Advertisement
০৭ মে ২০২৪

ভাঙা গলায় ফোন, কে কে গেল রে

মহাত্মা গাঁধী, ইন্দিরা গাঁধী ও রাজীব গাঁধীর মৃত্যু দিনের মতো ঘোষিত কোনও কর্মসূচি ছাড়া সাত সকালে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে জেলা কংগ্রেস কার্যালয়ে কেউ কখনও পা দিতে দেখেননি।

কয়েক পা দূরে চলছে দলবদল। তখন খাঁ খাঁ করছে কংগ্রেসের কার্যালয়। — গৌতম প্রামাণিক

কয়েক পা দূরে চলছে দলবদল। তখন খাঁ খাঁ করছে কংগ্রেসের কার্যালয়। — গৌতম প্রামাণিক

অনল আবেদিন
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৩৭
Share: Save:

মহাত্মা গাঁধী, ইন্দিরা গাঁধী ও রাজীব গাঁধীর মৃত্যু দিনের মতো ঘোষিত কোনও কর্মসূচি ছাড়া সাত সকালে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে জেলা কংগ্রেস কার্যালয়ে কেউ কখনও পা দিতে দেখেননি। আর কাজকর্ম না থাকলে খামোকা ব্যস্ত মানুষ পা দেবেনই বা কেন?

অথচ সেই চিরাচরিত প্রথা ভেঙে রবিবার সকাল সাড়ে ন’টায় অধীর চৌধুরীকে জেলা কংগ্রেস ভবনে দেখে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন অনেকেই। এই ‘অনেক’- এর মধ্যে অবশ্য দলের জেলাস্তর দূরের কথা, স্থানীয় টাউন কমিটিরও কোনও নেতানেত্রী ছিলেন না। ছিলেন কংগ্রেস ভবনের প্রহরী, ভবন লাগোয়া চায়ের দোকানের মালিক, কয়েকজন ক্রেতা ও অতি সাধরণ স্তরের কয়েকজন দলীয় সমর্থক। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পরে খাঁ খাঁ অবস্থার মতো প্রায় জনশূন্য দশা দেখে এ দিন সকালে দলীয় কার্যলয়ে বেশিক্ষণ সময় ব্যয় করেননি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি।

তিনি ফিরে যেতেই অবশ্য অন্য দিনের মতো সকাল ১১টা নাগাদ একে একে কংগ্রেস ভবনে ঢোকেন প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অশোক দাস, স্থানীয় বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী, বহরমপুর টাউন কংগ্রেস সভাপতি অতীশ সিংহ, বহরমপুরের সহকারি পুরপ্রধান মৈনুদ্দিন চৌধুরী বাবলা- সহ ৫ কাউন্সিলর ও আরও অনেকে। তবে এই ‘অনেকে’টা অন্য দিনের তুলনায় নগন্য।

তৃণমূলের বহরমপুর পুরসভার ‘দখলদারি’র প্রতিবাদে অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বে আজ, সোমবার দুপুর তিনটেয় শহরের উত্তর প্রান্তের কুঞ্জঘাটা থেকে বহরমপুর টাউন কংগ্রেসের মিছিল বের হওয়ার কথা। সেই মিছিলের জন্য ৫ কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড কমিটির নেতাদের মধ্যে ব্যানার বিলি ও নির্দেশ দিতেই ব্যস্ত হয়ে হয়ে পড়েন অতীশ সিংহ। তার মধ্যেই উসখুস করতে থাকা কয়েকজন কাউন্সিলর জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে ১০ হাত দূর দিয়ে যাওয়া তৃণমূলের মিছিল দেখে বলতে শুরু করেন, ‘‘এই দেখো, কাল্টুদাকেও (অতীশ সিংহের ডাকনাম) দেখছি তৃণমূলের মিছিলে? কাল্টুও জবাব দেন, ‘‘জানিস না! মিছিলে না গেলে পরিণাম খারাপ হবে বলে কালই বাড়ি বাড়ি গিয়ে তৃণমূল শাসিয়েছে। পুলিশের ভয় দেখিয়েছে।’’

অন্য দিনের থেকে অনেকটাই ফাঁকা কংগ্রেস ভবন এ দিন যেন ম্রিয়মান ছিল। বিষন্নতা চিরে মাঝে মধ্যেই অশোক দাস, মনোজ চক্রবর্তী ও কাল্টুর মোবাইল ও অফিসের ল্যান্ড ফোন বেজে উঠে। ও প্রান্ত থেকে প্রশ্ন, ‘‘কে, কে গেল রে?’’ এ প্রান্ত থেকে উত্তর, ‘‘নীলুদা- সহ ১৭ কি ১৮!’’ মনোজ চক্রবর্তী ফোনে নিয়ম করে জবাব দেন, ‘‘কাউন্সিলরদের কেউ ভয়ে, কেউ লোভে তৃণমূলে গিয়েছে। ভোটাররা ও শহরের মানুষ কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গেই আছে।’’

দুপুর দু’টো নাগাদ দলীয় কার্যালয়ে পৌঁছন ২৪ ঘণ্টা আগে শনিবার সন্ধ্যায় জেলা কংগ্রেসের সভাপতি পদে মনোনীত বিধায়ক আবু তাহের খান। তিনি পৌঁছেই সভাপতির দায়িত্ব বুঝে নিয়ে তড়িঘড়ি জেলা কংগ্রেস কমিটির সভা ডাকেন। আজ, সোমবার সেই জরুরি সভা হওয়ার কথা।

দুপুরের আহার সারতে অনেকেই বাড়ি ফেরেন। তৃণমূলের সভা ও মিছিল দেখতে নিজেদের পাঠানো ‘চর’-এর কাছে কেউ কেউ ফোন করে খবর নেন। জেলা কংগ্রেস ভবন থেকে মাত্র আড়াইশো মিটার দূরে তৃণমলের সভামঞ্চ। ফলে অশান্তির আশঙ্কা রুখতে পুলিশের কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ঘেরা ছিল জেলা কংগ্রেস কার্যালয়।

বিকেল নাগাদ খবর পৌঁছয়, ‘‘সন্ধ্যা ৬টায় দাদা (অধীর চৌধুরী) আসছেন অফিসে!’’ এই সংবাদে প্রায় ফাঁকা দলীয় কার্যালয়ে থাকা কর্মীদের বিমর্ষ মুখে কিছুটা প্রাণের সাড়া মেলে। অবশেষে সন্ধ্যায় অধীর চৌধুরী দলীয় কার্যালয়ে হাজির হন। সকালের মতো সন্ধ্যায় তাঁকে একা কাটাতে হয়নি। অনুগামীদের ভিড় বাড়ে সন্ধ্যায়। সেই ভিড়ের মধ্যেও উত্তরহীন একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খায়, ‘‘আজ সাতসকালে দাদা কাউকে কিছু না বলে পার্টি অফিসে কেন এসেছিল? অস্থিরতায়?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE