Advertisement
E-Paper

শিশুর প্রাণ কাড়ল যন্ত্রচালিত ভ্যান

অনুমোদনহীন যন্ত্রচালিত ভ্যান রিকশায় কয়লা পাচার করা হচ্ছিল। দ্রুত ছুটে আসা ওই ভ্যানের চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হল চার বছরের এক শিশুর। এর পরেই ক্ষিপ্ত বাসিন্দারা ভ্যান রিকশাটিতে আগুন ধরিয়ে দেন। একই ভাবে পুড়িয়ে দেওয়া হয় রাস্তা দিয়ে আসা আরও চারটি কয়লাভর্তি অনুমোদনহীন যন্ত্রচালিত ভ্যান রিকশাকেও। সোমবার দুপুরে ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া মুরারই থানার বড়ুয়া গোপালপুর গ্রামের কাছে রাজগ্রাম-গোপালপুর রাস্তায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ জানায়, মৃত শিশু সুরজমণি টুডুর (৪) বাড়ি রাজবাড়ি এলাকায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৪ ০১:২৬
পুড়ছে যন্ত্র চালিত ভ্যান।

পুড়ছে যন্ত্র চালিত ভ্যান।

অনুমোদনহীন যন্ত্রচালিত ভ্যান রিকশায় কয়লা পাচার করা হচ্ছিল। দ্রুত ছুটে আসা ওই ভ্যানের চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হল চার বছরের এক শিশুর। এর পরেই ক্ষিপ্ত বাসিন্দারা ভ্যান রিকশাটিতে আগুন ধরিয়ে দেন। একই ভাবে পুড়িয়ে দেওয়া হয় রাস্তা দিয়ে আসা আরও চারটি কয়লাভর্তি অনুমোদনহীন যন্ত্রচালিত ভ্যান রিকশাকেও। সোমবার দুপুরে ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া মুরারই থানার বড়ুয়া গোপালপুর গ্রামের কাছে রাজগ্রাম-গোপালপুর রাস্তায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ জানায়, মৃত শিশু সুরজমণি টুডুর (৪) বাড়ি রাজবাড়ি এলাকায়।

এ দিকে, ঘটনার চার ঘণ্টা পরেও এলাকায় পুলিশ পৌঁছয়নি। রাত পর্যন্ত দেহও উদ্ধার করা যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ শিশুটির মৃতদেহ রাস্তায় রেখে দিয়ে এলাকা ঘিরে রেখেছেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে এলাকায় পুলিশ-প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে এ ভাবে কয়লা পাচার চলছে। কিন্তু পুলিশ এবং প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ করেনি। তাঁদের আরও দাবি, পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদতেই রমরমিয়ে এই বেআইনি কারবার চলছে। সময় থাকতে ব্যবস্থা নিলে একটি নিষ্পাপ শিশুকে এ ভাবে অকালে চলে যেতে হতো না। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সংশ্লিষ্ট মুরারই ১ ব্লকের বিডিও আবুল কালামের অবশ্য দাবি করেন, “ওই রাস্তায় কয়লা পাচারের ব্যাপারে কেউ আমার কাছে অভিযোগ করেনি। কী হয়েছে, খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।” অন্য দিকে, রামপুরহাটের মহকুমাশাসক উমাশঙ্কর এস-ও জানিয়েছেন, বিষয়টির খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ করবেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন সুরজমণির বাবা সিংরাম টুডু সাইকেলে স্ত্রী-বাচ্চাকে নিয়ে মুরারই থানার ফুলবাড়ি গ্রামের এক আত্মীয়বাড়ি থেকে ফিরছিলেন। গোপালপুরের বাসিন্দা আবুল বাশার, মিস্টার শেখ, শাফিকুল ইসলামরা বলেন, “দুপুর ১টা নাগাদ রাজগ্রাম-গোপালপুর রাস্তার উপর গোপালপুর হাইস্কুলের কাছে সিংরামের সাইকেলে ওই কয়লাভর্তি ভ্যানটি ধাক্কা মারে। ধাক্কায় সিংরাম নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে সাইকেলের রডে বসে থাকা শিশুটি রাস্তায় পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্র চালিত ভ্যান রিকশার চাকায় শিশুটির মাথা পিষ্ট হয়।” ঘটনাস্থলেই সুরজমণির মৃত্যু হয়। বেগতিক বুঝে চালক ভ্যান রিকশা ফেলে পালিয়ে যায়। ঘটনার খবর পেয়েই স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ রাস্তায় দেহ ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁরা ঘাতক ভ্যান-সহ ওই রাস্তা দিয়ে আসা পরপর আরও চারটি কয়লাভর্তি ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেন। জগন্নাথপুর, রাজবাড়ি-সহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের কয়েকশো মানুষ তির-ধনুক নিয়ে হাজির হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। খবর গেলেও চার ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও পুলিশ এলাকায় পৌঁছয়নি। ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটার দূরে পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। পঞ্চায়েতের সদস্যেরা উপস্থিত থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

রাজগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার রাজগ্রাম, রাজগ্রাম বাজার, বড়ুয়া-গোপালপুর এলাকার বাসিন্দাদের একটা বড় অংশের অভিযোগ, পাচারকারীরা ঝাড়খণ্ডের আমড়াপাড়া এলাকা থেকে বেআইনি কয়লা বীরভূম সীমানা ঘেঁষা গ্রাম মুরারই এলাকার ঢুঁড়িয়া, মোহনপুর এলাকায় মজুত করে। সেখানে মজুত থাকা কয়লা মুরারই থানার রাজগ্রাম পঞ্চায়েত, মুরারই পঞ্চায়েত, পলসা, গোঁড়শা পঞ্চায়েত এলাকার বেআইনি যন্ত্রচালিত মোটর ভ্যান চালকদের একাংশ এবং মুর্শিদাবাদের সুতি থানার বহুতালি, কাশিমনগর এলাকার ভ্যান চালকদের একাংশ গোপালপুর-রাজগ্রাম রাস্তা দিয়ে নিয়ে এসে কিছুটা মজুত করে রাজগ্রামের জলট্যাঙ্কি এলাকায়। বাকি কয়লা বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ সীমানা লাগোয়া গ্রাম মুর্শিদাবাদেরই সুতি থানার কাশিমনগরে মজুত করা হয়।


রাজগ্রামে রাস্তা আটকে দাঁড়িয়ে ভ্যান।

বিক্ষোভকারীদের দাবি, গোটা পাচার প্রক্রিয়াটিই বীরভূমের মুরারই, নলহাটি ও রামপুরহাট এবং মুর্শিদাবাদের সুতি ও সাগরদিঘি থানার পুলিশের একাংশের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদতে সংঘটিত হয়। এমনকী, তাঁদের এ-ও অভিযোগ, কিছু পুলিশকর্মী নিয়মিত দাঁড়িয়ে থেকে কয়লা পাচারে যুক্ত ভ্যান চালকদের রাজগ্রাম এলাকায় কয়লা মজুত করতে সাহায্য করে। বাসিন্দাদের দাবি অনুযায়ী, রাজগ্রাম উপর দিয়ে এ ভাবে দৈনিক এক হাজারেরও বেশি যন্ত্র চালিত ভ্যান ঝাড়খণ্ডের আমড়াপাড়া কয়লা খনি থেকে কয়লা পাচার করে। ওই সব ভ্যানের অত্যাচারে রাজগ্রামের ভিতর দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের চলাচলও মুশকিল হয়ে পড়ছে।

ওই ভ্যানগুলির কী রাস্তায় চলার কোনও অনুমোদন রয়েছে? বীরভূমের জেলা পরিবহণ আধিকারিক রাজীব মণ্ডল বলেন, “এই ধরনের ভ্যানগুলিকে আমরা অনুমোদন দিই না। পঞ্চায়েত থেকে যে ভাবে সাধারণ রিকশার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়, সে রকমই ওই ধরনের ভ্যান চালানোর জন্য পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতি থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে কী ছিল, তা সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত বলতে পারবে।” তৃণমূল পরিচালিত রাজগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মৌলুদা বেগম অবশ্য জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত থেকে এখনও পর্যন্ত এ ধরনের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। সে ক্ষেত্রে ওই রাস্তা দিয়ে চলা ভ্যানগুলির কোনও আইনি বৈধতাই নেয়। তা হলে পুলিশ বা প্রশাসন কেন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি? জেলার পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়ার জবাব, “ওই এলাকায় এ ভাবে কয়লা পাচার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটা যে আবার শুরু হয়েছে, জানতাম না। এই অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তা হলে ফের ব্যবস্থা নেব।”

—নিজস্ব চিত্র

smuggling coal accident child death muraroi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy