Advertisement
E-Paper

পার পাবেন না কেষ্ট, চ্যালেঞ্জ রাহুলের

তাঁরা ক্ষমতায় এলে যে পার পাবেন না অনুব্রত মণ্ডল, সে কথা অনুব্রতরই খাসতালুকে দাঁড়িয়ে জানিয়ে দিলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ! বললেন, “বিজেপির শক্তি বৃদ্ধিতে তৃণমূল শঙ্কিত। বিজেপি ক্ষমতায় এলে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে। অনুব্রত পার পাবেন না! তাঁর শাস্তি হবে।”

মহেন্দ্র জেনা

শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:১৬
পাড়ুইয়ের জনসভায়। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

পাড়ুইয়ের জনসভায়। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

তাঁরা ক্ষমতায় এলে যে পার পাবেন না অনুব্রত মণ্ডল, সে কথা অনুব্রতরই খাসতালুকে দাঁড়িয়ে জানিয়ে দিলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ! বললেন, “বিজেপির শক্তি বৃদ্ধিতে তৃণমূল শঙ্কিত। বিজেপি ক্ষমতায় এলে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে। অনুব্রত পার পাবেন না! তাঁর শাস্তি হবে।”

যে জায়গায় দাঁড়িয়ে বীরভূমের দাপুটে তৃণমূল সভাপতিকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি, সেই পাড়ুই বরাবরই অনুব্রত ওরফে কেষ্ট মণ্ডলের শক্ত ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত। শুধু তাই নয়, এই জেলায় তৃণমূলের যে ধারাবাহিক ভাঙন শুরু হয়েছে, তার শুরু পাড়ুই থেকেই হয়েছে বলে দাবি করেন রাহুল। এক ধাপ এগিয়ে বুধবার পাড়ুইয়ে ‘খুন-সন্ত্রাস-হিংসা বিরোধী শান্তি’ সভায় তাঁর মন্তব্য, “এই পাড়ুই থেকেই তৃণমূলের পতন শুরু। তৃণমূলের বিদায় ঘণ্টা বেজে গিয়েছে!”

বস্তুত, এ দিনের সভায় আগাগোড়াই রাহুল ছিলেন আক্রমাণাত্মক। তৃণমূল দল তো বটেই, আরও নির্দিষ্ট করে অনুব্রতর বিরুদ্ধে বারবার তোপ দেগেছেন তিনি। তিনি বলেন, “সিপিএমের শহিদ বেদি হয়েছিল নন্দীগ্রাম। তৃণমূলেরও যাত্রা শেষ। অনুব্রত শেষ অভিনয় করে নিক। অনুব্রতকে সতর্ক করছি, পুলিশকে বোমা মারতে, মানুষকে বোমা মারতে বলা- আইনকে বুড়ো আঙুল দেখানোক্ষমতায় এলে আমরা কিন্তু ছেড়ে কথা বলব না।” তবে অনুব্রতকে আক্রমণ করে এ দিন সভার মূল সুরটি রাহুল আসার আগেই বেঁধে দেন গত লোকসভায় বীরভূম কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমি অনুব্রতকে বলব, রত্নাকরের মতো আপনারও পাপের কেউ ভাগীদার হবেন না। পুণ্য সঞ্চয় করুণ। দল আপনাকে রেড কার্ড দেখাবে!”

অনুব্রতর প্রতিক্রিয়া মেলেনি। এ দিন তাঁকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, “মিটিংয়ে ব্যস্ত আছি। পরে করুন।” তার পরে আর তিনি ফোন ধরেননি।

এ দিন পাড়ুইয়ের সভামঞ্চে রাহুল ছাড়াও ছিলেন বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকার, জয়প্রকাশ মজুমদার, জয় বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল প্রমুখ। হাজির করানো হয়েছিল জেলায় ‘তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের’ হাতে ‘আক্রান্ত’ দলের কর্মী-সমর্থক ও তাঁদের পরিবারকে। ছিলেন বীরভূমে বিজেপি-র রাজনৈতিক শহিদ সেখ রহিম, শেখ এনামুল ও শেখ তৌসিফের পরিবারের সদস্যেরাও। রাহুলের বক্তৃতা দেওয়ার কথা ছিল এ দিন বিকেল ৩টে থেকে। দুপুর দুটো থেকেই পাড়ুই বাজার সংলগ্ন মাঠে কাতারে কাতারে বিজেপি কর্মী-সমর্থক জমা হন। অনুব্রত-বিরোধী প্রতিটি বক্তব্যেই হাততালি দিয়ে সমর্থন জানিয়েছে উপচে পড়া ভিড়। যা দেখে রাহুল বলেন, “এত মানুষের জমায়েত বলে দিচ্ছে, এখানে বিজেপি কী ভাবে বাড়ছে।”

মাখড়ায় নিহত তৌসিফের বাবা ও এলাকার বাসিন্দাদের
সঙ্গে কথা বলছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ।

সভা চলাকালীন দুধকুমার মণ্ডলের কাছে খবর আসে, শান্তিসভায় যোগ দিতে আসা পাড়ুই থানা এলাকার বিভিন্ন অঞ্চলের বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের উপরে হামলা হচ্ছে। তিনি জনসভায় বিষয়টি ঘোষণা করা মাত্রই উপস্থিত জনতা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তাঁদের শান্ত হতে বলেন দলের রাজ্য সভাপতি। দুধকুমার মাইক হাতে বলেন, “হামলা চালিয়ে আমাদের রোখা যাবে না।” ইমাদপুরে এ দিন বিজেপি-তৃণমূল যে সংঘর্ষ হয়েছে, সেই ঘটনায় পাড়ুই থানায় ৪০ জন তৃণমূল নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে বিজেপি। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন পাড়ুইয়ের তৃণমূল নেতা মোস্তাক হোসেন ও তাঁর ভাগ্নে সিরাজুল শা।

এ দিনের সভার ঠিক ১৬ দিন আগে মাখড়া গ্রামে ঘটেছিল বিজেপি-তৃণমূল রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। মৃত্যু হয়েছিল তিন জনের। তারও আগে চৌমণ্ডলপুরে বোমা উদ্ধারে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন পাড়ুই থানার ওসি। যার পরে তল্লাশির নামে চৌমণ্ডলপুরে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। এ দিন সেই মাখড়া ও চৌমণ্ডলপুরের হাজার খানেক মানুষ হাজির ছিলেন সভায়। দিন কয়েক আগেই ওই এলাকা থেকে রাহুল সিংহদের ফিরতে হয়েছে পুলিশের বাধায়। বিজেপি-র পরই ওই দুই গ্রামে গিয়েছিলেন সিপিএমের রাজ্য প্রতিনিধিরাও। রাহুল সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, “সিপিএম নেতাদের মোক্ষম জবাব দিয়েছে ওই এলাকার বাসিন্দারা। আমরা ওই গ্রামে ত্রাণ নিয়ে গেলে আমাদের পুলিশ গ্রেফতার করে। সেই দিনই দেখেছিলাম, এলাকার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা। সন্ত্রাস কবলিত গ্রামের মানুষ সে দিন আমাদের পুলিশ ভ্যানে নিয়ে যাওয়া আটকে দিয়েছিল। মনে রাখবেন, পাড়ুই থেকে তৃণমূলের শেষযাত্রা শুরু হয়েছে।”

সভা শেষে বিজেপির রাজ্য নেতারা মাখড়া গ্রামে নিহত বিজেপি সমর্থক তৌসিফের বাড়িতে যান। কথা বলেন তাঁর পরিবারের সঙ্গে। পাশে থাকার আশ্বাস দেন। গ্রামবাসীরা বিজেপি-র নেতৃত্বকে এলাকায় তৃণমূল কর্মীদের অত্যাচারের কথা সবিস্তার বলেন। গ্রামের তপ্ত পরিস্থিতির কথাও জানান। সেখান থেকে বিজেপি নেতারা যান সুলতানপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। এখানেই তখন ভর্তি ছিলেন এ দিন ইমাদপুরের সংঘর্ষে আহত হরিশপুরের বাসিন্দা সেখ আনারুল-সহ ছ’জন বিজেপি কর্মী। জানতে চান অভিযুক্তদের প্রসঙ্গে।

আনারুল দলের নেতাদের বলেন, “জনসভায় যোগ দিতে যাচ্ছিলাম। ইমাদপুরের কাছে তৃণমূলের লোক গুলি চালায় আমাদের দিকে।” আহত হয়েছেন কেন্দুয়ার বাসিন্দা, বিজেপি সমর্থক সেখ আলাই। তিনিও অভিযোগ করেন, “তৃণমূলের সিরাজুলের নেতৃত্বে শেখ ধুলো, শেখ রফি, শেখ রিপন, শেখ আকবর আমাদের উপর আক্রমণ করে।” যদিও তৃণমূল এই অভিযোগ মানতে চায়নি। পাড়ুইয়ের তৃণমূল নেতা মোস্তাক হোসেনের পাল্টা অভিযোগ, “ইমাদপুর পুরোপুরি তৃণমূল প্রভাবিত। বিজেপি-র সশস্ত্র লোকজনই এ দিন ইমাদপুর দখলের উদ্দেশ্যে এসেছিল। তাদের সেই উদ্দেশ্য অবশ্য সফল হয়নি। রাজু ডোম, সুকুমার ডোম ও নারায়ণ মুখোপাধ্যায় নামে তিন তৃণমূল কর্মী বিজেপির হামলায় আহত হয়েছেন।”

mahendra jena parui Rahul Sinha BJP state news online state news parui case TMC state government challenge
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy