোকান আছে। প্রথমে স্বপনবাবু অটোতে বসে ছিলেন। অন্য সহ-যাত্রীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হচ্ছে দেখে স্বপনবাবু অটো থেকে নেমে আসেন। ধাক্কাধাক্কিতে প্রথমে রাস্তায় পড়ে যান। এরপর দু’জনকে দেখা যায় কাঠের দোকান থেকে কাঠ নিয়ে মারতে। স্বপনবাবু জখম অবস্থায় পড়ে থাকেন।”

প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, এরপরই স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হতেই অটোচালকরা এলাকা থেকে পালিয়ে যায়। অন্য একটি অটো ধরে জখম স্বপন নস্করকে নিয়ে প্রথমে রামপুরহাট রেল স্টেশন নিয়ে আসেন সহ-যাত্রীরা। স্টেশনের জিআরপির কাছে প্রথমে ঘটনার অভিযোগ জানাতে যান। কিন্তু ঘটনা স্থল তাঁদের এরিয়ার মধ্যে পড়ছে না দেখে জিআরপি যাত্রীদের রামপুরহাট থানায় যেতে বলেন। ইতিমধ্যে কেউ কেউ রামপুরহাট স্টেশন ম্যানেজারের কাছে যান। স্বপনবাবুকে স্টেশন সংলগ্ন রেলওয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া কথা ভাবেন তাঁরা। এরইমধ্যে জানতে পারেন, চিকিৎসক আসার আগে রামপুরহাট হাসপাতালে পৌঁছান যাবে। সেখানে ভর্তি করার কিছুক্ষণের মধ্যেই স্বপনবাবু মারা যান।

এ দিকে বিশু দাস নামে এক সহযাত্রী স্বপন বাবুকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন রামপুহাট থানায়। ঘটনা হল, যাত্রীদের সঙ্গে অটো ও ট্রেকার চালকদের বচসা নতুন নয়। তারাপীঠে অটো-ট্রেকার চালকদের দৌরাত্মতে যানজটেরও অভিযোগ ওঠে মাঝে মাঝেই। মহকুমাশাসক ও মহকুমা পুলিশ আধিকারিককেও সেই নিয়ে কথা বলতে হয় অটো ও ট্রেকার চালকদের ইউনিয়ন এবং তাঁদের মালিক সমিতির সঙ্গে। প্রতিবছর কৌশিকী অমাবস্যার সময় সে নিয়েও বৈঠকও হয়। একসময় মদন মিত্র পরিবহণমন্ত্রী হওয়ার পর তারাপীঠে পুজো দিতে এসে, রামপুরহাট থেকে তারাপীঠ পর্যন্ত অটো ও ট্রেকারের একটি নির্দিষ্ট ভাড়া করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু আজও বাস্তবায়িত হয়নি।

তারাপীঠের দর্শনার্থীরা কিন্তু অটো ও ট্রেকার পরিষেবা নিয়ে রবিবারও বিস্তর অভিযোগ করলেন। কলকাতার ঠাকুরপুকুর থেকে আসা দর্শনার্থী সঞ্জিত পাল বলেন, “রামপুরহাট স্টেশনে অটো ধরতে গিয়ে কেউ বলছে জন পিছু ৪০ টাকা, কেউ বলছে ৫০ টাকা। গাদাগাদি করে একজনের ঘাড়ে আর একজনকে বসিয়ে যাত্রীদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।”

কার্যত এই সমস্ত অভিযোগের সমাধানের জন্য ডিসেম্বর মাসে রামপুরহাট মহকুমাশাসকের উদ্যোগে দু’বার অটো ও ট্রেকার চালকদের ইউনিউয়ন এবং মালিক সমিতির বৈঠক হয়। রামপুরহাট মহকুমাশাসক উমাশঙ্কর এস বলেন, “সেই বৈঠকে ঠিক হয় তারাপীঠে পুলিশ ফাঁড়ির সামনে অটো ও ট্রেকার পার্কিং করা হবে। সেখানে পার্কিং ফি দিয়ে লাইন দিয়ে একটি নির্দিষ্ট ভাড়ায় যাত্রীদের উঠানো হবে। কিন্তু পার্কিং ফি নিয়ে আপত্তি তোলে মালিক সমিতিরা। যার জন্য এখনও কার্যকর করা হয়নি সেই সিদ্ধান্ত।” প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জানুয়ারি মাসে যেহেতু দর্শনার্থীদের ভীড় হয়, সেই জন্য অটো ও ট্রেকার মালিকদেরকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরের মাসে মহকুমা পুলিশ আধিকারিককে সঙ্গে নিয়ে অটো ও ট্রেকার মালিক সমিতি এবং চালকদের ইউনিয়নের সঙ্গে মহকুমাশাসকের বসার কথা। মহকুমাশাসক বলেন, “এছাড়া অটো ট্রেকার চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স, অটো ও ট্রেকারগুলির লাইসেন্স দেখে নেওয়ার জন্য জেলা পরিবহন আধিকারিককে বলা হবে। একইসঙ্গে অটো ও ট্রেকার ভাড়া, তারাপীঠে যানজট দূর করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।”

শনিবারের ঘটনার পর কী বলছে অটো ও ট্রেকার মালিক সমিতি? সমিতির সভাপতি আবদুর রেকিব বলেন, “পার্কিং ফি নেওয়ার বিষয়টি মহকুমাশাসককে মানবিকতার সঙ্গে দেখতে বলেছি। উনি হয়ত চাইছেন কিছু বেকারকে সকার করতে। কিন্তু আমরা অক্ষম।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rampurhat arrest auto driver
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE