Advertisement
E-Paper

রাজ্য জুড়ে জাল মার্কশিট চক্র ফাঁস

মার্কশিট জাল, শংসাপত্র জাল। যে সংস্থা মোটা টাকার বিনিময়ে এ সব দিয়েছে, সেটাও ভুয়ো। উত্তীর্ণ প্রার্থীদের করেসপনডেন্স কোর্স-এ মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিকের মার্কশিট ও শংসাপত্র দেওয়ার কোনও সরকারি অনুমোদন সংস্থাটির ছিল না।

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৫৫

মার্কশিট জাল, শংসাপত্র জাল। যে সংস্থা মোটা টাকার বিনিময়ে এ সব দিয়েছে, সেটাও ভুয়ো। উত্তীর্ণ প্রার্থীদের করেসপনডেন্স কোর্স-এ মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিকের মার্কশিট ও শংসাপত্র দেওয়ার কোনও সরকারি অনুমোদন সংস্থাটির ছিল না। যদিও সংস্থাটি এমনটাই দাবি করে প্রার্থী পিছু দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকা নিত। অর্থাৎ পুরোটাই জালিয়াতি। কিন্তু যাতে সন্দেহ না হয়, সেই জন্য লোক দেখানো কোচিং এবং পরীক্ষাও নেওয়া হতো।

এই ভাবে ২০১৩ থেকে ২০১৫— এই দু’বছরে রাজ্যের কয়েক হাজার পরীক্ষার্থী ওই সংস্থাটির কাছে প্রতারিত হয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে গোয়েন্দারা জেনেছেন। অর্থাৎ প্রতারণা ও জালিয়াতির অঙ্কটা কোটি কোটি টাকার।

মঙ্গলবার বেহালার জেমস লং সরণির অফিস থেকে সংস্থাটির কর্ণধার অশোক বসু রায়কে সিআইডি গ্রেফতার করেছে। তার বাড়ি চুঁচুড়ায়। সংস্থাটির নাম ‘গ্বালিয়র বোর্ড অব সেকেন্ডারি এডুকেশন’।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, সংস্থাটি মধ্যপ্রদেশ সরকারের শিক্ষা দফতর ও কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ মন্ত্রকের অনুমোদিত বলে দাবি করে বিজ্ঞাপন দিত। যদিও গোয়েন্দারা খোঁজ নিয়ে দেখেছেন, সে সবই মিথ্যে। আগ্রহী প্রার্থীদের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করার জন্য সংস্থাটি তাদের ওয়েব সাইটে বহু সরকারি আধিকারিকের ছবি-সহ তাদের ভুয়ো শংসাপত্র আপলোড করত। বিজ্ঞাপন ও সাইটে বলা হতো— মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ না করলেও চাকরির সুযোগ।

তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, এমন টোপে যাঁরা প্রভাবিত হতেন, সেই আগ্রহী প্রার্থীদের যোগাযোগ করতে বলা হতো জেমস লং সরণির ওই অফিসে। প্রথমেই উৎসাহীদের কাছ থেকে দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকা জমা নেওয়া হতো। তার পর ওই প্রার্থীদের হুগলি, বর্ধমান, বীরভূম জেলার বিভিন্ন জায়গায় কোচিং দেওয়া হতো। লোক দেখানো কোচিংয়ের পর ভুয়ো সেন্টারে নেওয়া হতো লোক দেখানো পরীক্ষা। সেই সব ‘সেন্টার’-এর মধ্যে ছিল কলকাতাও।
সাজানো ওই পরীক্ষায় পাশ করিয়ে ১৫ দিনের মধ্যেই জাল মার্কশিট ও শংসাপত্র তুলে দেওয়া হতো ‘উত্তীর্ণ’-দের হাতে।

গোয়েন্দারা প্রাথমিক ভাবে জেনেছেন, বেশ কয়েক জন ওই জালিয়াত সংস্থাটির দেওয়া ভুয়ো শংসাপত্র দাখিল করেছেন সরকারি চাকরির আবেদন ও পরীক্ষার সময়ে। এমনকী, কারও কারও পাসপোর্টের আবেদনের সঙ্গেও ওই ভুয়ো নথি জমা পড়েছে। এবং এঁদের একাংশ নাকি চাকরি ও পাসপোর্ট পেয়েও গিয়েছেন। ধৃত অশোককে জেরা করে ওই সব ‘উত্তীর্ণ’-দের নাম জানার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা।

কী ভাবে জানা গেল চক্রের কথা?

গত বছর পদোন্নতির জন্যে রাজ্য সরকারের এক গ্রুপ-ডি কর্মী তাঁর নিজের দফতরে করেসপনডেন্স কোর্সে মাধ্যমিক পাশের একটি শংসাপত্র জমা দেন। যা ছিল ‘কাউন্সিল ফর এডুকেশন’ নামে সংস্থার দেওয়া। কিন্তু দফতরের অফিসারদের সন্দেহ হয়। তাঁরা যোগাযোগ করেন রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদে। তখন পর্ষদ খোঁজ নিতে বলে সিআইডি-কে। প্রাথমিক ভাবে দেখা যায়, সংস্থাটি ভুয়ো। গত বছর ওই ভুয়ো সংস্থার তিন কর্তাকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে আরও কয়েকটি ভুয়ো সংস্থার কথা জানা যায়। যাদের অন্যতম অশোক বসু রায়ের সংস্থাটি। গত বছর হইচই হওয়ায় তারা পাততাড়ি গুটিয়ে নেয়। কিন্তু সিআইডি-র দাবি, কিছু দিন ধরে সংস্থাটি ফের সক্রিয় হয়েছিল।

Fake Marksheet Racket Arrest Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy