Advertisement
E-Paper

রবীন্দ্রনাথের কথায় ইন্ধন সন্ত্রাসে, অভিযোগ

ভোট করানো’ নিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের বিতর্কিত মন্তব্যের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কোচবিহারে বিরোধীদের ভোট-প্রচারে বাধা দেওয়ায় অভিযোগ উঠল শাসক দলের বিরুদ্ধে। মালদহের ইংরেজবাজার, উত্তর ২৪ পরগনার নিমতা, এমনকী, খাস কলকাতা পুরসভার ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের শহিদ-স্মৃতি এলাকাতেও উঠেছে একই অভিযোগ। ফলে, সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো বিরোধীদের অনেকেই ঘটনাগুলিকে ‘রবীন্দ্রনাথ-এফেক্ট’ বলে কটাক্ষ করতে শুরু করেছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩২

ভোট করানো’ নিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের বিতর্কিত মন্তব্যের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কোচবিহারে বিরোধীদের ভোট-প্রচারে বাধা দেওয়ায় অভিযোগ উঠল শাসক দলের বিরুদ্ধে। মালদহের ইংরেজবাজার, উত্তর ২৪ পরগনার নিমতা, এমনকী, খাস কলকাতা পুরসভার ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের শহিদ-স্মৃতি এলাকাতেও উঠেছে একই অভিযোগ। ফলে, সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো বিরোধীদের অনেকেই ঘটনাগুলিকে ‘রবীন্দ্রনাথ-এফেক্ট’ বলে কটাক্ষ করতে শুরু করেছেন। বিরোধীদের উপরে ‘হামলা’য় প্রশাসনের মদত ছিল কি না, কেটেছেন সে টিপ্পনীও।

রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায় অবশ্য শনিবার জানান, রবীন্দ্রনাথবাবুর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রচারমাধ্যমে দেখে তিনি নিজেই জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলে রিপোর্ট চেয়েছেন। নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগে রবীন্দ্রনাথবাবুকে নোটিসও পাঠানো হয়েছে কমিশনের তরফে।

কোচবিহার সদরে শুক্রবার জেলার তৃণমূল প্রার্থী, কর্মী এবং দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সামনে রবীন্দ্রনাথবাবু বলেছিলেন, ‘‘হাত জোড় করে বলছি, সবাই মিলে এক সঙ্গে এককাট্টা হয়ে জোড়া ফুল চিহ্নে ভোটটা দেবেন এবং ভোটটা করাবেন। ভোটটা করার জন্য প্রশাসনিক এবং অন্য যে সব মদত প্রয়োজন হবে, প্রত্যেকটা করব। পঞ্চায়েতে করেছি, লোকসভায় করেছি। যে কোনও মদত করব। কিন্তু জিততে হবে। জেতার জন্য যা-যা দরকার তাই-তাই করতে হবে।’’ তাঁর ওই মন্তব্যের পরে বলতে উঠে পার্থবাবু স্পষ্ট করে দেন, কোনও প্রশাসনিক মদত তাঁরা দেবেন না। মন্ত্রী হিসেবে পার্থবাবু ঠিক করেছেন বলে মানলেও বিরোধীরা বলতে শুরু করেন, ‘‘পুলিশ-প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে শাসক দল গণতন্ত্রকে প্রহসনে পরিণত করতে চাইছে।’’

শুক্রবার রাতেই তুফানগঞ্জ পুরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী সুব্রত বসাককে তৃণমূল কর্মীরা হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ বিজেপির। দলের জেলা সম্পাদক নিখিলরঞ্জন দে-র দাবি, ‘‘আমাদের ওই প্রার্থীকে শাসক দলের লোকেরা বলেছে, তিনি ভোটে লড়ছেন না—এই মর্মে লিফলেট বিলি করতে হবে। না হলে বিপদ হবে। গোটাটাই রবীন্দ্রনাথ ঘোষের উস্কানিমূলক মন্তব্যের ফল।’’ বামেদের অভিযোগ, রবীন্দ্রনাথ ঘোষের মন্তব্য জানাজানি হতেই দিনহাটায় ২ নম্বর ওয়ার্ডে তাদের কর্মীদের উপরে হামলা করে তৃণমূল। রাতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাম-কর্মীদের হুমকি দেওয়া হয়। ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ, সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহানন্দা সাহারা পরিস্থিতির জন্য আঙুল তুলেছেন জেলা তৃণমূল সভাপতির দিকেই। উদয়নবাবুর মন্তব্য, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটের আগে বীরভূমে জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ‘পুলিশকে বোম মারুন’ বলে দলীয় কর্মীদের উৎসাহ দেওয়ার পরেই যেমন তেতে উঠেছিল পাড়ুই, আমাদের আশঙ্কা, এখানেও তেমনই হতে চলেছে তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতির সৌজন্যে।’’ বিরোধীদের কোনও অভিযোগই অবশ্য মানেনি তৃণমূল।

বামেদের পক্ষ থেকে এ দিন মহকুমাশাসককে (কোচবিহার সদর) স্মারকলিপি দেওয়া হয়। মহকুমাশাসক বিকাশ সাহা জানান, রবীন্দ্রনাথবাবুকে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের যে নোটিস পাঠানো হয়েছে, তার জবাব চাওয়া হয়েছে কাল, সোমবারের মধ্যে। রবীন্দ্রনাথবাবুর ব্যাখ্যা হাতে পাওয়ার পরে কমিশনের আইন মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রবীন্দ্রনাথবাবু অবশ্য জানান, রাত পর্যন্ত তিনি ওই নোটিস হাতে পাননি। বলেন, “নোটিস হাতে পাওয়ার পরে জানিয়ে দেব, আমার বক্তব্যের ভুল মানে করা হচ্ছে।” তাঁর দাবি, “বাম আমলে জেলায় যে ভাবে সন্ত্রাস হতো, তা তৃণমূলের জমানায় আর হয় না। সন্ত্রাস রুখতে আমরা প্রশাসনিক মদত অর্থাৎ সাহায্য চেয়েছি। সেটা পঞ্চায়েত, লোকসভা ভোটেও চেয়েছিলাম। প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে সবাইকে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করবে, এমনটাই বোঝাতে চেয়েছি।”

বিরোধীরা অবশ্য রবীন্দ্রনাথবাবুর ব্যাখ্যা মানছেন না। শুক্রবার রাতে পুরাতন মালদহ পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ঘোষপাড়ায় সিপিএমের নির্বাচনী কার্যালয়ে আগুন লাগানো এবং এ দিন সকালে ওই ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী পলাশ ঘোষকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ইংরেজবাজার পুরসভার ৮ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি কর্মীদের ফেস্টুন, ব্যানার টাঙাতে বাধা দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি, বিজেপির জেলা সভাপতি শিবেন্দুশেখর রায়ের ক্ষোভ, ‘‘কোচবিহারে রবীন্দ্রনাথ ঘোষের মন্তব্যের প্রভাব আমাদের জেলাতেও পড়েছে বলেই মনে হচ্ছে।’’ অভিযোগ মানেননি তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন। পুরাতন মালদহের দু’টি ঘটনার লিখিত অভিযোগ পেয়ে তদন্ত করছে পুলিশ।

উত্তর দমদম পুরসভার ৩১টি ওয়ার্ডেই তৃণমূল ভয় দেখাচ্ছে অভিযোগে এ দিন উত্তর ২৪ পরগনার নিমতা থানার সামনে বিক্ষোভ দেখান সিপিএমের নেতা-কর্ম়ীরা। শুক্রবার রাতে ওই পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থীর বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেওয়া, ওই রাতেই ভাটপাড়া পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থীর বাড়িতে হামলা চালানো, কলকাতা পুরসভার ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডে বামেদের পতাকা-ফেস্টুন ছেঁড়া, বাম সমর্থকদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘দলের নেতা রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে শুক্রবার ভোট করানোয় প্রশাসনিক মদত দেওয়ার কথা বলতে শুনে হয়তো উজ্জীবিত বোধ করছেন তৃণমূলের লোকেরা। এ সব ঘটনাগুলোকে রবীন্দ্রনাথ-এফেক্ট বলা যেতে পারে।’’ একই সুরে বিজেপির বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথবাবুর মাধ্যমে ভোট করানো নিয়ে দলের লোকেদের স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে তৃণমূল। প্রশাসনও নিষ্ক্রিয় থাকছে। তাই এ সব হচ্ছে।’’ কান্তিবাবু জানান, কলকাতার ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডে শাসক দলের হামলা ঠেকাতে শনিবার থেকে রাতপাহারার ব্যবস্থা করতে চান তাঁরা।

Rabindranath ghosh Coochbehar TMC district president election violence state news rabindranath effect
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy