মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর রবীন্দ্রনাথ ঘোষ জেলায় ফিরতেই কোচবিহারে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের স্থায়ী শাখা অফিস ভবন তৈরির তোড়জোড় শুরু করে দিল প্রশাসন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের স্থায়ী অফিস ভবনের জন্য জমি বাছাই করার প্রক্রিয়া গত কয়েকদিন ধরেই চলছিল। সরকারি মালিকাধীন একাধিক ফাঁকা জমির অবস্থান সহ বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করা হয়। তবে কোন জমিতে ভবন করা হবে তা নিয়ে দোলাচল চলছিল। ওই প্রক্রিয়ার মধ্যেই মন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর শনিবার প্রথমবার জেলায় ফিরলেন রবীন্দ্রনাথবাবু।
এ দিন উত্তরের সাত জেলায় সমান উন্নয়নে জোর দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি কোচবিহারে দফতরের স্থায়ী অফিস ভবন তৈরির ব্যাপারে নিজের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে কোচবিহারের সদর মহকুমা শাসকের বাংলো লাগোয়া জমি অফিস তৈরির জন্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরকে হস্তান্তর করা হবে বলেও মোটামুটি চূড়ান্ত হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে ওই জমির ব্যাপারে সব কিছু তথ্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের কর্তাদের জানানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জমিটি পচ্ছন্দ হয়েছে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পরে সরকারিভাবে ওই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হতে পারে।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “কোচবিহারে দফতরের স্থায়ী অফিস ভবন তৈরি করা হবে। জেলাশাসক এর জন্য জমির খোঁজ করছেন। তিনি সদর মহকুমা শাসকের বাংলোর কাছে ওই ভবন তৈরির জন্য জমিও দেখেছেন।” কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেন, “ সদর মহকুমা শাসকের বাংলোর লাগোয়া এলাকায় জমি রয়েছে। খুব দ্রুত ওই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
প্রশাসন সূত্রেই জানা গিয়েছে, তবে আপাতত কোচবিহার জেলায় দফতরের কাজকর্ম চালাতে যাতে সমস্যা না হয় সেজন্য জেলাশাসকের দফতর লাগোয়া ল্যান্সডাউন হলে অস্থায়ী অফিস চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই অফিস সাজানোর কাজ অনেকটা এগিয়েছে। সেখানে কত জন ইঞ্জিনিয়র বা কর্মী থাকবেন সেসব নিয়েও রূপরেখা তৈরির কাজ এগোচ্ছে। এমনকি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী কতদিন সেখানে বসবেন সেসব ব্যাপারেও প্রশাসনের অন্দরে আলোচনা শুরু হয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য ওই ব্যাপারে বাঁধাধরা রুটিনের পক্ষপাতী নন। এ নিয়ে রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “কলকাতা ও শিলিগুড়িতে অফিস রয়েছে। অন্য জেলাতেও অফিস আছে। আমি সাত জেলাতেই ঘুরব। প্রতিটি জেলাতেই সমানভাবে উন্নয়ন করতে চাইছি। যতটা সময় লাগবে ততটাই দেব।”
উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে একাধিক পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, “কৃষিভিত্তিক শিল্পায়নের ব্যাপক সুযোগ উত্তরবঙ্গে রয়েছে। সে দিকে জোর দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে প্রত্যেকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। এরপরেই সিদ্ধান্ত হবে। আমি মনে করি এটা করা গেলে উত্তরবঙ্গে কর্মসংস্থানের সুযোগ অনেক বাড়বে।” পর্যটকদের কাছে উত্তরবঙ্গের আকর্ষণ বাড়ানোর ব্যাপারেও জোর দিয়েছেন তিনি। রবীন্দ্রনাথবাবু জানান, সাত জেলার প্রতিটি শহর এলাকা অত্যাধুনিক এলইডি আলোয় সাজান, রাস্তা সম্প্রসারণ, সবুজায়ন, পানীয় জলের পরিষেবা আরও উন্নত করা হবে। সাত জেলার সংস্কৃতি প্রসারেও নানা পরিকল্পনা নেওয়া হবে। রাজ আমলের ঐতিহ্যবাহী কোচবিহার শহরে আর্ট গ্যালারি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
উত্তরের সাত জেলা ঘুরে উন্নয়নের তদারকির ব্যাপারেও নিজের মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। জেলায় জেলায় ঘুরে প্রকল্পের কাজ খতিয়ে দেখার ব্যাপারেও পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “ কাজের গুণগতমান নিয়ে কোনও আপস করা হবে না।”