Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ধন্দ রেখে বনগাঁ শাখায় সম্মতি উড়ালপুলে

একরাশ প্রশ্নকে সামনে রেখেই বনগাঁ লাইনে রেল-উড়ালপুল তৈরির ছাড়পত্র দিল রেল বোর্ড। রেল সূত্রের খবর, দমদম জংশন স্টেশনের এক নম্বর লাইন থেকে একটি উড়ালপুল গিয়ে বাগজোলা খালের কাছে বর্তমান রেল লাইনে মিশবে।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:২৩
Share: Save:

একরাশ প্রশ্নকে সামনে রেখেই বনগাঁ লাইনে রেল-উড়ালপুল তৈরির ছাড়পত্র দিল রেল বোর্ড।

রেল সূত্রের খবর, দমদম জংশন স্টেশনের এক নম্বর লাইন থেকে একটি উড়ালপুল গিয়ে বাগজোলা খালের কাছে বর্তমান রেল লাইনে মিশবে। এর ফলে দমদমের ১ নম্বর থেকে বনগাঁ লাইনের ট্রেনগুলি একাধিক ক্রসিং না পেরিয়েই সোজা দমদম ক্যান্টনমেন্ট চলে যেতে পারবে। এই প্রকল্পেই দিল্লির সম্মতি মিলেছে।

রেলকর্তারা বলছেন, দমদমে রেল লাইনগুলি কার্যত জট পাকিয়ে রয়েছে। ফলে লোকাল, দূরপাল্লা, মালগাড়ি এক সঙ্গে এসে পড়ায় ট্রেনের গতি বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া বনগাঁ লাইনে যাওয়ার জন্য ক্রসিং পেরোতে হয় ট্রেনকে। সব মিলিয়েই তাই উড়াপুল তৈরির সিদ্ধান্ত, যার জন্য প্রায় ২৩০ কোটি টাকা খরচ করবে রেল মন্ত্রক।

রেলের দাবি, উড়ালপুল হয়ে গেলে লাইনের ক্রসিং পেরোতে সমস্যা কম হবে, দমদমে ট্রেন চলাচল সহজ ও মসৃণ হবে, ট্রেনের ভিড়ে প্ল্যাটফর্মও আটকে থাকবে না। কিন্তু উড়ালপুল তৈরি হলেও সমস্যা মিটবে কি না, নির্মাণ-পথে থাকা রেল কলোনি ও দখলদার উচ্ছেদ করে জমি পুনরুদ্ধার করা আদৌ সম্ভব কি না — তা নিয়ে সংশয়ে খোদ রেলকর্তারাই।

কেন? রেলের একাংশের ব্যাখ্যা, নকশা অনুযায়ী উড়ালপুলের ঢাল অত্যন্ত খাড়া ভাবে উঠবে। ফলে একটি ট্রেন দমদম জংশনের দিক থেকে উড়ালপুলে উঠে ক্যান্টনমেন্টের দিকে লাইনে না নামা পর্যন্ত পরের ট্রেনটি দমদম জংশনের প্ল্যাটফর্মে ঢুকতে পারবে না। কারণ, কোনও ভাবে আগের ট্রেনটি পিছনের দিকে গড়াতে শুরু করলে তা দমদমের প্ল্যাটফর্মের পয়েন্টে এসে ঠেকবে। সে ক্ষেত্রে প্ল্যাটফর্মে অন্য ট্রেন থাকলে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। সেই বিপদ এড়াতেই ট্রেন উড়ালপুলের ঢাল বেয়ে না নামা পর্যন্ত পয়েন্ট ক্লিয়ার করা যাবে না। বর্তমানে চালু সিগন্যালিং পদ্ধতি অনুযায়ী, পয়েন্ট ক্লিয়ার না হলে দমদম স্টেশনে ঢোকার সিগন্যাল লাল হয়ে থাকবে। ফলে পরের ট্রেনটি ওই সিগন্যালে আটকে থাকবে। ১ নম্বর দিয়ে মেন লাইনের ঘনঘন ট্রেন যায়। ফলে এক বার বনগাঁ লাইনের ট্রেন উড়ালপুলের পথ ধরলে পরের গাড়িগুলি ‘লেট’ করার সমূহ আশঙ্কা থাকছে।

তাঁদের আরও বক্তব্য, অতিরিক্ত খাড়াই হওয়ার কারণে উড়ালপুলে ওঠার সময় ট্রেনের গতি বেশ কম থাকবে। ধীরে ধীরে ট্রেনটি ক্যান্টনমেন্টের দিকে যাবে। তাই দমদম জংশনে তখন পয়েন্ট ক্লিয়ার হতে ৪-৫ মিনিট সময় লেগে যাবে।

প্রশ্ন আরও আছে। উড়ালপুলে সর্বোচ্চ ১২ কামরার ট্রেন উঠতে পারবে। এতে এখনই সমস্যা না হলেও ভবিষ্যতে তা হতে পারে বলে মনে করছেন রেল কর্তারাই। এক রেলকর্তার প্রশ্ন, ‘‘এক সময় ৯ কামরার ট্রেন চলত। এখন অনেক ট্রেনই ১২ কামরার হয়ে গিয়েছে। আগামী দিনে লোকের চাহিদা মেনে কামরা বাড়তে পারে। তখন এই উড়ালপুল কোন কাজে লাগবে?’’

উড়ালপুল নির্মাণের কাজ দ্রুত ও মসৃণ ভাবে করা যাবে কি না, তা নিয়েও ধন্দ রয়েছে রেলে। পূর্ব রেলের একাংশ জানাচ্ছেন, যে এলাকার উপর দিয়ে উড়ালপুল যাবে, সেখানে রেল কলোনি রয়েছে। রয়েছে বেশ কিছু দখলদারও। রেলকর্তাদের বক্তব্য, জমি জটে দমদম-বারাসত রেলের কাজ কিছু জায়গায় আটকে রয়েছে। জমি না পেয়ে রেলের কাজ আটকে যাওয়ার উদাহরণ আরও রয়েছে। তাই দমদম ও ক্যান্টনমেন্টের মাঝে উড়ালপুলের জন্য দখলদার হটিয়ে জমি পুনরুদ্ধার কতটা সম্ভব— তা-ও স্পষ্ট ভাবে জানেন না রেলকর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bongao Division South Eastern Rail Fly over
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE