Advertisement
১৮ মে ২০২৪
কলেজে অনলাইন ভর্তি বন্ধ

হয়রানি বাড়বে, একমত পড়ুয়া-শিক্ষকেরা

রোদ-বৃষ্টি মাথায় দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। এই পরিস্থিতিতে এক দিনে একটা বা দু’টি কলেজে ফর্ম তোলা সম্ভব হবে না। দ্রুত ফর্ম তুলতে গেলে ভোর থেকে গিয়ে লাইন দিতে হবে। হয়রানির কথা ভেবেই মুখ শুকিয়ে গিয়েছে সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের একটা বড় অংশের।

এ বারও দুর্ভোগ ঘুচল না পড়ুয়াদের।—ফাইল ছবি।

এ বারও দুর্ভোগ ঘুচল না পড়ুয়াদের।—ফাইল ছবি।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৪ ০০:২৫
Share: Save:

রোদ-বৃষ্টি মাথায় দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। এই পরিস্থিতিতে এক দিনে একটা বা দু’টি কলেজে ফর্ম তোলা সম্ভব হবে না। দ্রুত ফর্ম তুলতে গেলে ভোর থেকে গিয়ে লাইন দিতে হবে। হয়রানির কথা ভেবেই মুখ শুকিয়ে গিয়েছে সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের একটা বড় অংশের।

চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে আর কলেজের ফর্ম তুলতে লাইনে দাঁড়াতে হবে না বলে প্রায় ধরে নিয়েছিলেন মাড়গ্রাম থানার চাঁদপাড়া গ্রামের অলোক পটুয়া। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪২৩ নম্বর পেয়েছেন। অন-লাইন ভর্তির প্রসঙ্গ তুলতেই বললেন, “অন-লাইন ব্যবস্থা থাকলে কলেজে কলেজে পড়ুয়াদের ফর্ম নেওয়ার জন্য সকাল থেকে ঘুরতে হত না। বাড়িতে বা সাইবার কাফে-তো বসেই এক সঙ্গে অনেকগুলো কলেজের ফর্ম তোলর সুযোগ পাওয়া যেত। হল না কী আর করব!” ওই থানায় কবিরাজপুর গ্রামের বাসিন্দা ওসমান আলির কথায়, “হঠাত্‌ করে রাজ্য সরকার নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কলেজে-কলেজে দীর্ঘক্ষণ লাইন দিয়ে ফর্ম তুলতে হবে। আগের সিদ্ধান্তটাই তো আমাদের পক্ষে ভাল ছিল।”

অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়ার জন্য জেলার কলেজগুলিও প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিল। এই জেলায় ১৪টি সরকারি কলেজের মধ্যে একমাত্র ময়ূরেশ্বর থানার মল্লারপুর টুরকু হাঁসদা লেপসা হেমব্রম কলেজে মঙ্গলবার থেকে ভর্তির ফর্ম দেওয়া শুরু হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ অমিত চক্রবর্তী জানান, ছাত্রছাত্রী থেকে অভিভাবক এবং কলেজ কর্তৃপক্ষ সকলেই জানতেন, অনলাইনে ভর্তি হবে। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষা দফতরের নির্দেশে সেই প্রক্রিয়া বন্ধ হওয়ার পরে কলেজের উপরে চাপ কমানোর জন্য ফর্ম দেওয়া শুরু করা হয়েছে। তাঁর অভিমত, অনলাইন ভর্তি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে কলেজের যেমন চাপ বাড়ল, তেমনই ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে অভিভাবকদেরও হয়রানি বাড়ল।

অন্য অধ্যক্ষেরাও মানছেন অনলাইন প্রক্রিয়ায় ভর্তি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নানা ধরনের সমস্যার কথা। একাধিক অধ্যক্ষের বক্তব্য, যে সব কলেজে পরীক্ষা চলছে, সেখানে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু রাখা বাড়তি চাপ হবে। হেতমপুর কৃষ্ণচন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ সমীর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “অনলাইন ভর্তির অনেক সুবিধা আছে।” সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজের অধ্যক্ষ লক্ষীনারায়ণ মণ্ডল বলেন, “অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ হওয়ায় অবশ্যই বাড়তি চাপ নিতে হবে।”

অন্য দিকে, এসএফআই-এর বীরভূম জেলা সহ-সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ হওয়ার সুযোগ নিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) এ বার কলেজে কলেজে ভর্তির সময় নিজেদের দলীয় প্রভাব খাটিয়ে দাদাগিরি করবে। সেই জন্য অনলাইন ভর্তি বন্ধ করে দিয়েছে শাসক দল।”

অভিযোগ মানছেন না রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরের পরিষদীয় সচিব তথা রামপুরহাটের তৃণমূল বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, গোটা বিষয়টির একটা ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে। আশিসবাবুর দাবি, অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে কেন্দ্রীভূত রাখা হবে না। যার উদ্দেশ্য, আগামী দিনে সমস্ত কলেজে অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়ার পরিকাঠামো চালু করা। তাঁর বক্তব্য, “যাঁরা বলছেন, কলেজে-কলেজে এ বার মারামারি বাড়বে, তাঁরা ভুল ভাবছেন। কারণ, ইতিমধ্যে আমরা সমস্ত কলেজে মেধার ভিত্তিতে ভর্তি করার জন্য যেমন নির্দেশ দিয়েছি, সেই সঙ্গে ছাত্র সংসদকে কলেজে-কলেজে ছাত্র ভর্তির ক্ষেত্রে মাথা ঘামাতেও নিষেধ করা হয়েছে।” টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি সুরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশ মেনে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সাংগঠনিক ভাবেও।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

apurba chattopadhay college admission birbhum
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE