E-Paper

চাকরি পাইয়ে দেবেন বলে ৩৫ লক্ষ টাকা নেন অয়ন, থানায় দায়ের হয়েছিল বহু অভিযোগ, তারপর?

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করে দেওয়ার নামে অয়ন ৩৫ লক্ষ টাকা তুলেছিলেন বলে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে চুঁচুড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন কলকাতার এক বাসিন্দা।

সুদীপ দাস

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৩ ০৬:৩১
ayan sil.

প্রোমোটার অয়ন শীল। ফাইল চিত্র।

তাঁর বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা তোলার অভিযোগ সামনে এসেছে। এ বার এক বাবা-ছেলেকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগেও সামনে এল শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচিত প্রোমোটার অয়ন শীলের নাম।

নিয়োগ দুর্নীতিতে অয়নের যোগ কতটা, খতিয়ে দেখছেন ইডি-র তদন্তকারীরা। আদতে হুগলির চুঁচুড়ার জগুদাসপাড়ার বাসিন্দা ওই প্রোমোটারকে শনিবার রাতে নিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। তার পরেই অয়ন সম্পর্কে নানা অভিযোগ সামনে আসছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করে দেওয়ার নামে অয়ন ৩৫ লক্ষ টাকা তুলেছিলেন বলে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে চুঁচুড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন কলকাতার বাসিন্দা, জনৈকা সোমা মুখোপাধ্যায়। জানা গিয়েছে, পুলিশের খাতায় অয়নের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছিল, তারও আগে। কিন্তু পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।

কী সেই অভিযোগ?

২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর নাগাদ হুগলির দেবানন্দপুরে জনৈক শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর ছেলে রূপকুমারের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের দাবি, ঘর থেকে ‘সুইসাইড নোট’ মিলেছিল। যাতে মৃত্যুর জন্য অয়নকে দায়ী করা হয়। এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা তোলার কাজে শ্রীকুমার-রূপকুমারকে কাজে লাগিয়েছিলেন অয়ন। উত্তরপাড়া, বৈঁচী, তারকেশ্বর, আরামবাগ প্রভৃতি এলাকা থেকে প্রায় দু’কোটি টাকা তুলে অয়নকে দিয়েছিলেন শ্রীকুমার ও তাঁর ছেলে। সেই টাকা নিয়ে অয়ন বেপাত্তা হওয়ায় তাঁদের উপরে চাকরিপ্রার্থীদের চাপ বাড়তে থাকে। এই অবস্থায় তাঁরা বিষ খেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।

ঘটনার কিছু দিন পরে রূপকুমারের স্ত্রী চুঁচুড়া থানায় অয়নের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ জানায়, সেই তদন্ত এখনও চলছে।

চুঁচুড়ার বাসিন্দা পূর্ণেন্দু চক্রবর্তী এক সময় অয়নের ছায়াসঙ্গী ছিলেন। তিনি জানান, কম্পিউটারে কাজের সুবাদে অয়নের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। ২০১৫ সালে চাকরির জন্য অয়নকে অনেকে তাগাদা দিচ্ছিলেন। পূর্ণেন্দুর কথায়, ‘‘খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, অয়ন দীর্ঘদিন ধরেই প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং অন্যান্য সরকারি দফতরে চাকরির নামে টাকা তুলেছে। তখনই ওর সঙ্গ ছাড়ি। এ বিষয়ে কাউকে জানালে প্রাণে মারার হুমকি দিয়েছিল অয়ন।’’

এলাকাবাসী জানান, মাঝবয়সি অয়ন প্রথমে কম্পিউটার সারাতেন। বছর তিনেক ব্লক অফিসে করণিকের কাজ করেন। তার পরে প্রোমোটিং ব্যবসায় আসেন। প্রতিপত্তি বাড়ে। থাকতেন কলকাতায়। চুঁচুড়ায় আসতেন কম। টলিউডেও পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। প্রতিবেশী পার্থ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘টালিগঞ্জের নামী পরিচালকের ছবিতে অয়ন টাকা ঢেলেছিলেন বলে শুনেছি। মনে হয়, টলিউডে ওঁর আরও টাকা গিয়েছে। সঠিক তদন্ত হলেই সব সামনে আসবে।’’ জগুদাসপাড়ায় নিজের তৈরি আবাসনের (যেখানে শনিবার ইডি তল্লাশি চালায়) পাঁচ তলায় অয়নের ফ্ল্যাট আছে। জানা গিয়েছে, তিন তলায় শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুই আত্মীয়ের নামেও ফ্ল্যাট রয়েছে। দু’টি ফ্ল্যাটকে জুড়ে একটি করা হয়।

এলাকাবাসীর একাংশ জানান, বাম আমলে হুগলি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদে ‘ডেটা এন্ট্রি’-র কাজ পান অয়ন। তখন থেকেই শিক্ষা দফতরে তাঁর পরিচিতি হয়। চুঁচুড়া শহর তৃণমূলের সহ-সভাপতি বিপ্লব সরকার বলেন, ‘‘বাম আমলে নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েই ওঁর প্রতিপত্তি বাড়ে। ২০০২-০৩ সালে ওঁর বাড়ির সামনে ব্যাগে করে টাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন চাকরিপ্রার্থীরা। শিক্ষা দফতর-সহ একাধিক সরকারি দফতরে ওঁর হাত ছিল।’’ শহরের সিপিএম নেতা সমীর মজুমদার এ নিয়ে বিশেষ মন্তব্য করতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, ‘‘অয়নকে সবে ইডি নিয়ে গিয়েছে। আর একটু দেখি। তারপর ওঁর বিষয়ে মন্তব্য করব।’’

রবিবার জগুদাসপাড়ায় অয়নের বাড়িতে বহু ডাকাডাকির পরে তাঁর মা বেরিয়ে এলেও কিছুই বলতে চাননি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Recruitment Scam Ayan Sil

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy