Advertisement
E-Paper

স্কুলে যেতে চায় নির্যাতিতা

দু’জন আগেই ধরা পড়েছে। অন্য জন এখনও পলাতক। স্বস্তি নেই মহম্মদবাজারের ওই আদিবাসী গ্রামের নির্যাতিতা পরিবারের। ঘটনার চার দিন পরেও ষষ্ঠ শ্রেণির ওই ছাত্রী এবং তার পরিবারের অন্য সদস্যদের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। রবিবার রাতভর পুলিশ গ্রাম পাহাড়া দিয়েছে। সোমবার সকালেও গোটা এলাকার পরিস্থিতি ছিল থমথমে। গ্রামে ঢুকে দেখা মিলল প্রাক্তন মাঝি-হাড়াম (মোড়ল) ফুচুই মুর্মুর। বাড়ির দাওয়াই বসে কয়েক জনের সঙ্গে আড্ডা মারছেন। সে দিনের ঘটনার কথা জিজ্ঞাসা করতেই প্রথমেই কেউ-ই কিছু জানেন না বলে এড়িয়ে গেলেন।

ভাস্করজ্যোতি মজুমদার

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৪ ০১:৫২
বিক্ষোভে সারা ভারত সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা। সিউড়ি এসপি অফিসের সামনে তোলা নিজস্ব চিত্র।

বিক্ষোভে সারা ভারত সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা। সিউড়ি এসপি অফিসের সামনে তোলা নিজস্ব চিত্র।

দু’জন আগেই ধরা পড়েছে। অন্য জন এখনও পলাতক। স্বস্তি নেই মহম্মদবাজারের ওই আদিবাসী গ্রামের নির্যাতিতা পরিবারের। ঘটনার চার দিন পরেও ষষ্ঠ শ্রেণির ওই ছাত্রী এবং তার পরিবারের অন্য সদস্যদের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট।

রবিবার রাতভর পুলিশ গ্রাম পাহাড়া দিয়েছে। সোমবার সকালেও গোটা এলাকার পরিস্থিতি ছিল থমথমে। গ্রামে ঢুকে দেখা মিলল প্রাক্তন মাঝি-হাড়াম (মোড়ল) ফুচুই মুর্মুর। বাড়ির দাওয়াই বসে কয়েক জনের সঙ্গে আড্ডা মারছেন। সে দিনের ঘটনার কথা জিজ্ঞাসা করতেই প্রথমেই কেউ-ই কিছু জানেন না বলে এড়িয়ে গেলেন। পরে একটু চাপাচাপি করতেই ফুচুই বলেন, “আমার শরীর ভাল যাচ্ছিল না। তাই আমার সম্পর্কে ভাই গঙ্গু মুর্মুকে সবার মত নিয়ে মাঝি-হাড়াম করা হয়েছিল।” মেয়ের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতেই সালিশি বসেছিল বলে তিনি জানান। তাঁর দাবি, ওই ছাত্রীর পরিবার থানায় যাওয়ার কথা বলতে মাঝপথেই সেই সভা বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল।

এ দিন ওই ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, উঠোনের এক কোণে তার অসুস্থ মানসিক ভারসাম্যহীন দিদি শুয়ে আছে। বাসিন্দাদের এক জন জানালেন, ভোরভোর পুলিশ মেয়েটি এবং তার বাবা-মাকে সিউড়ি নিয়ে চলে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ওই মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়েটিকে দেখার কেউ নেই। এমনকী, গ্রামের কেউ কিছু খেতেও দেননি। রবিবার দেখা না মিললেও এ দিন অবশ্য অভিযুক্তদের বাড়িতে তাদের মা এবং অন্য আত্মীয়দের সন্ধান মিলল। কারও বাড়িতেই হাড়ি চড়েনি। সকলেই ক্ষুব্ধ, আতঙ্কিতও। ক্ষোভের সঙ্গেই তাঁরা দাবি করলেন, “আমাদের ছেলেরা এমন কাজ করতেই পারে না। ওরা তো এক সঙ্গে কবাডি খেলছিল। ওদের মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে।” এরই মধ্যে গ্রামে ঢুকে পড়েছিলেন বীরভূম জেলা আদিবাসী গাঁওতার মহিলা নেত্রীরা। একটি চালার নিচে তাঁরা গ্রামের মহিলাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠকের পরে গাঁওতা নেত্রী মনিকা টুডু দাবি করেন, প্রাথমিক ভাবে তাঁদের মনে হয়েছে, অভিযোগ সঠিক নাও হতে পারে। তবে, তিনি বলেন, “মেয়েটির সঙ্গে কথা বলেছি। ঠিক কী ঘটেছিল, সে ব্যাপারটা আমরা খতিয়ে দেখছি। মেয়েটিকে ও তার পরিবারের সবাইকে বলেছি, কোনও চিন্তা নেই। আমরা তোমাদের পাশে আছি।”

দুপুর পৌনে দু’টো নাগাদ সিউড়ি জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড থেকে নির্যাতিতা এবং তারা বাবা-মাকে পুলিশের গাড়ি করে গ্রামে পৌঁছে দেওয়া হয়। পুলিশের গাড়ির পিছনে আরেকটি গাড়িতে ঘটনার তদন্তে আসেন জেলার ‘চাইল্ড প্রোটেকশন অফিসার’ সংযুক্তা ভট্টাচার্য, ডিসিপিও (ডিস্ট্রিক্ট চাইল্ড প্রোটেকশন অফিসার) নিরুপম সিংহ এবং চাইল্ড ওয়েল ফেয়ার কমিটির সদস্য সুকুরুদ্দিন শেখ। যেখানে মেয়েটি খেলছিল, মেয়েটিকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে তাঁরা সেই জায়গাটি চিহ্নিত করেন। তার পর যে পুকুরের পাড়ে নিয়ে গিয়ে মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ, সেখানেও মেয়েটিকে একাই নিয়ে গিয়ে কথা বলেন সংযুক্তাদেবী। তার পরে মেয়েটি গ্রামের আর যে ক’টি ছেলেমেয়ের সঙ্গে কবাডি খেলছিল, তাদের খোঁজ শুরু হয়। কিন্তু একটি মেয়ে ছাড়া তাঁরা কারও দেখা পাননি। ওই মেয়েটির অবশ্য দাবি, “আমি আগেই খেলা ছেড়ে চলে এসেছিলাম। তাই ঘটনার কথা কিছু জানি না।”

পরে সংযুক্তাদেবী বলেন, “মেয়েটির সঙ্গে কথা বলেছি। ও এখন স্কুলে যেতে চাইছে। তবে, দু’চার দিন পরে যাওয়ায় ভাল। কারণ, ওর আর একটু কাউন্সেলিং হওয়া দরকার।” এ দিনও তার কাউন্সিলিং হয়েছে। ওই প্রতিনিধি দলকেও মেয়েটির বাবা অভিযোগ করেন, সালিশি সভা ছেড়ে চলে আসায় তাঁর বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। তবে, এ ক্ষেত্রে স্পষ্ট করে তিনি কারও নাম বলেননি বলেই জানা গিয়েছে।

bhaskarjyoti majumdar muhammad bazar rape gang rape
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy