Advertisement
E-Paper

সকাল থেকে চাপা উদ্বেগ, সন্ধ্যায় জল্পনা উড়িয়ে প্রার্থী হলেন শ্যাম

দিনভর চাপা উদ্বেগে থেকে সন্ধ্যায় স্বস্তি ফিরল বিষ্ণুপুরের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে। তাঁরা জানতে পারলেন, এ বারও এই শহরের পাঁচ বারের পুরপ্রধান শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবন থেকে বাঁকুড়া জেলার তিনটি পুরসভার প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে শাসদকল। ১৯৯০ সাল থেকে বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান শ্যামবাবু। রাজ্যের মন্ত্রী হওয়ার পরেও তিনি পুরপ্রধান পদেই রয়ে যান। তাই এ বারও যে তিনি প্রার্থী হবেন, তা নিয়ে একপ্রকার নিশ্চিত ছিলেন তাঁর অনুগামীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৫ ০৩:২৪
শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।

শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।

দিনভর চাপা উদ্বেগে থেকে সন্ধ্যায় স্বস্তি ফিরল বিষ্ণুপুরের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে। তাঁরা জানতে পারলেন, এ বারও এই শহরের পাঁচ বারের পুরপ্রধান শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবন থেকে বাঁকুড়া জেলার তিনটি পুরসভার প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে শাসদকল।

১৯৯০ সাল থেকে বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান শ্যামবাবু। রাজ্যের মন্ত্রী হওয়ার পরেও তিনি পুরপ্রধান পদেই রয়ে যান। তাই এ বারও যে তিনি প্রার্থী হবেন, তা নিয়ে একপ্রকার নিশ্চিত ছিলেন তাঁর অনুগামীরা। কিন্তু বুধবার রাজ্যের কলকাতা বাদে অন্য পুরসভাগুলির পুর ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারির দিনেই তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের একটি মন্তব্য শ্যামবাবুর অনুগামীদের রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। পার্থবাবু জানিয়েছিলেন, রাজ্যে কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী ছাড়া আর কোনও মন্ত্রী পুরভোটে প্রার্থী হচ্ছেন না। তাহলে কি বিষ্ণুপুরের দীর্ঘদিনের পুরপ্রধান শ্যামাপ্রসাদবাবুও এ বার পুরভোটে লড়তে পারবেন না? এই প্রশ্নই বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঘুরপাক খেল বিষ্ণুপুর তথা বাঁকুড়া জেলাজুড়ে। সকাল থেকে অনুগামীরা শ্যামবাবুকে ফোনে পাননি। তিনি চলে গিয়েছিলেন কলকাতায়। ফলে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় তাঁদের প্রাণ ওষ্ঠাগত হওয়ার জোগাড় হয়েছিল। রাতে বিষ্ণুপুরে ফেরার পথে শ্যামবাবু বলেন, “আমি এ বার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী হচ্ছি। আমাদের তালিকাই রাজ্য নেতৃত্ব মেনে নিয়েছেন।” দলের জেলা নেতা তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী জানান, তিনটি পুরএলাকায় অনেক কাউন্সিলরকে এ বারও প্রার্থী করছে দল। বিশেষ রদবদল করা হয়নি। বাঁকুড়ায় বিদায়ী পুরপ্রধান শম্পা দরিপা ও উপপুরপ্রধান অলকা সেন মজুমদার প্রার্থী হচ্ছেন।

এমনিতেই গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের ফলে স্থানীয় স্তরে মতানৈক্যের জেরে বাঁকুড়া ও সোনামুখী পুরসভার বেশ কিছু ওয়ার্ডের প্রার্থী নির্বাচন রাজ্যের হাতে ছেড়ে দিয়েছিল জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। তবে বিষ্ণুপুর পুরসভাই এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিল। দল সূত্রে খবর, এই পুরসভায় প্রার্থী বাছাই নিজে হাতে করেছেন শ্যামাপ্রসাদবাবু। রাজ্য নেতৃত্বের শুধু সেই তালিকায় শিলমোহর দেওয়ার কথা ছিল। সূত্রের খবর, দলীয় কর্মীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে নিজের জন্যেও এ বার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডটি বেছে নিয়েছেন তিনি। কারণ তাঁর নিজের ওয়ার্ডটি এ বার সংরক্ষিত হয়ে গিয়েছে।

পার্থবাবুর ওই মন্তব্য ঘিরে দলের কর্মীদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছিল। কর্মীরা নেতাদের কাছে ঘন ঘন ফোন করে জানতে চাইছিলেন ‘শ্যামদা কি ভোটে দাঁড়াতে পারছেন না?’ নেতারাও তথৈবচ। তাঁরাও যে অন্ধকারে। সবারই মনের কথা, এই শহরে শ্যামদা যখন কংগ্রেসে ছিলেন তখনও এখানে কংগ্রেস বলতে লোকে তাঁকেই বুঝত। এখনও বিষ্ণুপুরে তৃণমূল মানে তিনিই। এই পুর শহরে বিরোধীদের অস্তিত্বই কার্যত নেই।

শ্যামাপ্রসাদবাবুর বিকল্প কে হবেন? ১৩ নম্বর ওয়ার্ডেই বা দল কাকে প্রার্থী করবে এই সব নিয়ে পাড়ার অলিগলির চা দোকানগুলিতেও জোর আলোচনা শোনা গিয়েছে। কাজেই তাঁকে প্রার্থী না করা হলে তো পুরভোট রংহীন হয়ে যাবে! শ্যামবাবুর ঘনিষ্ঠ এক কাউন্সিলরের ক্ষোভ, “পার্থবাবুর মন্তব্য শোনার পরে আমাদের মনোবল ভেঙে পড়েছিল। শ্যামদাকে ফোন করছিলাম, উনি ধরছিলেন না। সারাদিন যে কি দুশ্চিন্তার মধ্যে কেটেছে।”

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, আগামী ২৫ এপ্রিল জেলার তিনটি পুরসভা বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর ও সোনামুখীতে একসঙ্গে ভোট হবে। এ বার বাঁকুড়া পুরসভায় একটি ওয়ার্ড বেড়েছে। ফলে এই পুরসভার ওয়ার্ড ২৩ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪। যদিও সোনামুখী ও বিষ্ণুপুর পুরসভায় কোনও ওয়ার্ড বাড়েনি। সোনামুখীতে ১৫ ও বিষ্ণুপুরে ১৯টি ওয়ার্ডেই ভোট হচ্ছে। বুধবার থেকেই মনোনয়নপত্র তোলার দিন শুরু হয়েছে। সে জন্য এ দিন থেকেই জেলাশাসকের দফতরের সামনে পুলিশি ঘেরাটোপ দেখা গিয়েছে। বাঁকুড়া সদর থানার আইসি বিশ্বজিৎ সাহাকে জেলাশাসকের অফিস চত্বরে পুলিশ মোতায়েন করতে দেখা গিয়েছে। প্রার্থীরা মনোনয়ন দিতে এলে কতজনকে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হবে, পরিস্থিতি কী ভাবে সামলানো হবে তা বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন তিনি। পাশাপাশি সব পুলিশকর্মীদের মনোনয়ন পেশ করতে আসা প্রার্থীদের নাম জেনে নিতে ও মোবাইলে ছবি তুলে রাখতেও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। আগামী ২৫ মার্চ মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। মনোনয়ণপত্র প্রত্যাহার করার শেষ দিন ২৮ মার্চ।

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য হাতে আর ছ’দিন। এখনও বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর পুরসভার প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে উঠতে পারেনি বামফ্রন্ট। সোনামুখীতে প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হলেও বাকি দু’টি পুরসভায় কেন হল না?

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য অমিয় পাত্র বলেন, “আমাদের চূড়ান্ত আলোচনা এখনও হয়নি। রবিবারই বাকি দু’টি পুরসভার প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করব আমরা।” শরিক দলগুলির সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে কোথাও কোনও বিতর্ক নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। এ দিকে পুরভোটের প্রার্থী নির্বাচন সংক্রান্ত বৈঠক সেরে গিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। কিন্তু বৈঠকের পরে এক সপ্তাহ পার হতে চললেও এখনও প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে উঠতে পারেনি বিজেপি।

এ নিয়ে তৃণমূলের এক নেতার কটাক্ষ, ওয়ার্ডে দাঁড় করানোর মতো প্রার্থীই নেই বিজেপির হাতে। তিনটি পুরসভার অর্ধেক ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থী দিতে পারে কি না সন্দেহ। যদিও বিজেপির জেলা মুখপাত্র অজয় ঘটক বলেন, “সব ওয়ার্ডেই আমরা প্রার্থী দেব। প্রার্থী হওয়ার যোগ্য নতুন কেউ দলে যোগ দেন কি না তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছি। শনিবারের পরে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে পারি আমরা।”

municipal election bankura shyamaprasad mukhopadhyay tmc candidate
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy