Advertisement
E-Paper

জাগো বাংলার টাকার উৎসও প্রশ্নের মুখে

নিজে ছবি এঁকে দলের জন্য তহবিল সংগ্রহের কথা বারবার বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছেন ছবি বিক্রির টাকায় তাঁর দলীয় মুখপত্র চালানোর কথাও। সারদা-তদন্তের শিকড় গভীরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই সব টাকার উৎসও এ বার প্রশ্নের মুখে। রেলমন্ত্রী থাকাকালীনই নিজের আঁকা ছবির প্রদর্শনী শুরু করেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী হয়েও করেছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:১৪

নিজে ছবি এঁকে দলের জন্য তহবিল সংগ্রহের কথা বারবার বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছেন ছবি বিক্রির টাকায় তাঁর দলীয় মুখপত্র চালানোর কথাও। সারদা-তদন্তের শিকড় গভীরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই সব টাকার উৎসও এ বার প্রশ্নের মুখে।

রেলমন্ত্রী থাকাকালীনই নিজের আঁকা ছবির প্রদর্শনী শুরু করেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী হয়েও করেছেন। এ বার সেই প্রদর্শনীর ছবি কেনাবেচায় আর্থিক লেনদেন নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল সারদা-কাণ্ডে বহিষ্কৃত তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষের লিখিত বয়ান। যা এখন সারদা-তদন্তকারীদের হাতে।

কুণালের দাবি: সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেন তাঁকে বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবি কেনা বাবদ তিনি নগদ টাকা দিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ সৃঞ্জয় বসুকে। উদ্দেশ্য ছিল, মুখ্যমন্ত্রীকে ‘খুশি করা’। তবে ছবিগুলি শেষ পর্যন্ত পেয়েছিলেন কি না, সেটা সারদা-কর্তার ‘মনে নেই।’ কুণাল জানিয়েছেন, ছবি কেনার জন্য দেওয়া টাকার অঙ্ক ১ কোটি ৮২ লক্ষ কি না সেটাও সুদীপ্ত স্পষ্ট বলেননি। তাঁর লেখায় আছে, “হতে পারে, সেন কিছু কম টাকা দিয়েছেন। হতে পারে, সেন আমাকে বলছেন না। বিপুল টাকা দিয়েছিলেন।”

কুণালের দাবি অনুযায়ী মমতার আঁকা ছবির প্রদর্শনী ও টাকা তোলার ভার ছিল সৃঞ্জয়বাবু এবং মমতা-ঘনিষ্ঠ শিবাজী পাঁজার উপর। এ ছাড়াও তৃণমূলের দলীয় মুখপত্রের জন্য বিজ্ঞাপন আদায় ইত্যাদিও তাঁরা দেখতেন বলে জানিয়েছেন কুণাল। সেই সঙ্গেই বলেছেন, কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং ব্যবসায়ী রাহুল তোদিও এই সব কাজে যুক্ত থাকতেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কেউই অবশ্য তাঁদের বিরুদ্ধে তোলা কুণালের অভিযোগ স্বীকার করেননি।

সৃঞ্জয়বাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর টাউন হলের প্রদর্শনীর সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে যে প্রদর্শনী করেছিলেন, সেটা গ্যালারি ৮৮-এ হয়েছিল। উনি আমাকে প্রদর্শনীর জন্য সাহায্য করতে বলেছিলেন। আমি ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। উনি তখন রেলমন্ত্রী ছিলেন। লোকসভা ভোটের আগে সম্ভবত ২০১০-র ডিসেম্বর বা ২০১১ সালের প্রথম দিকে প্রদর্শনী হয়েছিল। কিন্তু কোনও টাকা-পয়সা লেনদেনে আমি ছিলাম না। সুদীপ্ত সেন নিজে সিবিআই-কে যে চিঠি দিয়েছিলেন, তাতেও তো এ সব লেখা নেই। ওই প্রদর্শনীতে যাঁরা ছবি কিনেছিলেন, ‘জাগো বাংলার’ (দলীয় মুখপত্র) নামে ডিডি কিংবা অফিসিয়াল চেক দিয়ে কিনেছিলেন। কেকেএন, জগমোহন ডালমিয়া, হর্ষ নেওটিয়া, সঞ্জীব গোয়েন্কা ছবি কিনেছিলেন। অনেক বিদেশিও ছবি কেনেন। সব টাকাই ‘জাগো বাংলার’ নামে জমা পড়েছে। কত টাকায় কারা কেনেন, তার তালিকা আয়কর দফতর জানে।”

শোভনবাবুর বক্তব্য: এই প্রদর্শনীর বিষয়ে মমতাদি কখনও বলেননি, কুণালও কিছু বলেনি। আমি প্রদর্শনীর বিষয়ে কিছু জানি না। বলতেও পারব না।” রাহুল তোদি জানান, “প্রদশর্নীতে গিয়েছি। দর্শক হিসেবে গিয়েছিলাম। একটি ছোট ছবিও কিনেছিলাম। কিন্তু, তার টাকার অঙ্কটা এখন আর মনে নেই। তবে কোনও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না।”

কুণাল উল্লেখ করেছেন তৃণমূলের মুখপত্রে বিজ্ঞাপন আদায়ের প্রসঙ্গও।

শোভনের জবাব, “জাগো বাংলা দলের মুখপত্র। মমতাদি কুণালকে দেখার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। দলের সদস্য হিসেবে আমাদেরও নৈতিক দায়িত্ব ছিল। কুণালের সঙ্গে সেই কাগজের পরিচালনা নিয়ে আলোচনা হতো। সাধ্যমতো সাহায্য করতাম। পুজোসংখ্যার বিজ্ঞাপনের ফর্ম পাঠাত আমার কাছে। রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভা, জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত এবং সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। কলকাতা পুরসভা থেকেও দেওয়া হয়েছে। সবারই নথি রয়েছে। জটিল পদ্ধতি কেন হবে? বিতর্কিত কারও কাছ থেকে তো বিজ্ঞাপন নেওয়া হয়নি।” সৃঞ্জয় জানান, “আমি ‘জাগো বাংলা’র সম্পাদক। বিজ্ঞাপন খাতে যা আসত বা আসে, তার সবই ‘অফিসিয়ালি’ আসত বা আসে।”

রাহুল তোদির দাবি, “আমার সঙ্গে ‘জাগো বাংলা’র কোনও সংস্রবই নেই। আমি দু’এক বার পড়েছি। বিজ্ঞাপন দিয়েছি। ওই পর্যন্তই। তার পরিচালনা বা অন্য কিছুর ধারেকাছেও ছিলাম না। আর ছবির প্রদর্শনী থেকে বিজ্ঞাপনের টাকা তোলা সব প্রশ্নে শিবাজী পাঁজার জবাব, “আমি কিছু জানি না। আমি কিছু বলতে পারব না।”

jago bangla saradha scam sudipto sen kunal ghosh debjani tmc cbi probe mamata bandyopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy