Advertisement
E-Paper

স্তব্ধ রেল-সড়ক, দুর্ভোগ

আদিবাসী সংগঠনগুলির বন্‌ধ ও অবরোধে চরম নাজেহাল হলেন পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার বাসিন্দারা। বুধবার সকালে পুরুলিয়ার মধুকুণ্ডার কাছে এবং বরাভূম স্টেশনে রেল অবরোধ করা হয়। বাঁকুড়া, রাইপুর, রানিবাঁধ ও ঝিলিমিলিতে অনেকক্ষণ চলে অবরোধ। প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে দুই জেলার বিভিন্ন অংশে আটকে পড়ে বাসিন্দাদের এ দিন দুর্ভোগে পড়তে হল। মধুকুণ্ডায় আরপিএফ অবরোধকারীদের বিরুদ্ধে মামলাও রুজু করে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:০৯
বাসের চাকা বন্ধ। বিষ্ণুপুর বাসস্ট্যান্ডে। পুরুলিয়ার মধুকুণ্ডা স্টেশনের কাছে আটকে দেওয়া হয় ট্রেন (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

বাসের চাকা বন্ধ। বিষ্ণুপুর বাসস্ট্যান্ডে। পুরুলিয়ার মধুকুণ্ডা স্টেশনের কাছে আটকে দেওয়া হয় ট্রেন (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

আদিবাসী সংগঠনগুলির বন্‌ধ ও অবরোধে চরম নাজেহাল হলেন পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার বাসিন্দারা। বুধবার সকালে পুরুলিয়ার মধুকুণ্ডার কাছে এবং বরাভূম স্টেশনে রেল অবরোধ করা হয়। বাঁকুড়া, রাইপুর, রানিবাঁধ ও ঝিলিমিলিতে অনেকক্ষণ চলে অবরোধ। প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে দুই জেলার বিভিন্ন অংশে আটকে পড়ে বাসিন্দাদের এ দিন দুর্ভোগে পড়তে হল। মধুকুণ্ডায় আরপিএফ অবরোধকারীদের বিরুদ্ধে মামলাও রুজু করে।

অসমে আদিবাসীদের উপরে জঙ্গি হামলার প্রতিবাদে এবং আদিবাসীদের অধিকার রক্ষার দাবিতে আদিবাসী সেঙ্গেল অভিযানের ডাকা ভারত বন্‌ধে আংশিক সাড়া পড়ল পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ায়। পুরুলিয়ায় এ দিন জেলার ৪৭টি রুটের কোনটিতেই বেসরকারি বাস চলেনি বলে বাস মালিক সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে। বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু রুটে ছোট গাড়ি চলাচল করলেও তাতে ঠাসাঠাসি করে লোকজন যাতায়াত করেছেন।

রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল ৬টা থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ওই সংগঠনের শ-দুয়েক কর্মী-সমর্থক আদ্রা-আসানসোল শাখার মধুকুণ্ডা স্টেশনের অদূরে রেল অবরোধ করেন। যার জেরে ওই শাখার বিভিন্ন স্টেশনে আটকে পড়ে গুয়াহাটি-চেন্নাই, টাটা-বিলাসপুর, আসানসোল-হলদিয়া এই তিনটি এক্সপ্রেস-সহ আদ্রা-আসানসোল শাখায় চলাচলকারী তিনটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন। অবরোধের খবর পেয়ে আরপিএফ গিয়ে অবরোধকারীদের উঠিয়ে দেয়। এ ছাড়া সকাল সাড়ে ন’টা থেকে এক ঘণ্টা ধরে ওই সংগঠনের শতাধিক কর্মী-সমর্থক আদ্রা-চাণ্ডিল শাখার বরাভূম স্টেশনে রেল অবরোধ করেন। ফলে আটকে যায় ধানবাদ থেকে টাটাগামী সুবর্ণরেখা এক্সপ্রেস ও টাটা-আসানসোল প্যাসেঞ্জার। বিভিন্ন স্টেশনে আটকে থাকে দানাপুর-দুর্গ, টাটা-পটনা এক্সপ্রেস ট্রেন এবং পুরুলিয়া-ঝাড়গ্রাম প্যাসেঞ্জার ট্রেন। ধানবাদ থেকে সপরিবারে টাটা যাচ্ছিলেন মনোহর সিং। তাঁরও আক্ষেপ, “বরাভূমে আটকে পড়ে খুব সমস্যায় পড়ে গিয়েছি। সময়মতো পৌঁছতে না পারলে বাস পাব না। পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়তে হবে।”

সড়ক পথেও কম হয়রানি হতে হয়নি। দিনের আলো ভালো করে ফোটার আগেই শতাধিক পুরুষ ও মহিলা তীরধনুক, টাঙি নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন বাঁকুড়া শহরে কাটজুড়িডাঙা মোড়ে। বাস-ট্রাকের তো কথাই নেই, রোগী নিয়ে যাওয়া গাড়ি ছাড়া অন্য কোনও ছোট গাড়িরও এগোনর উপায় ছিল না। ফলে গোবিন্দনদর বাসস্ট্যান্ড থেকে গাড়ি বের হতে পারেনি। মোটরবাইক আরোহীদের ছাড় দিলেও অবরোধের এলাকায় তাঁদের গাড়ি টেনে নিয়ে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়। বছরের শেষ দিন আদিবাসী সংগঠনের দিনের প্রায় অর্ধেক ভাগ সময় জেলা সদর বাঁকুড়ার একাংশ কার্যত জেলার অন্য অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েই রইল।

অথচ এহেন ভোগান্তি যে আসতে চলেছে তার কোনও আগাম খবরই ছিল না অনেক মানুষের কাছেই। তাই বাপেরবাড়ি বাঁকুড়ার অরবিন্দনগর থেকে দুর্গাপুরে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার জন্য সকালে জুনবেদিয়া বাসস্টপে বাস ধরার জন্য কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হল পিউ চট্টোপাধ্যায়কে। বাস না পেয়ে তিনি শেষে ফিরে যান। তাঁর ক্ষোভ, “এ দিন যে বন্‌ধ ছিল তা জানা ছিল না।” বহু মানুষের এক কথা। দুর্গাপুরে স্কুলে কর্মরত কয়েকজন শিক্ষিকা বাস না পেয়ে শেষে স্বামী বা আত্মীয়ের মোটরবাইকে চড়ে স্কুলে যান।

বাঁকুড়া মেডিক্যালে চিকিত্‌সাধীন বাবাকে দেখতে বিষ্ণুপুর বাসস্ট্যান্ডে বাস ধরতে এসেছিলেন মনসাতলার বাসিন্দা রমেশ চক্রবর্তী। কিন্তু বাঁকুড়াগামী কোনও বাস না পেয়ে তিনি বাড়ি ফিরে যান। তাঁর ক্ষোভ, “বাবাকে দেখতে যাওয়া খুব দরকার ছিল। অবরোধকারীদের এই সব সমস্যার কথাও তো ভাবা উচিত।” বাঁকুড়া জেলা বাস মালিক সমিতির সম্পাদক দীপক সুকুল বলেন, “দিনভর বাঁকুড়া শহর থেকে কোনও বাস বের হতে পারেনি। তাই জেলা সদরের সঙ্গে দক্ষিণ বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, ছাতনা, শালতোড়া-সহ সব রুটের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ ছিল। বিষ্ণুপুর থেকে সোনামুখী, পখন্না হয়ে কিছু বাস দুর্গাপুরে গিয়েছে। বিষ্ণুপুর থেকে আরামবাগ, তারকেশ্বর রুটের বাসও চলেছে। কিন্তু দক্ষিণ বাঁকুড়া ও জেলা সদরের মধ্যে কোনও যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল না।” এ দিন দুপুর ১টা নাগাদ পুলিশের হস্তক্ষেপে শেষে কাটজুড়িডাঙার অবরোধ ওঠে। এরপরে কিছু বাস চলাচল শুরু হয়। অবরোধ হয় রাইপুর, রানিবাঁধ ও ঝিলিমিলিতেও।

পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে এ দিন কোনও বেসরকারি বাস না চলায় অসুবিধায় পড়েন যাত্রীরা। আড়শার কালীচরণ মাহাতো ও কাঞ্চন মাহাতো দু’জনেই সেখানে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেন। ছোট গাড়িরও দেখা পাওয়া যায়নি। হুড়ার বাসিন্দা ক্ষীরোদ মাহাতো বলেন, “আজ পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা দেওয়ার পরে বাড়ি ফিরতে বাস পাচ্ছি না। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রয়েছি।”

বন্‌ধের ব্যাপক প্রভাব পড়ে দক্ষিণ বাঁকুড়ার বিস্তীর্ণ এলাকায়। খাতড়া, রানিবাঁধ, রাইপুর, সারেঙ্গা, সিমলাপাল ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় অবরোধ ও বন্‌ধের জেরে অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। পথঘাট ছিল সুনসান। পুরুলিয়ায় বন্‌ধে ভূমিকা নিয়েছিল ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টির (জেডিপি) শাখা সংগঠন আদিবাসী সেঙ্গেল অভিযান। জেলার যে এলাকায় জেডিপির সাংগঠনিক শক্তি রয়েছে সেখানে এ দিন রেল-অবরোধ সহ বন্‌ধের সমর্থনে মিছিল করে এই সংগঠন। মানবাজার, কাশীপুর, সাঁতুড়ির মতো এলাকায় বন্‌ধের সমর্থনে মিছিল বের করে তারা। বেসরকারি বাস চলাচল না করায় পুরুলিয়া শহর-সহ জেলার বেশকিছু ব্লক সদরগুলির বাজার ফাঁকাই ছিল। তবে বন্‌ধের কোনও প্রভাবই পড়েনি রঘুনাথপুর মহকুমা এলাকায়। বান্দোয়ানেও এ দিন সাপ্তাহিক হাট বসেছিল। প্রসঙ্গত আদিবাসী সেঙ্গেল অভিযানের ডাকা বন্‌ধকে সমর্থন জানিয়েছে আরও কয়েকটি আদিবাসী সংগঠন।

আদিবাসী সেঙ্গেল অভিযানের পুরুলিয়ার নেতা বৈদ্যনাথ হাঁসদা বলেন, “অসমে আদিবাসীরা বরাবর অত্যাচারিত। দোষীদের শাস্তি ও আদিবাসীদের অধিকার রক্ষার দাবিতেই বন্‌ধের ডাক দেওয়া হয়েছিল। তা সফলও হয়েছে।” বাঁকুড়ার কাটজুড়িডাঙার মোড়ে উপস্থিত আদিবাসী সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের নেতাদের মধ্যে রমেশ কিস্কু, সনগিরি মুর্মু বলেন, “দেশ জুড়েই এই বন্‌ধ ডাকা হয়েছিল। এ নিয়ে এলাকায় প্রচারও করা হয়েছিল।”

ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের পুরুলিয়ার নেতা প্রবীর মুর্মু দাবি করেছেন, “ঘটনার তদন্ত এনআইকে দিয়ে করাতে হবে। নিহতদের নিকটাত্মীয়দের ২৫ লক্ষ ও আহতদের ১০ লক্ষ টাকা করে দিতে হবে।” কিন্তু আমজনতার প্রশ্ন, সাধারণ মানুষকে রাস্তায় আটকে দুর্ভোগে ফেলে কী লাভ হল? দাবি-দাওয়া সরকারের কাছে ওঁরা জানাক।

strike bankura purulia train
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy