Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
State News

রবীন্দ্রভারতীতে উপাচার্যের ইস্তফা, আগামী বছর বসন্ত উৎসব নিয়ে সংশয়

রবীন্দ্রভারতীর অনেকের বক্তব্য, টিএমসিপি-র উদ্যোগেই ওই সব তরুণ-তরুণীকে আনা হয়েছিল।

বসন্তোৎসবে অশালীনতার প্রতিবাদে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। শুক্রবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

বসন্তোৎসবে অশালীনতার প্রতিবাদে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। শুক্রবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২০ ০৬:১২
Share: Save:

বিশ্বকবির বিশ্বভারতীতে বসন্তোৎসব স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে করোনা-সংক্রমণের আতঙ্কে। আর রবীন্দ্রভারতীতে আগামী বছর আদৌ বসন্তোৎসব হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে শোচনীয় রবীন্দ্র-বিদূষণ।

বাংলায় রবীন্দ্র-বিদূষণের কালো ইতিহাস দীর্ঘদিনের। কবির নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয় রবীন্দ্রভারতীতে এ বার বসন্তোৎসবে অংশগ্রহণকারী কয়েক জনের পিঠে ও বুকে অশ্লীল শব্দ লেখার ঘটনা সেই ইতিবৃত্তে নতুন অধ্যায় যুক্ত করেছে বলে শিক্ষা-সংস্কৃতি শিবিরের একাংশের অভিমত। ওই ঘটনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ শুক্রবার থানায় অভিযোগ করেছেন। এই বিতর্কের জেরে আগামী বছর আদৌ বসন্তোৎসবের আয়োজন করা হবে কি না, সেই বিষয়েও চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন কর্তৃপক্ষ। যাঁরা এই কাজ করেছেন, তাঁদের মধ্যে পাঁচ জন এ দিন ক্যাম্পাসে এসে ক্ষমা চান। বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে প্রশাসনিক ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী রাতে আচার্য-রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং উচ্চশিক্ষা দফতরের সচিবের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর। তবে সেটি গৃহীত হয়েছে কি না, গভীর রাত পর্যন্ত তা জানা যায়নি।

রবীন্দ্রভারতীর শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত দাস বলেন, ‘‘উপাচার্য ঠিক কী কারণে পদত্যাগপত্র পাঠালেন, তা জানার চেষ্টা করছি। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষক সমিতি উপাচার্যের পাশে আছে।’’ এই নিয়ে বক্তব্য জানতে সব্যসাচীবাবুকে ফোন করা হলে তাঁকে পাওয়া যায়নি। এসএমএসেরও উত্তর মেলেনি। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, যে-পাঁচ জন ক্ষমা চাইতে এসেছিলেন, তাঁদের পুলিশের হাতে দেওয়া হবে কি না, এই নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। উপাচার্য ওই পাঁচ জনকে পুলিশেই দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু টিএমসিপি এবং শিক্ষাবন্ধু তা চায়নি বলেই খবর।

আরও পড়ুন: করোনা আতঙ্কে দোলে নয় বসন্তোৎসব

বৃহস্পতিবার রবীন্দ্রভারতীর বিটি রোড ক্যাম্পাসে বসন্তোৎসবের সময় তোলা কিছু ছবিতে শাড়ি পরা কিছু তরুণীর খোলা পিঠে আবির দিয়ে লেখা রবীন্দ্রগান ‘চাঁদ উঠেছিল গগনে’র (প্রথম চরণ ‘সে-দিন দু’জনে দুলেছিনু বনে’) কদর্য বিকৃতি দেখা যায়। ছেলেদের বুকেও আপত্তিকর কথা লেখা ছিল। এই নিয়ে হইচই শুরু হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। ঘটনার রাতে উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী জানান, রবীন্দ্রভারতীতে বসন্তোৎসবে বহু বহিরাগত আসেন। তাই ঠিক কারা এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন, তা চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে সিঁথি থানায় লিখিত অভিযোগ জানানো হয় শুক্রবার সকালে।

উপাচার্য জানান, বসন্তোৎসবে যোগ দিতে পাশ লাগে। পাশ বিলি হয় ললিতকলা বিভাগ ও ছাত্র সংসদের মাধ্যমে। এ বার বহু জাল পাশ তৈরি করে অনেকেই ঢুকেছিলেন। পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারা নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবে। ওই ছবিগুলির সত্যতা খুঁজে দেখবে পুলিশই।

রবীন্দ্রভারতীর অনেকের বক্তব্য, টিএমসিপি-র উদ্যোগেই ওই সব তরুণ-তরুণীকে আনা হয়েছিল। অভিযোগ অস্বীকার করে টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদিকা সুপর্ণা নায়ক বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার রাতেই আমরা বিষয়টি জানতে পারি। শুক্রবার সকালে উপাচার্যকে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করি। তার পরে পাঁচ জন এসে ক্ষমা চায়।’’ সুপর্ণা মনে করেন না, বসন্তোৎসব পরিচালনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও রকম খামতি আছে বা এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের কোনও দোষ আছে। গত ডিসেম্বরে শান্তিনিকেতনের নন্দনমেলাতেও কলাভবনের ছাত্রছাত্রীদের একাংশের বিরুদ্ধে ‘চাঁদ উঠেছিল গগনে’ গীতাংশটি বিকৃত করে গাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল।

এ দিন রবীন্দ্রভারতী ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, সাদা পোশাকের পুলিশ ছড়িয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। পুরো বিষয়টির তদারকিতে আছেন টিএমসিপি-র উত্তর কলকাতা জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ দে। ক্ষমাপ্রার্থী তিন তরুণী ও দুই তরুণকে নিরাপত্তারক্ষীদের ঘরে রাখা হয়েছে। মাথা নিচু করে মুখ ঢেকে বসে আছেন তাঁরা। তিন তরুণী কান্নাকাটি করছেন। সন্ধ্যার দিকে ওই পাঁচ জনের মধ্যে এক তরুণের বাবা এসে ছেলের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চান।

প্রশ্ন উঠছে, সকালে থানায় অভিযোগ জানানোর পরে, ওই পাঁচ জনকে সারা দিন ক্যাম্পাসে বসিয়ে রাখা হল কেন? পুলিশ ওঁদের থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করল না কেন? সিঁথি থানার এক আধিকারিক জানান, ওই পাঁচ জন নিজেরাই ক্যাম্পাসে এসেছেন। তাই উপাচার্যের অনুমতি ছাড়া ওঁদের নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে লালবাজার কোনও উত্তর দেয়নি। ডিসি (উত্তর) জয়িতা বসুকে ফোন এবং মেসেজ করা হয়েছিল। কোনও উত্তর আসেনি। সন্ধ্যায় পাঁচ তরুণ-তরুণীই ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যান। তাঁরা চন্দননগর-সহ হুগলির বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘ওই ঘটনার নিন্দা করার কোনও ভাষা নেই। ওদের আচরণ ছাত্রসুলভ নয়। আইন অনুযায়ী নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ সাইবার আইনে বিষয়টি দেখবে।’’ ঘটনার নিন্দা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি আরবুটা উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেয়। তার পরে ওই ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষকেরা রবীন্দ্রমূর্তির পাদদেশে অবস্থান করেন। আরবুটা-র সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত দাস বলেন, অপ্রীতিকর কিছু ঘটনা গত বছরেও ঘটেছিল। এ বার কর্তৃপক্ষ সতর্ক হলেন না কেন? অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ না-করলে সমিতি লাগাতার আন্দোলনের পথে যাবে।’’

উপাচার্য সব্যসাচীবাবু (তখনও পদত্যাগপত্র পাঠানোর খবর আসেনি) বলেন, ‘‘আগামী বছর বসন্তোৎসব করা হবে কি না, করলে বহিরাগতদের ঢুকতে দেওয়া হবে কি না— সবটাই ভাবছি আমরা। কর্মসমিতির বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE