Advertisement
E-Paper

দু’ঘণ্টা পরে শুরু উদ্ধার, উঠছে প্রশ্ন

দুর্ঘটনার দু’ঘণ্টা পরেও উদ্ধারের কাজ কার্যত শুরুই করতে পারেনি প্রশাসন। এবং তার জেরেই ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। মুর্শিদাবাদের ওই সেতু থেকে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে দৌলতাবাদ থানা।

শুভাশিস সৈয়দ ও সামসুদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:০৩
প্রাণহীন: ভেসে উঠল দেহ। সোমবার মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদের বালির ঘাটে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

প্রাণহীন: ভেসে উঠল দেহ। সোমবার মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদের বালির ঘাটে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

বাসটা যখন সেতু থেকে পড়ে, বিলের জলে মাছ-ধরা নৌকা ছিল খান তিন-চারেক। তাই প্রাণে বেঁচেছেন জনা তেরো।

কিন্তু দুর্ঘটনার দু’ঘণ্টা পরেও উদ্ধারের কাজ কার্যত শুরুই করতে পারেনি প্রশাসন। এবং তার জেরেই ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। মুর্শিদাবাদের ওই সেতু থেকে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে দৌলতাবাদ থানা। ফলে, পুলিশ এসে গিয়েছিল কিছুক্ষণের মধ্যেই। সেতুর ভাঙা জায়গা তারা বাঁশ দিয়ে ঘিরেও দেয়। কিন্তু ওই পর্যন্তই।

বাসটি ভাণ্ডারদহ বিলের প্রায় মাঝামাঝি পড়ায় কী ভাবে উদ্ধারে নামা যাবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতেই বেশ সময় লাগিয়ে দেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। বাসটি জল থেকে টেনে তুলতে প্রথমেই ক্রেনের ব্যবস্থা করা দরকার ছিল। বহরমপুরের এক বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে দু’টি ক্রেন চাওয়া হয়। কিন্তু যেখানে সকাল ৭টা নাগাদ দুর্ঘটনা ঘটেছে, বেলা ৯টা পর্যন্ত কোনও ক্রেন এসে পৌঁছয়নি।

এলাকার মানুষ যখন নৌকা নিয়ে, জলে নেমে, ছুটোছুটি করে বাসের যাত্রীদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন, প্রশাসনের বিলম্বিত লয় দেখে তাঁদের মেজাজ সপ্তমে চড়ে। বেলা ৯টার পর পুলিশের সঙ্গে তর্কাতর্কি শুরু হয়ে যায় জনতার। কয়েক হাজার লোক মারমুখী হয়ে পুলিশকে তাড়া করে। ইটবৃষ্টিতে জখম হন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) অনীশ সরকার এবং দুই সংবাদকর্মী। ধাক্কাধাক্কিতে আহত হন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিরুপম বিশ্বাস। পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে পাল্টা তাড়া করলে আগুনে ঘি পড়ে। সিআই (সদর)-এর গাড়িতে আগুন লাগানো হয়। বহরমপুর থেকে আসা দমকলের ইঞ্জিন ভাঙচুর হয়। আগুন দেওয়া হয় ডোমকল পুরসভার একটি গাড়িতে। টোলগেটে লুঠপাট হয়।

এই সব পর্ব শেষ হওয়ার পরে বেলা ১১টা নাগাদ বহরমপুর থেকে প্রথম ক্রেন আসে। পরে জঙ্গিপুর থেকে জাতীয় সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা এক সংস্থার দু’টি ক্রেন পাঠানো হয়। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, গোলমালের জেরেই উদ্ধার কাজে দেরি হয়েছে। তা মোটেই বাঞ্ছনীয় ছিল না। ঘনিষ্ঠদের কাছে তাঁর আক্ষেপ ছিল, জনা কয়েকের প্ররোচনায় যে গন্ডগোল বাধে উদ্ধারকাজ পিছিয়ে গিয়েছিল তাতেই। ফল ভুগতে হল দুর্ঘটনাগ্রস্ত পরিবারগুলিকেই। তিনি বলেন, ‘‘এটা বোধহয় কাম্য ছিল না।’’ মনে করান, ‘‘পাশাপাশি জেলার যে পুলিশ অফিসার জখম হয়েও ঘটনাস্থল ছাড়েননি, তার প্রশংসাও করতে হবে।’’ কিন্তু বিপর্যয় মোকাবিলায় জেলার নিজস্ব বাহিনী কতটা দক্ষ, সেই প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে। কেন না, জেলার বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী সকালেই কাজে নেমেছিল। কিন্তু বিশেষ সুবিধে করতে পারেনি। মুর্শিদাবাদে সরকারি ডুবুরি নেই। কৃষ্ণনগর থেকে ছয় ডুবুরি আসেন দুপুর ১টায়। তাঁরাই জলে নেমে বাস তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু একাধিক বার রশি ছেঁড়ে। বেলা পৌনে ১১টা নাগাদ নদিয়ার হরিণঘাটা থেকে রওনা দিয়েছিল ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স। ৪৮ জনের দলটি এসে পৌঁছয় দুপুর ৩টে নাগাদ। তার পরেই প্রকৃত অর্থে উদ্ধারকাজ শুরু হয়।

Murshidabad Bus Accident Rescue Operation মুর্শিদাবাদ দৌলতাবাদ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy