Advertisement
E-Paper

সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষ, বোমাবাজি

একশো দিনের কাজ প্রকল্পে গ্রামের একটি পুকুর সংস্কার করাকে কেন্দ্র করে সিপিএম তৃণমূল দু’পক্ষের বিবাদ। সেই বিবাদ মেটাতে মঙ্গলবার রাতে দুবরাজপুরের আউলিয়া-গোপালপুর গ্রামে গিয়ে বোমার আঘাতে মারত্মক জখম হন দুবরাজপুর থানার এক সাবইনস্পেক্টর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৪ ০০:২৮
দুবরাজপুরে এই পুকুর ঘিরে ঝামেলা হয় মঙ্গলবার।

দুবরাজপুরে এই পুকুর ঘিরে ঝামেলা হয় মঙ্গলবার।

একশো দিনের কাজ প্রকল্পে গ্রামের একটি পুকুর সংস্কার করাকে কেন্দ্র করে সিপিএম তৃণমূল দু’পক্ষের বিবাদ। সেই বিবাদ মেটাতে মঙ্গলবার রাতে দুবরাজপুরের আউলিয়া-গোপালপুর গ্রামে গিয়ে বোমার আঘাতে মারত্মক জখম হন দুবরাজপুর থানার এক সাবইনস্পেক্টর। দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিত্‌সাধীন আমিত চক্রবর্তী নামের ওই এসআইয়ের অবস্থা এখনও সঙ্কটজনক। পুলিশ দু’পক্ষের মোট ৪৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে। অভিযুক্তদের মধ্যে তৃণমূলের দুবরাজপুর পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শেখ আলিম এবং এলাকার প্রভাবশালী সিপিএম নেতা মকতুল হোসেনের নাম রয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে ১২ জন। বুধবার সকলকে দুবরাজপুর আদালতে তোলা হলে পুলিশের আবেদন মেনে ধৃতদের মধ্যে দু’জনের তিন দিনের পুলিশ হেফাজত এবং বাকিদের ১৪ দিন জেল হাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। ঘটনার পর থকে পানাগড়-দুবরাজপুর রাজ্য সড়কের দু’পাশে থাকা আউলিয়া এবং গোপালপুর দু’টি গ্রামই পুরুষ শূন্য। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধাবার সকাল পর্যন্ত গ্রামে টহল দিয়েছে পুলিশ বাহিনী। খোঁজ চলছে বাকি অভিযুক্তদেরও। জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “মঙ্গলবার রাতের ঘটনা রাজনৈতিক সংঘর্ষ। পুলিশ তদন্ত করছে।”

এই ঘটনার জন্য সিপিএম-তৃণমূল অবশ্য একে অপরকে দায়ী করছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অরুণ মিত্রের দাবি, “একশো দিনের কাজ করিয়ে টাকা বাকি রাখা ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করতে গিয়েই তৃণমূলের ভাড়াটে বাহিনীর আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে আমাদের সমর্থকদের। পুলিশকে বোমা মারার পাশাপাশি আমাদের বেশ কয়েকজনের সমর্থক বাড়িতে ঢুকে লুঠপাট ও বোমাবাজি করেছে ওরা।” অন্য দিকে, তৃণমূলের দুবরাজপুর ব্লক সভাপতি ভোলা মিত্রের দাবি, “একশো দিনের কাজ করার সময় একটি পুকুরে মাটি কাটায় বাধা দেয় সিপিএমের লোকেরা। সেটা মেনে নিয়ে চলে এলেও স্থানীয় এক সিপিএম নেতার নির্দেশে আমাদের বেশ কয়েক জনকে মরাধর করা হয়। তার প্রতিবাদ করা হয়েছে। পুলিশকে বোমা মেরেছে ওরাই।”

বুধবার এলাকায় তখনও পড়ে রয়েছে তাজা বোমা।

স্থানীয় যশপুর পঞ্চায়েত ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গোপালপুর গ্রামের ‘খিড়ুলি গড়ে’ নামে পুকুরে ১০০ দিনের কাজে মাটি কাটা শুরু হতেই সমস্যার শুরু। ওই গ্রামের বাসিন্দা যাঁদের অনেকেই সিপিএমকে সমর্থন করেন তাঁদের দাবি, “প্রথমত আগে একশো দিন প্রকল্পে কাজ করে আমাদের অনেকেই টাকা পায়নি। দাবি ছিল, আগের টাকা মেটানোর পরেই ওই পুকুরটি সংস্কার করা হোক এবং যাঁদের ওই পুকুরে অংশীদারিত্ব রয়েছে তাঁদের না জানিয়ে গ্রামের বাইরের জব কার্ডধারীদের নিয়ে এসে পুকুরের মাটি কাটার কাজ শুরু হতেই প্রতিবাদ ওঠে। কাজ শুরুর আগে আমাদের অনুমতি কেন নেয়নি?” পুকুরে ভাগ রয়েছে এমন কয়েকজন দুবরাজপুরের বিডিও কুণাল বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিষয়টি জানানোর পর বন্ধ হয় মাটি কাটার কাজ। সিপিএম নেতা মকতুল হোসেনের অভিযোগ, “সেটাতেই চরম চটে যায় তৃণমূল। কাজ বন্ধ করলে দেখে নেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়ে গিয়েছিল ওা। সকালে-রাতে বহিরাগত দুষ্কৃতীদের নিয়ে গ্রাম আক্রমণ করে।” অন্য দিকে, দুবরাজপুর পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ শেখ আলিমের পাল্টা দাবি, “উন্নয়নের কাজ বন্ধ হয়ে যাবে বলেই কাজ শুরু হয়েছিল। ওই গ্রামের লোকজন আপত্তি তোলায় সেটা মেনে নিলেও সিপিএমের লোকেরা আমাদের কয়েকজনকে মঙ্গলবার বিকেলে মারধর করে তখনই ঝামেলা বাধে।”

স্থানীয় সূত্র ও রাজনৈতিক কারবারীদের মতে, তৃণমূল শাসিত যশপুর পঞ্চায়েতের গোপালপুর গ্রামে সিপিএমের ক্ষমতা এখনও বেশি। অন্য দিকে, রাস্তার উল্টোদিকে থাকা আউলিয়া গ্রামের তৃণমূলের প্রভাব তুলনায় বেশি। এই নিয়ে একটা চাপা উত্তজনা লেগেই থাকে ক্ষমতার দখলে রাখার জন্য। মঙ্গলবারের ঘটনা তারই প্রকাশ। বুধবার সকালে গোপালপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, রীতিমতো আতঙ্কিত বাড়ির মহিলারা। বাড়ির দেওয়ালে বোমা চিহ্ন। ঘর ভাঙচুর ও লুঠপাঠের চিহ্ন স্পষ্ট। পুরুষ তো দুরের কথা একটা পাঁচ বছর বয়সের ছেলেও নজরে পড়ল না। সাজেরা বিবি, দিলসানা খাতুন, সাবিনা ইয়াসমিন বা কাফুরা বিবিদের অভিযোগ, “গতকাল তৃণমূল বাইরের লোকেদের জুটিয়ে এসে ঘর লুঠপাট করেছে। যে যার মতো পালিয়েছিলাম। সকালে ফিরেছি। সিপিএম করি বলেই এই আক্রমণ।” আউলিয়া গ্রামও পুরুষহীন। ঘর লুঠপাঠের আভিযোগ তুলছেন নূরজাহান বিবি, সামসুন্নেসারা। আতঙ্কের ছাপ তাঁদের চোখেমুখেও। বলছেন, “রাতে কী ভাবে থাকব? আবার যদি কিছু হয়। আতঙ্কের জন্য একটি শিশুও এ দিন গ্রামের আউলিয় গোপালপুর প্রাথমিক স্কুলে যায়নি।”

ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত।

dubrajpur cpm-tmc clash bombing
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy