Advertisement
E-Paper

উচ্চ মাধ্যমিকে মেধা-তালিকায় জন-জট, প্রথম দশে ১৩৭ জন পড়ুয়া!

একক নয়। এ বার শৃঙ্গও জয়ের কৃতিত্বও দু’জনের। প্রথম হয়েছেন বীরভূম জেলা স্কুলের শোভন মণ্ডল এবং কোচবিহার জেনকিন্স স্কুলের রাজর্ষি বর্মণ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৯ ০৩:৩৯
যুগ্ম প্রথম: শিলিগুড়িতে মায়ের সঙ্গে রাজর্ষি বর্মণ। (ডান দিকে) বাবা-মায়ের সঙ্গে সিউড়ির শোভন মণ্ডল। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক ও তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

যুগ্ম প্রথম: শিলিগুড়িতে মায়ের সঙ্গে রাজর্ষি বর্মণ। (ডান দিকে) বাবা-মায়ের সঙ্গে সিউড়ির শোভন মণ্ডল। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক ও তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

এভারেস্টে এ বার ‘ট্র্যাফিক জ্যাম’। জন-জট। উচ্চ মাধ্যমিকে মেধা-তালিকার প্রথম ১০টি স্থানও এ বার জনাকীর্ণ। ওই ১০টি জায়গায় রয়েছেন ১৩৭ জন (ছাত্রী ৩৫ জন)। এত বিপুল সংখ্যক পড়ুয়া আগে কখনও মেধা-তালিকায় ছিলেন না। এটা ঐতিহাসিক বলে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভানেত্রী মহুয়া দাসের অভিমত।

একক নয়। এ বার শৃঙ্গও জয়ের কৃতিত্বও দু’জনের। প্রথম হয়েছেন বীরভূম জেলা স্কুলের শোভন মণ্ডল এবং কোচবিহার জেনকিন্স স্কুলের রাজর্ষি বর্মণ। মোট ৫০০-র মধ্যে তাঁদের নম্বর ৪৯৮। শতাংশের হারে ৯৯.৬। কাটা গিয়েছে মাত্র দু’টি নম্বর। গত বছর উচ্চ মাধ্যমিকে শীর্ষ স্থানাধিকারী ৯৯.২% নম্বর পেয়েছিলেন। এ বারের যুগ্ম প্রথম সেটা ছাড়িয়ে গেলেন। মেয়েদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন বিধাননগর সরকারি হাইস্কুলের সংযুক্তা বসু। সামগ্রিক বিচারে তিনি আছেন দ্বিতীয় স্থানে। এ বার পাশের হারও গত বারের তুলনায় বেশি। গত বার ছিল ৮৩.৭৫%। এ বার ৮৬.২৯%। এটা রেকর্ড।

সোমবার ফল প্রকাশ করে উচ্চ সংসদের সভানেত্রী মহুয়াদেবী মেধা-তালিকায় ১৩৭ জনের ঠাঁই পাওয়ার বিষয়টিকে ঐতিহাসিক বলে অভিহিত করেন। বলেন, ‘‘সার্বিক ভাবে শিক্ষার প্রসার এবং স্কুলে ভাল পঠনপাঠনের ফলে পড়ুয়াদের মধ্যে মেধা-তালিকায় থাকার সুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। মেধা-তালিকায় তারই ঐতিহাসিক প্রতিফলন ঘটেছে।’’ এ বার প্রথম থেকে দশম, প্রতিটি স্থানেই রয়েছেন একাধিক পরীক্ষার্থী। দ্বিতীয় হয়েছেন পাঁচ জন। তাঁদের প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৬ (৯৯.২%)। তৃতীয় চার জন। প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৪ (৯৮.৮%)। দশম ২৬ জন। প্রাপ্ত নম্বর ৪৮৬ (৯৭.২%)।

সিবিএসই, আইসিএসই পরীক্ষায় সেরাদের অনেকেই প্রায় পুরো নম্বর পান। চলতি বছরেই আইএসসি-তে চারশোয় চারশো পেয়ে প্রথম হয়েছেন বাংলার দেবাংকুমার আগরওয়াল। সর্বভারতীয় বোর্ডের ছেলেমেয়েরা পুরো নম্বর পেলেও পশ্চিমবঙ্গ বোর্ডে তেমনটা হয় না কেন, সেই প্রশ্ন তুলে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বারে বারেই আফসোস করেছেন। তাঁর অনুযোগ, রাজ্যে হাত খুলে নম্বর দেওয়া হয় না। তবে রাজ্যেও ছবিটা যে বদলাচ্ছে, গত বছর উচ্চ মাধ্যমিকের ফল ঘোষণার পরেই সেটা বোঝা গিয়েছিল। জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের কলা বিভাগের গ্রন্থন সেনগুপ্ত ৯৯.২% নম্বর পেয়ে প্রথম হন। এ বার মাধ্যমিকের প্রথম সৌগত দাশ পেয়েছে ৬৯৪ (৯৯.১৪%)। উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম স্থানাধিকারীদের নম্বর আরও বেড়েছে। ফল জেনে শিক্ষামন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী সফল পড়ুয়াদের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষক, অভিভাবকদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, যাঁরা সফল হতে পারেননি, তাঁদেরও ভেঙে পড়ার কোনও কারণ নেই। সফল ছাত্রছাত্রীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

যুগ্ম প্রথম শোভন ও রাজর্ষি দু’জনেই বিজ্ঞান বিভাগের পড়ুয়া। কলা বিভাগে প্রথম হয়েছেন সাঁইথিয়া টাউন হল স্কুলের ছাত্র রাকেশ দে। প্রাপ্ত নম্বর ৪৯২ (৯৮.৪০%)। রাকেশ সকলের মধ্যে চতুর্থ হয়েছেন। বাণিজ্য বিভাগে প্রথম জ্ঞানভারতী বিদ্যামন্দিরের কমল সাহু এবং ন্যাশনাল হাইস্কুলের কোমল সিংহ। নম্বর ৪৮৬ (৯৭.২%)। সামগ্রিক মেধা-তালিকায় তাঁদের স্থান দশম। দশম স্থানাধিকারী বর্ধমান মিউনসিপ্যাল স্কুলের ছাত্র সাগর চন্দ শারীরিক প্রতিবন্ধী। তাঁর নম্বর ৪৮৬ (৯৭.২%)। এই প্রথম মেধা-তালিকায় কোনও শারীরিক প্রতিবন্ধী স্থান পেলেন বলে বিকাশ ভবনের খবর।

মাধ্যমিকের মেধা-তালিকায় সরকারি স্কুল থেকে খুব বেশি পড়ুয়া না-থাকলেও এ বার প্রথম স্থানাধিকারী-সহ রয়েছেন মোট ২৫ জন। মাধ্যমিকের মেধা-তালিকায় কলকাতা এঁটে উঠতে না-পারলেও উচ্চ মাধ্যমিকে মহানগরের ১৯ জন রয়েছেন। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের সাত জন ছাত্র রয়েছেন প্রথম দশে।

এ বার মোট নিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৭,১৯,৪০১। পাশের হারে সব থেকে এগিয়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা (৯৪.১৯%)। তার পরে কলকাতা (৯১.৪১%), পশ্চিম মেদিনীপুর (৯০.৯৪%), কালিম্পং (৯৪.৪৯%)।

এ বার ৬০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছেন দু’লক্ষ ৬৩ হাজার ১৪৯ জন। গত বারের তুলনায় ১২,১৮৮ জন বেশি। সর্বোচ্চ ‘ও’ গ্রেড (৯০ থেকে ১০০) পাওয়া পড়ুয়ার সংখ্যাও গত বারের তুলনায় বেশি। গত বার ‘ও’ পেয়েছিলেন ৫২৪৮ জন। এ বার তা পেয়েছেন ৭৮১৮ জন। ‘এ+’ গ্রেড (৮০ থেকে ৮৯%) পেয়েছেন ৪৭,৭৫৯ জন। গত বার সংখ্যাটা ছিল ৪১,৪২৮। শিক্ষা শিবিরের মতে, তুলনায় ভাল কলেজগুলিতে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা আরও বাড়বে।

উর্দুভাষী পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৯৪% নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছেন খিদিরপুর মুসলিম হাইস্কুলের রায়বা আহমেদ। ছাত্রীদের মধ্যে প্রথম (৯৩.৮০%) ইসলামিয়া হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের মহম্মদ তানজিম আলম। সাঁওতালি ভাষায় প্রথম পশ্চিম বর্ধমানের একলব্য মডেল আবাসিক স্কুলের বিশ্বনাথ মাড্ডি (৯১.৪০%)। ছাত্রীদের মধ্যে প্রথম দু’জন। বাঁকুড়ার পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু আবাসিক স্কুলের অণিমা মুর্মু এবং সনকা হেমব্রম (৮৯%)। নেপালি ভাষার পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রথম কালিম্পং সেন্ট জর্জেস হাইস্কুলের ছাত্র যতীন গুপ্ত (৯৪.২০%)। ছাত্রীদের মধ্যে প্রথম দার্জিলিঙের সেন্ট টেরেসা স্কুলের সয়াঙ্কা শেরপা (৮৯.৬০%)।

সংসদ-সভানেত্রী জানান, ১৫ দিনের মধ্যে অনলাইনে স্ক্রুটিনি এবং রিভিউয়ের আবেদন করা যাবে। এ দিন পরীক্ষার্থীর জন্য একটি কেরিয়ার গাইড প্রকাশ করেছে সংসদ। সেটি পাওয়া যাবে সংসদের ওয়েবসাইটে।

Higher Secondary WB Higher Secondary Result 2019 WB HS Result উচ্চ মাধ্যমিক WBCHSE Education
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy