Advertisement
E-Paper

পুড়ছে কলকাতা, কান ঘেঁষে পলাতক বৃষ্টি

জোছনা আড়ি করে তাঁর বাড়ি না-এসে গলি দিয়ে চলে যাওয়ায় আক্ষেপ ছিল গায়িকার। আক্ষেপ করছে দহন-ক্লিষ্ট কলকাতাও। কারণ, মেঘ-বৃষ্টি-ঝড় যে প্রায় আড়ি করেই এড়িয়ে যাচ্ছে তাকে! কেন আড়ি, কীসের আড়ি, বলতে পারছে না হাওয়া অফিস। কিন্তু মহানগরের কান ঘেঁষেই বেরিয়ে যাচ্ছে ঝড়বৃষ্টি। অথচ গরম থেকে রেহাই পেতে এক পশলা বর্ষণের জন্য মাথা খুঁড়ে মরছে কলকাতা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৫ ০৩:৫০
গোধূলি বেলায়। সোমবার সিউড়ির তিলপাড়ায় তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

গোধূলি বেলায়। সোমবার সিউড়ির তিলপাড়ায় তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

জোছনা আড়ি করে তাঁর বাড়ি না-এসে গলি দিয়ে চলে যাওয়ায় আক্ষেপ ছিল গায়িকার।
আক্ষেপ করছে দহন-ক্লিষ্ট কলকাতাও। কারণ, মেঘ-বৃষ্টি-ঝড় যে প্রায় আড়ি করেই এড়িয়ে যাচ্ছে তাকে! কেন আড়ি, কীসের আড়ি, বলতে পারছে না হাওয়া অফিস। কিন্তু মহানগরের কান ঘেঁষেই বেরিয়ে যাচ্ছে ঝড়বৃষ্টি। অথচ গরম থেকে রেহাই পেতে এক পশলা বর্ষণের জন্য মাথা খুঁড়ে মরছে কলকাতা।
রবিবারের পরে সোমবারেও প্রবল ঝড়বৃষ্টি হয়েছে দূরের জেলা বাঁকুড়া-বর্ধমানে। এ দিন কপাল খুলেছে কাছের জেলা উত্তর ২৪ পরগনা আর নদিয়ারও। কলকাতার উপকণ্ঠে বারাসত, নিউ ব্যারাকপুরও বৃষ্টির দাক্ষিণ্য পেয়েছে। তবে মহানগরের কোথাও কোথাও দু’-এক ফোঁটা বৃষ্টি পড়লেও সেটা পোড়া ঘায়ে নুনের ছিটের মতোই লেগেছে। দক্ষিণবঙ্গের অনেক জেলায় রাতে কিছুটা স্বস্তি মিললেও কলকাতায় দহন-পরিস্থিতির বিশেষ বদল নেই। কেন?

হাওয়া অফিস বলছে, বেশি তাপমাত্রা এবং বাতাসে জলীয় বাষ্প থাকার ফলে বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার মতো পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হচ্ছে। তা থেকেই ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে একাধিক জেলায়। কিন্তু সেই বজ্রগর্ভ মেঘ কলকাতা পর্যন্ত পৌঁছচ্ছে না। তাই ঝড়বৃষ্টির প্রসাদ থেকে এখনও বঞ্চিত মহানগর।

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের এক বিজ্ঞানী জানান, মেঘ কোন দিকে ভেসে যাবে, সেটা নির্ভর করে তার জন্মস্থান এবং বায়ুপ্রবাহের গতিপথের উপরে। দু’দিন ধরে পশ্চিমাঞ্চলের যে-এলাকায় মেঘ তৈরি হচ্ছে এবং বায়ুপ্রবাহের যা অভিমুখ, তাতে এখনই কলকাতায় ঝড়বৃষ্টির বিশেষ আশা দেখা যাচ্ছে না। তবে তাঁর সংযোজন, ‘‘মঙ্গলবার যদি আচমকা বায়ুপ্রবাহের গতিপথ বদলে যায়, এই পূর্বাভাসও বদলে যেতে পারে।’’

সোমবার রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের অবস্থাটা ঠিক কী ছিল?

হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, দুপুরেই রেডার-চিত্রে আসানসোল-পুরুলিয়ার উপরে একটি বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরির ইঙ্গিত মিলেছিল। তাই সতর্কতাও জারি করা হয়। বিকেলে সেই বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরির পরে পুরুলিয়ার একাংশ, আসানসোল-দুর্গাপুর, বীরভূমে প্রবল ঝড়বৃষ্টি হয়। পরে সেই মেঘ নদিয়া ও উত্তর ২৪ পরগনার উপর দিয়ে চলে যায় বাংলাদেশে। ফাঁকি দেয় কলকাতাকে।

প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, ঝড়ের প্রভাব বেশি পড়েছে পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতেই। ঝড়ে গাছ উপড়ে দুর্গাপুরের অনেক রাস্তা আটকে যায়। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে অন্ধকার নামে শহর জুড়ে। প্রচুর গাছ ভেঙে পড়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে রাতভর কাজ চালাতে হয়। দুর্গাপুরের ভিড়িঙ্গি এলাকায় মাটির দেওয়াল চাপা পড়ে এক রাজমিস্ত্রির মৃত্যু হয়েছে। কয়েক দিন আগেই ওই সব জেলায় তাপপ্রবাহ বইছিল। এ দিনের ঝড়বৃষ্টির প্রভাবে রাতে তাপমাত্রা অনেকটাই নেমে যায়। রাতে বৃষ্টি হয় শহর মেদিনীপুরের কিছু এলাকাতেও।

ঝড়বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে অন্ডাল বিমানবন্দরের পরিষেবাতেও। বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটের নির্ধারিত বিমান সেখানে পৌঁছয় প্রায় এক ঘণ্টা পরে। বিকেলে অন্ডাল থেকে বিমানে কলকাতায় আসার কথা ছিল এক চিকিৎসকের। কিন্তু ঝড়বৃষ্টিতে তিনি বিমান ধরতে পারেননি। উড়ান ‘মিস’ করলেও তিনি বলছেন, ‘‘ঝড়বৃষ্টির পরে গরমটা অনেক কমেছে। স্বস্তিও মিলেছে।’’ ঝড়ে গাছ পড়ে রাস্তা আটকে যায় পুরুলিয়াতেও। বীরভূম থেকেও শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির খবর এসেছে। রামপুরহাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মভিটের চালাঘরটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

লাগাতার ঝড়বৃষ্টিতে গরমের কবল থেকে আপাতত মুক্ত উত্তরবঙ্গ। সেখানে বহু জায়গায় এ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের কোঠাই ছুঁতে পারেনি। আবহাওয়া দফতর জানায়, জলপাইগুড়ির সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বাভাবিকের থেকে পাঁচ ডিগ্রি কম। কোচবিহারেও এ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে চার ডিগ্রি নীচে ছিল।

রবিবার কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.১ ডিগ্রি। এ দিন ঝড়বৃষ্টি না-হলেও সেই পারদ আরও এক ধাপ নেমে দাঁড়িয়েছে ৩৬.২ ডিগ্রিতে। এক আবহবিদ জানান, বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে। তার জেরে দক্ষিণবঙ্গের পরিমণ্ডলে জলীয় বাষ্প ঢুকছে। চলছে মেঘের আনাগোনাও। সব মিলিয়ে তাপমাত্রা সে-ভাবে বাড়তে পারেনি।

পারদ ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস না-ছাড়ালেও লাগামছাড়া আর্দ্রতার ফলে কয়েক দিন আগেই নাকাল হয়ে গিয়েছিলেন কলকাতা এবং লাগোয়া জেলার বাসিন্দারা। সেই অভিজ্ঞতা থেকে অনেকের শঙ্কিত প্রশ্ন, তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও ঘূর্ণাবর্ত লাগাতার জলীয় বাষ্প ঢুকিয়ে চলেছে বাতাসে। তা হলে আর্দ্রতা বেড়ে গিয়ে অস্বস্তি ফের চরমে উঠবে না তো?

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের বিজ্ঞানীরা বলছেন, অস্বস্তি বাড়ার পিছনে চড়া তাপমাত্রা আর উত্তুঙ্গ আর্দ্রতার সঙ্গে সঙ্গে হাওয়া চলাচল থমকে যাওয়াটাও অন্যতম কারণ। তাপমাত্রা যদি কমে এবং তার সঙ্গে যদি দখিনা হাওয়া বইতে থাকে, তা হলে আর্দ্রতা বাড়লেও অস্বস্তি সে-ভাবে বাড়বে না।

হাওয়া অফিসের এক বিজ্ঞানী বলেন, ‘‘ঘূর্ণাবর্তের ফলে দক্ষিণবঙ্গে দখিনা হাওয়া বইছে। তার ফলে অস্বস্তি কিছুটা হলেও কমবে।’’ কিন্তু সেই দখিনা বাতাস হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলে অস্বস্তি ফিরে আসতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

রেকর্ড গরমে সারা দেশে মৃত বেড়ে ৫৫০

৩৬৮, ৫৩০, ৫৫০..., টানা তাপপ্রবাহে দেশ জুড়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। শুধু অন্ধ্র ও তেলঙ্গানাতেই মৃত্যু হয়েছে পাঁচশোরও বেশি মানুষের।

পরিস্থিতি সব চেয়ে খারাপ দক্ষিণ ভারতের এই দুই রাজ্যেরই। রবিবার অন্ধ্র-তেলঙ্গানায় গরমের বলি শতাধিক। পরিস্থিতি দেখেশুনে সতর্কতা জারি করেছে দুই রাজ্যের সরকার। রেল স্টেশন ও শহরের বিভিন্ন প্রান্তে খোলা হয়েছে আপৎকালীন চিকিৎসা কেন্দ্র। গত ৫ বছরের রেকর্ড ভেঙে গিয়েছে উত্তরপ্রদেশে। দিল্লিতে এই মরসুমের উষ্ণতম দিন ছিল সোমবার, ৪৫.৫ ডিগ্রি। ওড়িশারও ন’টি শহরের তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রির উপরে। ইলাহাবাদের অবস্থা আরও শোচনীয়। পারদ ছুঁয়েছে ৪৭.৭ ডিগ্রি। এ অবস্থায় আকাশের মুখ চেয়ে গোটা দেশ। যদিও কোনও সুখবরই দিতে পারছে না আবহাওয়া দফতর।

তবে দেশের উষ্ণতম জায়গার শিরোপা রাজস্থানের। বিএসএফ সূত্রে খবর, জৈসলমের ও বারমেরের কিছু সীমান্তবর্তী এলাকায় হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে দিয়েছে তাপমাত্রা।

record hot weather burning kolkata kolkata weather rain storm kolkata massive hot kolkata humidity rainstorm untouched abpnewsletters
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy