স্কুল সার্ভিস কমিশনের বিধির একটি ধারা উল্লেখ করে শিক্ষক বদলি শুরু করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, যে ধারাকে হাতিয়ার করে বদলির নির্দেশ কার্যকর করা হচ্ছে তা কি পুরোপুরি বৈধ? ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে মামলা হয়েছে কলকাতা হাই কোর্টে। মামলাকারীদের আইনজীবীদের বক্তব্য, ওই ধারা নিয়ে আগেই মামলা হয়েছিল। কলকাতা হাই কোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্ট ঘুরে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে ফিরে এসেছে। তার নিষ্পত্তি হয়নি। তাই বিচারাধীন ওই ধারাকে হাতিয়ার করে কী ভাবে বদলির নির্দেশ জারি করা যেতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। যদিও শিক্ষা দফতরের পাল্টা দাবি, ওই ধারা নিয়ে সার্বিক মামলা বা স্থগিতাদেশ নেই।
সম্প্রতি কয়েকশো শিক্ষক-শিক্ষিকাকে কলকাতা এবং অন্যান্য শহরাঞ্চল থেকে বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলে বদলির সুপারিশ জারি করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। তাদের বক্তব্য, বিভিন্ন স্কুলে পড়ুয়া এবং শিক্ষকের অনুপাতে মারাত্মক ঘাটতি আছে। তা সামাল দিতেই এই পদক্ষেপ করেছে শিক্ষা দফতর। এসএসসি সেই নির্দেশ পালন করেছে। তবে সেই সুপারিশের ভিত্তিতে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এখনও কোনও বদলির নির্দেশ জারি করেনি। সুপারিশ জারি হতেই অবশ্য বহু শিক্ষক-শিক্ষিকা মামলা করেছেন। সেগুলির এখনও শুনানি হয়নি।
মামলাকারী বহু শিক্ষক-শিক্ষিকার আইনজীবী এক্রামুল বারি বলছেন, ‘‘অতিমারি পরিস্থিতিতে এই ধরনের প্রশাসনিক বদলি হয়েছিল। সেই সময় এই প্রশাসনিক বদলির নীতি নিয়ে মামলাও হয়। কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য সেই মামলায় স্থগিতাদেশ দেন। রাজ্য সরকার ডিভিশন বেঞ্চে আর্জি জানিয়ে স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে রায় পায়। মামলাকারীরা সুপ্রিম কোর্টে গেলে শীর্ষ আদালত বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য হাই কোর্টে ফেরত পাঠায়। সেই মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। তাই প্রশাসনিক বদলি বিষয়টি এখনও বিচারাধীন।’’ অনেক আইনজীবীর বক্তব্য, এসএসসি বিধির ১০(সি) ধারার ভিত্তিতে বদলির নির্দেশ জারি করেছে কমিশন। তাতে সরকার মনে করলে, শিক্ষা-স্বার্থে কিংবা প্রশাসনিক স্বার্থে একতরফা ভাবে বদলি করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এ ভাবে বদলি করা যায় কি না, সেটাই প্রশ্ন। স্কুলশিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলার আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত বলছেন, ‘‘সরকার পড়ুয়া-শিক্ষক সংক্রান্ত অনুপাত সামলানোর যে বদলি-নীতি করেছে, তার বাইরে গিয়েও বদলি করা হচ্ছে।’’
শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, “বদলির ধারা নিয়ে কোনও মামলা বা স্থগিতাদেশ নেই। ওই আইন মেনে কোনও বদলি হতে গিয়ে আদালতে মামলা হতেই পারে। একটা নির্দিষ্ট বদলি নিয়ে মামলা হতে পারে, স্থগিতাদেশ হতে পারে। কিন্তু সার্বিক বদলি নিয়ে কোনও স্থগিতাদেশের কথা আমাদের জানা নেই।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)