Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

শরিকি তোপ মোকাবিলায় সূর্য-বিমানেরা

মতবিরোধ গোড়া থেকেই ছিল। সিঙ্গুরের জমি ফেরানো নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় ফের পুরনো ক্ষত উস্কে দিল বামফ্রন্টে! খোলাখুলি ভুল স্বীকারের কথা বলে বিবৃতি জারির দাবি জানাল বাম শরিকেরা। দাবি খারিজ করে প্রকাশ্যে আর জল ঘোলা না করারই কৌশল নিল সিপিএম।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:০৯
Share: Save:

মতবিরোধ গোড়া থেকেই ছিল। সিঙ্গুরের জমি ফেরানো নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় ফের পুরনো ক্ষত উস্কে দিল বামফ্রন্টে! খোলাখুলি ভুল স্বীকারের কথা বলে বিবৃতি জারির দাবি জানাল বাম শরিকেরা। দাবি খারিজ করে প্রকাশ্যে আর জল ঘোলা না করারই কৌশল নিল সিপিএম।

আলিমুদ্দিনে বুধবার বামফ্রন্টের বৈঠকে উঠেছিল সিঙ্গুর-প্রসঙ্গ। ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা নরেন চট্টোপাধ্যায় দাবি তোলেন, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পরে এ দিনই যে হেতু প্রথম বামফ্রন্টের বৈঠক হচ্ছে, তাই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে বিবৃতি দেওয়া হোক। যাতে জনমানসে বামেদের সম্পর্কে বিভ্রান্তি না থাকে। তাঁকে সমর্থন করেই মুখ খোলেন আরএসপি-র ক্ষিতি গোস্বামী, সিপিআইয়ের মঞ্জুকুমার মজুমদার, স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়েরা। তাঁরা বলেন, সিঙ্গুরে টাটার প্রকল্পের জন্য জমি নেওয়ার সময় থেকেই শরিকদের তরফে প্রবল প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল। কিন্তু সিপিএম নেতৃত্ব তা কানে তোলেননি। এখন দলের পলিটব্যুরো এক দিকে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ভুলের কথা বলছে। আবার রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র দলীয় মুখপত্রে যে নিবন্ধ লিখেছেন, তাতে মনে হচ্ছে তাঁরা ঠিকই করেছিলেন!

বৈঠকে বিমান বসু, সূর্যবাবু, রবীন দেবেরা যুক্তি দেন, সিঙ্গুর নিয়ে আদালতের নির্দেশ পালনের দায়িত্ব এখন রাজ্য সরকারের। এই অবস্থায় বামফ্রন্টের আগ বাড়িয়ে কিছু করতে যাওয়া অর্থহীন। আর লিখিত ভাবে বা মুখে সিপিমের রাজ্য নেতৃত্ব শুধু এই কথাই মনে করিয়ে দিতে চাইছেন যে, শিল্পায়নের লক্ষ্যে এগোনোর সদিচ্ছায় কোনও ভুল ছিল না। ভুল ছিল পদ্ধতিগত। তা ছাড়া, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে যেখানে মাথা পিছু জমির পরিমাণ স্বল্প, সেখানে অধিগ্রহণ ছাড়া এক লপ্তে জমি কী ভাবে পাওয়া যেতে পারে— এর উত্তর কারও কাছে আছে কি?

সিপিএম নেতৃত্বের যুক্তিতে শরিক নেতারা অবশ্য খুব আশ্বস্ত হননি। বৈঠকের পরে ক্ষিতিবাবু যেমন আলিমুদ্দিনের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলেছেন, ‘‘আমরা প্রথম থেকেই বলেছিলাম, ভুল হচ্ছে। এখন আরও যাঁরা আত্মসমালোচনা করছেন, মিউ মিউ না করে জোরে বলুন!’’ বিমানবাবু আবার পাল্টা চেষ্টা করেছেন, ফ্রন্টের মতপার্থক্য বাইরে না আনতে। এই নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘সিঙ্গুরের প্রসঙ্গ এসেছিল। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ইচ্ছুক-অনিচ্ছুক নির্বিশেষে জমি ফেরত দিতে হবে। সরকারের এখন দায়িত্ব জমি ফেরত দেওয়া। তারা দায়িত্ব পালন করুন।’’ তাঁদের তরফে কি আইনি কোনও পদক্ষেপের ভাবনা আছে? বিমানবাবুর জবাব, ‘‘আমাদের এখন কিছু করার নেই। আইনি পথে আবেদন নিয়ে কথাও হয়নি। তবে কোনও ব্যক্তি বা আইনজীবী চাইলে আদালতের দ্বারস্থ হতেই পারেন।’’

সুযোগ পেয়ে এ দিন ফ ব-র নরেনবাবু, আরএসপি-র মনোজ ভট্টাচার্যেরা বৈঠকে জানতে চান, আসন্ন প্লেনামে সিপিএম ফের কংগ্রেসের হাত ধরার লাইনে সিলমোহর দেবে কি না? সুর্যবাবুরা জানান, এই প্লেনাম (আলোচনার মোট সময় একই রেখে অধিবেশনের দিন তিন থেকে কমিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর ও ১ অক্টোবর, দু’দিন করা হয়েছে) সাংগঠনিক। নরেনবাবুরা আবার বলেন, কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএম যেতে চাইলে তাঁরা একসঙ্গে কর্মসূচিতে যাবেন কি না, ভেবে দেখতে হবে! সূর্যবাবু ফের ব্যাখ্যা করেন, প্রথমে দলীয়, তার পরে বামফ্রন্ট, তার পরে ফ্রন্টের বাইরের বাম দল এবং শেষে গণতন্ত্র রক্ষায় ধর্মনিরপেক্ষ সব দলকে নিয়ে আন্দোলনের পন্থা আগেই ঠিক হয়ে আছে। এই শেষ স্তরের মধ্যে কংগ্রেসও আছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

RSP Forward Bloc CPM Singur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE