ক্যানিঙের রথযাত্রা। সামসুল হুদার তোলা ছবি।
রথ মানেই পাঁপড় ভাজা, জিলিপি আর মাটির পুতুল। আর তার সঙ্গে ঝিরঝিরে বৃষ্টি। তবে ইদানীং মাটির বাঘ, সিংহ, কলসি কাঁধে মেয়ের মূর্তির পাশাপাশি জায়গা করে নিয়েছে প্লাস্টিকের ডোরেমন, সিঞ্চন, নিনজা হাতোড়িরা। মেলায় তাদেরই কদর বেশি।
কাঁচরাপাড়ায় কৃষ্ণরাই জিউ’র মন্দিরের সামনে মেলা বসেছে রথের। সকালেই রথের দড়িতে টান পড়েছে। বিকেলে মেলার বিকিকিনি। কাঁচরাপাড়ার এই রথের দড়িতে টান দিতে দূর দূর থেকে বহু লোক আসেন। পাশেই কল্যাণীতে আদ্যা মন্দিরের রথ বেরিয়েছে এলাকাবাসীদের নিয়ে। কৃষ্ণ ভজনার সঙ্গে শহর পরিক্রমাও চলছে।
ব্যারাকপুর মণিরামপুরে রথের মেলায় জিলিপি, পাঁপড় ভাজার সঙ্গে এ বার জায়গা করে নিয়েছে নাগেট আর সসেজ। সোদপুরে ক্ষুদেদের রথের প্রতিযোগিতায় এ বার ছোট ছোট দোতলা, চারতলা রথের সারি। বরাহনগরে রামকৃষ্ণ মিশনের রথ বেরিয়েছে। মেলা বসেছে সেখানেও। এ বার রথে অবশ্য খুব একটা বৃষ্টির ছোঁওয়া পায়নি শিল্পাঞ্চল। তবে দড়িতে টান পড়ুক না পড়ুক মেলায় ভিড় ভালই হয়েছে।
বসিরহাটের অনেক জায়গায় রথের মেলা বসে। হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের সুন্দরবন-লাগোয়া যোগেশগঞ্জে বহু বছরের প্রাচীন রথযাত্রার উৎসব। এখানকার রথের আকার বেশ বড়। স্থানীয় হাইস্কুলের পাশে এখনও ঠাকুরবাড়ি এলাকা থেকে নিয়ম মতো বিকেল ৪টে নাগাদ দু’টি রথ টানা শুরু হয়। এলাকা ঘুরে সেই রথ আসে যোগেশগঞ্জ বাজারে। একই সময়ে সর্দারপাড়া এলাকা থেকে আরও একটি রথ আসে যোগেশগঞ্জ বাজারে। সেখান থেকে পাটঘরা গ্রামে জগন্নাথের মাসির বাড়িতে যায়। রথের উপরেই চলে গান-বাজনা। তিনটি রথের যাত্রা দেখতে পথের দু’পাশে বহু মানুষের ভিড় জমে যায়।
যোগেশগঞ্জ বাজারে রথ উপলক্ষে এক সপ্তাহ ধরে মেলা বসে। স্থানীয় প্রভাস নস্কর, অসীম মৃধা জানান, ২০০৯ সালের আয়লার পরে মেলায় সব থেকে বেশি গাছের চারা বিক্রি হয়। এখন এলাকায় গাছ লাগানো এলাকার মানুষের কাছে বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বসিরহাটের বড়কালী বাড়ি এলাকার রথ বহু পুরনো। এখানে রথ উপলক্ষে টাকি রাস্তা জুড়ে মেলা বসে। মেলায় পুতুল, বেলুন, চুড়ি, পসরা বসে। রঘুনাথপুর, মির্জাপুর, হরিশপুর, হাসনাবাদ, ভেবিয়া, মহেশপুর, টাকি, বাদুড়িয়া, রথতলা, উত্তরদিয়াড়া, চণ্ডীপুর, কাটিয়াহাট, চারঘাট, হাড়োয়া, স্বরূপনগর, মিনাখাঁ, সন্দেশখালির অনেক জায়গাতেই রথ যাত্রার অনুষ্ঠান হয়। কোথাও ফুটবল কোথাও নদীতে বাইচ প্রতিয়োগিতাও দেখা যায়।
হাবরার রথযাত্রার প্রধান আকর্ষণ জয়গাছি রথতলার রথ। রথযাত্রার সূচনা করেন পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস। বহু মানুষ ওই রথ টানতে ভিড় করেছিলেন। দশ দিনের মেলাও বসেছে। বনগাঁর এ বার দু’টি বড় রথ ছাড়াও বেশ কিছু ছোট রথ বেরিয়েছিল। এখানে মূলত যশোর রোডের দু’পাশে মেলা বসে। প্রচুর গাছের চারা বিক্রি হয়। বাগদার হেলেঞ্চার ট্যাঙ্কিপাড়া ও বাণেশ্বর পুরেও রথ দেখার মতো।
রথ নির্বিঘ্নেই সম্পন্ন হল কাকদ্বীপে। কাকদ্বীপের দীর্ঘদিনের পুরনো গৌড়ীয় আশ্রমের রথের রশিতে টান দিয়ে মঙ্গলবার রথযাত্রার শুভ সূচনা করেন সুন্দরবন উন্নয়নের প্রতিমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা। সম্প্রীতির বার্তাও দেন তিনি। পুলিশের তরফে সব থানা এলাকায় বাড়তি নজরদারি এবং প্রশাসনের তরফেও প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল, যাতে ইদ ও রথে কোনও সমস্যা না হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy