Advertisement
E-Paper

শাসক-বিরোধীকে বিঁধছে সেই লক্ষ্মণ কাঁটাই

নির্বাচন কমিশনের তরফে ভোট ঘোষণার দিনই প্রার্থী ঘোষণা করে ভোটের লড়াইয়ে বিরোধীদের চেয়ে এক কদম এগিয়ে গিয়েছে শাসক দল তৃণমূল। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ১৬ টি আসনেই জয় পেয়েছিল তৃণমূল।

আনন্দ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৬ ০১:০৮

নির্বাচন কমিশনের তরফে ভোট ঘোষণার দিনই প্রার্থী ঘোষণা করে ভোটের লড়াইয়ে বিরোধীদের চেয়ে এক কদম এগিয়ে গিয়েছে শাসক দল তৃণমূল। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ১৬ টি আসনেই জয় পেয়েছিল তৃণমূল। তবু এ বার ভোটে কয়েকটি আসনে প্রার্থী তালিকায় উল্লেখযোগ্য রদবদল করা হয়েছে। তমলুক বিধানসভায় জিতে মন্ত্রী হওয়া সৌমেন মহাপাত্রকে এ বার পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলায় প্রার্থী করা হয়েছে। তমলুকে এবার প্রার্থী করা হয়েছে নির্বেদ রায়কে। একইভাবে হলদিয়ার বিধায়ক শিউলি সাহাকে প্রার্থী করা হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশপুরে। হলদিয়ায় প্রার্থী করা হয়েছে জেলা পরিষদের সভাধিপতি মধুরিমা মণ্ডলকে। অন্য দিকে তৃণমূল নেত্রীর পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী নন্দীগ্রামে এবার প্রার্থী হয়েছেন সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। আর নন্দীগ্রামের বিধায়ক ফিরোজা বিবিকে প্রার্থী করা হয়েছে পাঁশকুড়া পশ্চিম আসনে।

তা হলে কি এ বার ১৬টি আসনে জয় পাওয়া নিয়ে সন্দিহান তৃণমূল?

তৃণমূলের একাংশ নেতা-কর্মীদের মতে, গতবার বিরোধী দল হিসেবে নন্দীগ্রামকাণ্ড নিয়ে প্রচারের জেরে দলের প্রার্থীকে জেতাতে অনেক সুবিধা হয়েছিল। এ বার বিরোধীদের প্রচারের ঝড় সামলাতে হবে তৃণমূলকে। ফলে এবার লড়াই এমনিতেই কঠিন। তার উপর এবার জেলায় বেশ কয়েকটি আসনে বহিরাগত প্রার্থী ও বিভিন্ন কারণে স্থানীয় নেতৃত্বের ক্ষোভ দানা বাঁধছে। আর বিরোধী শিবির বাম-কংগ্রেস জোট বাঁধার ফলে ভোটের অঙ্কে পরিবর্তন হবে। ফলে এবার নির্বাচনে জেলার কয়েকটি আসনে জেতা নিয়ে সংশয় থাকছেই। জানা গিয়েছে, পাঁশকুড়া, হলদিয়া, মহিষাদল, নন্দকুমার বিধানসভায় শাসকদলের প্রার্থীদের সঙ্গে বিরোধীদের জোর লড়াই হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। ফলে এইসব আসন নিয়ে শাসকদলের অন্দরেও চিন্তা রয়েছে।

এখনও প্রার্থী তালিকা ঘোষণা না করলেও পিছিয়ে থাকার কথা মানতে নারাজ বামেরা। কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের জোট সম্ভবনার কথা মাথায় রেখেই তৃণমূলের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার আশায় রয়েছে বাম শিবির। শনিবার তমলুকে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে ওই কমিটি গঠনের পর্যালোচনার পাশাপাশি প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচার কৌশল আলোচনা হয়। সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলেন, ‘‘বিধানসভা নির্বাচনের জন্য জেলার প্রতিটি এলাকায় বুথস্তর থেকে বিধানসভা স্তর পর্যন্ত নির্বাচনী কমিটি গড়া হচ্ছে। আর প্রার্থীদের হয়ে শরিকদলগুলির সঙ্গে যৌথ প্রচারের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’’ কেন এমন সিদ্ধান্ত?

২০১১ সালে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের আগে পর্যন্ত শাসকদলের বড় শরিক হিসেবে সিপিএম নেতৃত্বর ভূমিকা নিয়ে ‘দাদাগিরি’র অভিযোগ তুলত অন্যান্য বামশরিক দলগুলি। নন্দীগ্রামকাণ্ডের জেরে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় কোণঠাসা হয়ে পড়ে সিপিএম। প্রতিকুল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সিপিএমের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বেসুরে বক্তব্য শোনা গিয়েছিল শরিকদলের নেতাদের মুখে। ফলে রাজনৈতিকভাবেও জেলায় প্রায় নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিল জেলা সিপিএম। রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পর তৃণমূলের প্রবল চাপ এসে পড়ে বাম শরিকদলগুলির উপরেও। ফলে জেলায় শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে আন্দোলন কর্মসূচিতে সিপিএম একক উদ্যোগ ছেড়ে গুরুত্ব দিতে শুরু করে বামফ্রন্টের শরিক দলগুলিকে। আর নিজেদের অস্তিত্বরক্ষার তাগিদে সিপিএমের ডাকে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসে শরিকদলগুলিও। শরিকদের কাছে টেনে প্রচারের উদ্যোগ নিয়ে সিপিআই’এর জেলা সম্পাদক অশোক দিন্দা বলেন, ‘‘যৌথ আন্দোলনের জেরে বামফ্রন্টের শরিকদলগুলির মধ্যে বোঝাপড়া অনেক জোরদার হয়েছে। এবার প্রার্থীদের হয়ে নির্বাচনের প্রচারের ক্ষেত্রেও সুবিধা পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।’’

শাসকদল তৃণমূলের শিবিরে যেমন জয়ের পথে যেমন একাধিক কাঁটা রয়েছে তেমনি বিরোধী বামেদের শিবিরেও রয়েছে লক্ষ্মণ কাঁটা। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সিপিএমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা লক্ষ্মণ শেঠ ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের মুখে বহিষ্কৃত হন। পুরনো একাধিক অনুগামী নেতা-কর্মীদের নিয়ে ভারত নির্মাণ পার্টি নামে নতুন দল গড়েছেন লক্ষ্মণবাবু। কিছুদিন আগেই লক্ষ্মণবাবু জানিয়েছিলেন কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁরা জোটে আগ্রহী। ফলে জেলায় বামেদের কাছে ফ্যাক্টর হিসেবে থাকছে লক্ষ্মণবাবুর দল। কিন্তু নির্বাচনে সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট হওয়ার পথ প্রশস্ত হয়েছে। ফলে এই পরিস্থিতিতে লক্ষ্মণবাবুর দল কি ওই জোটে সামিল হবে? লক্ষ্মণবাবু জানিয়েছেন, ‘‘আমরা সিপিএমে ফিরে যাব না। সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের জোটের পরিস্থিতি হলে আমাদের দল কি করবে তা দলীয়ভাবে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’

ruling party opposition east midnapore assambly election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy