অবহেলিত নেতাজি পার্ক।—নিজস্ব চিত্র।
একদিকে জেলা সদর শহর বাঁকুড়া। অন্য দিকে, জেলার পর্যটনের রাজধানী বিষ্ণুপুর। স্বাভাবিক ভাবেই দু’টি শহরের ঠিক মাঝে থাকা ব্লক শহর ওন্দার ঐতিহাসিক গুরুত্বও নেহাত কম নয়। অথচ এই শহরের বাসিন্দাদের গলায় আগের বঞ্চনার ক্ষোভ আজও মেটেনি।
২০১২ সালের জনগণনা অনুসারে ওন্দা শহরের লোকসংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার ২০। অর্থনৈতিক পরিকাঠামো অনুযায়ী এর মধ্যে প্রায় ১০ হাজার মানুষই মধ্যবিত্ত। স্কুল শিক্ষক, সরকারি কর্মী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়র, ব্যবসায়ী-সহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থায় উচ্চপদস্থ পদে কর্মরত ব্যক্তিদের সংখ্যা নেহাত কম নয় এই শহরে। অথচ পরিকাঠামো না থাকায় শহরের মানুষের ‘লাইফস্টাইল’-এ তেমন একটা বৈচিত্র্য নেই। কিছু সমস্যা যা অতীতেও ছিল, এলাকাবাসীদের দীর্ঘ আন্দোলনের পরেও এখনও সেই সমস্যাগুলি মেটেনি। জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে বা পুরনো সমস্যাগুলির সমাধানে খুব একটা ভাবনা চিন্তা করতে দেখা যায় না প্রশাসনিক আধকারিক থেকে জনপ্রতিনিধি কারওকেই, বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাসিন্দারা।
বাম আমলে ওন্দা থানা থেকে কিছুটা জায়গা নিয়ে ওন্দার নেতাজি কালচারাল সোসাইটির উদ্যোগে ও ওন্দা বিধানসভার তত্কালীন ফব বিধায়ক তারাপদ চক্রবর্তীর বিধায়ক কোটার টাকায় একটি নেতাজি পার্ক গড়া হয়েছিল। এলাকার বয়স্ক লোকেরা বিকেল বেলায় পার্কটিতে ভিড় জমাতেন। শিশুরা মেতে উঠত খেলায়। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধীরে ধীরে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে ওঠে উদ্যানটি। বর্তমানে কার্যত পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে সেটি। এই পরিস্থিতিতে এলাকাবাসীরা বিনোদনের জন্য ওন্দাগ্রাম রেল স্টেশন ও ওন্দা হাইস্কুল মাঠকে বেছে নিয়েছেন। এলাকাবাসীদের একাংশের অভিযোগ, অন্ধকার নামার পরে স্টেশনেও এলাকার কিছু বিকৃত মনষ্ক যুবকদের ঠেক বসে। যার ফলে স্টেশনেও বসতে পারেন না লোকজন। ওন্দা হাইস্কুল সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা পেশায় হোমিওপ্যাথি চিকিত্সক শিবেন্দ্রসুন্দর পাল বলেন, “অবসর সময় কাটানোর কোনও জায়গা নেই এখানে। সেক্ষেত্রে স্টেশনই ভরসা। আত্মীয় স্বজনরা বাড়ি এলে তাদের নিয়ে কোথাও বেরতে হলে বাঁকুড়া বা বিষ্ণুপুরে ছুটতে হয় আমাদের।” শিবেন্দ্রবাবুর স্ত্রী রীতা পালের ক্ষোভ, “বিকেলে পড়শি মহিলাদের সঙ্গে গল্প করতে হলে হাইস্কুলের মাঠ অথবা সেটশন এলাকায় যেতে হয়। একটা ভাল পার্ক হলে বাচ্চারাও খেলার সুযোগ পায়। আমরাও একটু অবসর সময় কাটানোর জায়াগা পেতে পারি।”
ওন্দা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক দেবু গোস্বমী বলেন, “প্লাটফর্মে যাওয়ার ফুট ওভার ব্রিজ গড়ে দেওয়ার দাবি দীর্ঘ দিন ধরে আমরা জানিয়ে আসছি। ২০০৯ সালে রেল সেই দাবি মেনে নিলেও শুধুমাত্র দক্ষিণ দিকের ফুট-ওভারব্রিজ হয়েছে। উত্তর দিকের সমস্যা যেমন ছিল তেমনই।” তাঁর আরও ক্ষোভ, “সকাল থেকে হাওড়া যাওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি ট্রেন থাকলেও হাওড়া থেকে ফেরার জন্য কোনও ট্রেন নেই। দীর্ঘ দিন ধরে সকালের দিকে হাওড়া থেকে ওন্দায় আসার একটি ট্রেনের দাবি জানিয়ে আসছে নাগরিক কমিটি। কিন্তু রেলের তরফে কোনও সাড়া মেলেনি।” রেলের সমস্যাগুলি নিয়ে আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও স্পষ্ট করে কোনও উত্তর মেলেনি। তাই সমস্যা কবে মিটবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা থেকে গেল।
ব্লক শহরের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়ে আক্ষেপ রয়েছে দেবু গোস্বামীর। এখানে বড় কোনও হাসপাতাল নেই। না আছে নার্সিংহোম। অসুস্থ ব্যক্তিকে জরুরি অবস্থায় বাঁকুড়া বা বিষ্ণুপুর নিয়ে যাওয়া ছাড়া গতি নেই। ওন্দা ব্লক শহরের নানান সমস্যার সমাধানের আশ্বাস অবশ্য দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এই ব্লকে গড়া হচ্ছে একটি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। যা চালু হওয়ার পরে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নত হবে বলে আশাবাদী ব্লক প্রশাসন। ওন্দার বিডিও শুভঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, “বিধায়ক ও সাংসদ কোটার টাকায় একটি অডিটোরিয়াম গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ওন্দা হাইস্কুল সংলগ্ন এলাকায়। এ ছাড়াও, খামারবেড়িয়ায় একশো দিনের কাজ প্রকল্পে একটি ক্যানাল গড়া হয়েছে। সেটিকে সৌন্দর্যায়ন করে আগামী বছরে একটি ট্যুরিস্ট স্পট হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ।
subject-এ লিখুন ‘আমার শহর পুরুলিয়া-বাঁকুড়া’। ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানান: www.facebook.com/anandabazar.abp
অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’, পুরুলিয়া-বাঁকুড়া বিভাগ, জেলা দফতর আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০০১ ঠিকানায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy