রীতিমতো ঘোষণা করে তিনি রাজনৈতিক জীবন থেকে সন্ন্যাস নিয়েছিলেন। জেলা নেতৃত্বকে কার্যত অন্ধকারে রেখে শুক্রবার রাতে সেই দুধকুমার মণ্ডলের ময়ূরেশ্বরের বাড়িতে উপস্থিত হলেন বিজেপি-র রাজ্যনেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। সান্ধ্য সেই সাক্ষাৎ ঘিরে জল্পনা শুরু হয়েছে জেলার রাজনৈতিক মহলে।
দিন কয়েক আগে পুলিশের তোলাবজির জেরে বালির ডাম্পারে পিষ্ট হয়ে সাজু শেখ নামে ময়ুরেশ্বরের এক রাজমিস্ত্রির মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ। ক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের দুটি গাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। থানায় ভাঙচুর, আগুন লাগানোর অভিযোগও ওঠে। ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে পুলিশ এ পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের মধ্যে ছ’জন বিজেপি-র কর্মী, সমর্থক বলে নেতৃত্বের দাবি। তল্লাশির নামে পুলিশ বেশ কিছু বিজেপি কর্মীর বাড়িতে ভাঙচুর, তাণ্ডব চালায় বলেও অভিযোগ।
সেই ঘটনার প্রতিবাদেই সভার ডাক দেয় বিজেপি। সেই সভায় অন্যদের মধ্যে ছিলেন রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সুভাষ সরকার, জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় প্রমুখ। মঞ্চে দেখা গিয়েছে পাড়ুইয়ের নির্যাতিতা মহিলাকেও। সেই সভা শেষেই, পৌনে পাঁচটা নাগাদ কোটাসুরে বিজেপির মণ্ডল কমিটির অফিস ছাড়িয়ে মদনেশ্বর তলায় রূপা পৌঁছন প্রাক্তন জেলা সভাপতির বাড়িতে।
মিনিট কুড়ি দুধকুমারের বাড়িতে ছিলেন রূপা। কী কথা হল? দুধকুমার কি দলে ফিরছেন? সরাসরি জবাব এড়িয়ে রূপা বলেন, ‘‘আপনারা সবেতেই জল্পনা খোঁজেন কেন বলুন তো?’’ দু’জনেই এ দিনের সাক্ষাৎকে সৌজন্য সাক্ষাৎ বলে দাবি করেছেন।
এ দিনের প্রতিবাদ সভা ঘিরে স্থানীয় বাসিন্দাদের কৌতূহল ছিল চরমে। বিশেষত সাজু শেখ এবং যে সব পরিবার পুলিশি নিগ্রহের শিকার হয়েছেন, তাঁরা আশা করেছিলেন রূপা হয়তো তাঁদের বাড়িতে আসবেন। সভাস্থল থেকে সাজুর বাড়ির দূরত্ব মেরেকেটে তিনশো মিটার। তার টেনে মাইক পৌঁছে গিয়েছিল বাড়ির দোরগোড়ায়। ওই বাড়ির পাশ দিয়েই রূপা-সহ অন্য নেতারা গিয়েছিলেন সভাস্থলে। মঞ্চে নেতাদের বক্তৃতায় পুলিশি নিগ্রহ এবং নিজের বাড়ির কথা মাইকে বার বার শুনেছেন সাজুর বিধবা স্ত্রী সরফা বিবি। কিন্তু, কেউই না আসায় দিনের শেষে সকলে হতাশ।
ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, দুই ছেলেমেয়েকে জড়িয়ে ধরে বসে রয়েছেন সরফা বিবি। কান্না চেপে জানান, স্বামী পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। কী করে ছেলেমেয়েকে মানুষ করবেন, তা বেবে দিশাহারা। তিনি বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম রূপাদেবী বাড়িতে এলে তাঁকে সব সমস্যা খুলে বলব।’’ রূপা অবশ্য জানিয়েছেন, কারও বাড়ি যাওয়া এ দিনের কর্মসূচিতে ছিল না। একই বক্তব্য জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়েরও।