Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

রেলের বিরুদ্ধে ছ’বছর লড়ে হাসি হকারের

বয়সের ভারে নুয়ে পড়তে পড়তেও ছ’বছর ধরে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। এত দিনে স্বস্তির হাসি নদিয়ার নাকাশিপাড়ার বৃদ্ধ হকারের মুখে।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৩৩
Share: Save:

বয়সের ভারে নুয়ে পড়তে পড়তেও ছ’বছর ধরে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। এত দিনে স্বস্তির হাসি নদিয়ার নাকাশিপাড়ার বৃদ্ধ হকারের মুখে।

রোজ নদিয়ার বেথুয়াডহরি স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠে মুর্শিদাবাদের লালগোলায় নেমে বাজারে চপ্পল বিক্রি করা ছিল তাঁর পেশা। কিন্তু ২০১৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বরের একটি ঘটনা তাঁর জীবনের মোড় বদলে দেয়। নদিয়ার নাকাশিপাড়া থানা এলাকার প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা আদিত্যকুমার সাহা এখন আর রেলের মাসিক টিকিট কেটে মালবাহী কামরায় উঠতে পারেন না। আদিত্যবাবুর অভিযোগ, বৈধ টিকিট থাকা সত্ত্বেও বছর পাঁচেক আগে বহরমপুর কোর্ট স্টেশনের তৎকালীন আইসি বিমান গড়াই-সহ জনা পাঁচেক আরপিএফের কর্মী এসে তাঁকে ওই স্টেশনে জোর করে নামিয়ে দেন। তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে বলা হয়, তিনি নাকি যাত্রী-বোঝাই কামরায় ছিলেন। সেই জন্য তাঁর কাছে টাকা দাবি করেন আরপিএফের লোকজন। ‘‘টাকা না-দেওয়ায় গালিগালাজ করেন বিমান গড়াই। আমাকে লক-আপে রাখে। আমার সঙ্গে চারটি ব্যাগে প্রায় ৫৯ হাজার টাকার নতুন চপ্পল ছিল। ছেলে এসে ৭০০ টাকার বন্ডে আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেলেও নতুন চপ্পলগুলি ফেরত পাইনি,’’ বলেন আদিত্যবাবু।

বহরমপুর কোর্ট স্টেশনের আরপিএফে এবং শিয়ালদহ ডিভিশনে অভিযোগ দায়ের করেও চপ্পল ফিরে পাননি ওই বৃদ্ধ। বহরমপুর কোর্ট স্টেশনের আরপিএফের ওসি, স্টেশনমাস্টার, শিয়ালদহ ডিভিশনের ডিআরএম এবং পূর্ব রেলের রানাঘাট শাখার আরপিএফের অ্যাসিস্ট্যান্ট সিকিয়োরিটি কমিশনারের বিরুদ্ধে মুর্শিদাবাদ জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে ক্ষতিপূরণের মামলা দায়ের করেন তিনি। আদিত্যবাবুর কথায়, ‘‘ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করার পরে যখনই বেথুয়াডহরি স্টেশনে ট্রেনের মালবোঝাই কামরার মাসিক টিকিট কাটতে গিয়েছি, তখনই বলা হয়েছে, শিয়ালদহ ডিআরএমের তরফে জানানো হয়েছে, আমাকে নাকি মাসিক টিকিট দেওয়া যাবে না।’’

২০১৭ সালের ৩০ মার্চ জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দুই বিচারক অনুপম ভট্টাচার্য ও সমরেশকুমার মিত্র তাঁদের রায়ে রেলকে ভর্ৎসনা করে বলেন, ‘‘বৈধ টিকিট থাকা সত্ত্বেও এক জন যাত্রী যে-ভাবে হেনস্থার শিকার হয়েছেন, তা মেনে নেওয়া যায় না। সরকারি সংস্থা হিসেবে রেল এর দায় এড়াতে পারে না।’’ জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রায়ে মামলার খরচ এবং ক্ষতিপূরণ বাবদ রেলকে প্রায় সত্তর হাজার টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সাই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করে রেল। রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালত গত ১৩ ফেব্রুয়ারি জেলা আদালতের রায় বহাল রেখে ৪৫ দিনের মধ্যে মামলাকারীকে ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রেলের আইন বিভাগ বিষয়টা দেখছে। এক মাসেরও বেশি সময় আছে। রায়ের গুরুত্ব বুঝে যদি মনে হয় আদিত্যবাবুকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া সমীচীন, তা হলে রায় মেনে টাকা দিয়ে দেব। নচেৎ জাতীয় কমিশনে যাব।’’ যাঁর বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, বহরমপুর কোর্ট স্টেশনে আরপিএফের তৎকালীন ওসি সেই বিমান গড়াই এখন শিয়ালদহ শাখায় আরপিএফের আইসি। তিনি বলেন, ‘‘রায়ের প্রতিলিপি পাইনি। এ বিষয়ে যা বলার, রেলের কর্তারা বলবেন।’’

তিনি আর মালবাহী কামরায় মাসিক টিকিট কাটতে পারেন না বলে আদিত্যবাবুর অভিযোগ। নিখিলবাবু বলেন, ‘‘বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’’ এত কিছু পরেও দমে যাওয়ার পাত্র নন আদিত্যবাবু। বলছেন, ‘‘আমাকে যে-ভাবে ফাঁসানো হয়েছে, রেলের বিরুদ্ধে যত দূর যেতে হয় যাবো।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Consumer Court Hawker Indian Railway
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE