জন্মদিনের সফরে। — রবিন রাই
সাদা ক্রিমের উপরে লাল রঙের চেরি। চেরির ঘেরাটোপে ইংরেজিতে লেখা ১৩৬।
১৩৬ বছর আগের এক সকালেই শিলিগুড়ি থেকে ছাড়া প্রথম টয়ট্রেন কার্শিয়াং পৌঁছেছিল। দিনটা ছিল ২৩ অগস্ট। তারপর থেকে প্রতি বছরই ২৩ অগস্টকে টয়ট্রেন তথা দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের (ডিএইচআর) জন্মদিন হিসেবে উদযাপন করছে রেল। মঙ্গলবারও দার্জিলিং স্টেশনে টয় ট্রেনের জন্মদিন পালন করা হয় কেক কেটে। সেই কেকের স্বাদ যেমন নিয়েছেন, তেমনই ছবি মোবাইলে তুলে নিয়েছেন পর্যটক-স্কুল পড়ুয়ারা। জন্মদিন উপলক্ষে স্কুল পড়ুয়াদের জন্য টয়ট্রেনের বিশেষ জয় রাইড চালায় রেল কর্তৃপক্ষ। ট্রেন সাজানো হয় রঙিন কাগজ, বেলুন দিয়ে।
১৮৮০-র ২৩ অগস্ট যে টয় ট্রেন চলেছিল তা পণ্যবাহী। প্রথমে সমতল থকে পাহাড়ে পণ্য নিয়ে যাওয়ার জন্যই টয়ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা হয়। পরবর্তীতে শুরু হয় যাত্রী পরিবহণ। দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে বিপুল জনপ্রিয়তা পায় এই ট্রেন। ডিএইচআরের পরিকাঠামো নিয়ে সম্প্রতি রেল এবং ইউনেস্কো যৌথ সমীক্ষা শুরু করেছে। এ দিন দার্জিলিং স্টেশনে অনুষ্ঠানে ইউনেস্কোর প্রতিনিধি পল আটকিন্স দাবি করেন ডিএইচআর স্বাধীন সংস্থা হিসেবে কাজ না করলে অভিযোগ সমস্যা মেটানো যাবে না। তিনি বলেন, ‘‘ডিআইএইচআরকে সিদ্ধান্তের জন্য অন্য কোনও কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভর করলে হবে না। স্বসাশিত হতে হবে। সংস্থায় দক্ষ কর্মীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ইঞ্জিন-রেক মেরামত সংস্কারের জন্য নতুন কেন্দ্র গড়তে হবে।’’ ডিআইচআরের তরফে দাবি করা হয়েছে, সব পদক্ষেপই চলছে। সংস্থার অধিকর্তা এম ডি ভুটিয়া বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই সংস্থার কার্শিয়াঙের অফিসের পরিকাঠামো বাড়ানো হয়েছে। এটিকে স্বশাসনের একটি উদাহরণ বলা যেতে পারে। দক্ষ কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়াও চলছে।’’
এ দিনের অনুষ্ঠানে টয় ট্রেনের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এখন ধসের জন্য শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং যাত্রীবাহী টয়ট্রেন চলাচল বন্ধ। দার্জিলিং থেকে ঘুম, কার্শিয়াং পর্যন্ত কয়েকটি জয়রাইড এবং বিশেষ ট্রেন চলছে। দার্জিলিং স্টেশনের উৎসবে উপস্থিত ছিলেন ইউনেস্কোর প্রতিনিধিরা। টয় ট্রেনের রক্ষণাবেক্ষণ এবং দক্ষ কর্মীর অভাবের সমস্যা তুলে অনুষ্ঠানেই নানা প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁরা। অনুষ্ঠানে তাঁদের সামনেই নানা অভিযোগ তোলেন স্থানীয় ট্যুর অপারেটরেরা।
তাঁদের বক্তব্য, ধস ছাড়াও কখনও ইঞ্জিন খারাপ, কখনও বা রেকের যন্ত্রাংশ বিকল এমন নানা কারণে মাঝেমধ্যেই টয় ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকবার পর্যটকদের নিয়ে পাহাড়ি জঙ্গল পথে থেমে থেকেছে টয় ট্রেন। ইঞ্জিন খারাপ হলেও দীর্ঘ সময় পর্যন্ত মেরামতি করা হয়নি। যাত্রীদের মাঝপথে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া, যন্ত্রাংশ বারবার জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করে চালানোর জন্য লাইনচ্যুতও হয়েছে ট্রেনের কামরা। উৎসবের মধ্যেই এমনই নানা অভিযোগ উঠে আসায় অস্বস্তিতে রেল কর্তৃপক্ষ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত যাত্রীদের মন্তব্য, ‘‘রেলের আশ্বাস বাস্তবায়িত হলে সেটাই হবে পর্যটকদের কাছে সংস্থার জন্মদিনের প্রতি উপহার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy