Advertisement
০৮ মে ২০২৪

ঘরের কাঁটা তুলতে ভাগে ভরসা তৃণমূলের

উত্তর খুঁজতে গেলে কান পাততে হবে সবং বাজারের জটলায়। বা নির্বাচনী নানা কার্যালয়ের বাইরে।

দলে কোন্দল। তাই নিজেকে নেত্রীর পছন্দের প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরে প্রচারে গীতারানি ভুঁইয়া। বুধবার সবংয়ে। —নিজস্ব চিত্র।

দলে কোন্দল। তাই নিজেকে নেত্রীর পছন্দের প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরে প্রচারে গীতারানি ভুঁইয়া। বুধবার সবংয়ে। —নিজস্ব চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৫:১৩
Share: Save:

নির্বাচনী ফ্লেক্সের এক পাশে দলনেত্রী। অন্য পাশে প্রার্থী। এবং সর্বত্রই আহ্বান ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনোনীত প্রার্থী’কে ভোট দেওয়ার।

তৃণমূল মানেই মমতা, এই কথা বোঝার জন্য কোনও পুরস্কার নেই ঠিকই। কিন্তু তৃণমূলের প্রার্থীর বদলে সরাসরি তৃণমূল নেত্রীর মনোনীত প্রার্থী বলে আলাদা করে চিনিয়ে দিতে হচ্ছে কেন গীতারানি ভুঁইয়াকে?

উত্তর খুঁজতে গেলে কান পাততে হবে সবং বাজারের জটলায়। বা নির্বাচনী নানা কার্যালয়ের বাইরে। যেখানে শোনা যাবে তৃণমূলের কর্মীদের প্রশ্ন, এক জন তো এলেন, রাজ্যসভা আর বিধানসভার টিকিট পেয়ে গেলেন। আমরা কী পেলাম? আরও গভীরে গিয়ে স্থানীয় তৃণমূলের ঘরে ঢুকলে শোনা যাবে, কোন স্থানীয় নেতার মোবাইলের স্ক্রিনে মাঝেমধ্যে ভেসে উঠছে সদ্য তৃণমূলত্যাগী এক হেভিওয়েট নেতার নাম। শোনা যাবে, শীতের রাতে মাফলার জড়িয়ে তেমাথানির কোন ইউনিয়ন কার্যালয়ের আস্তানায় হয়ে যাচ্ছে খবর আদানপ্রদান।

যত শোনা যাবে, ততই বোঝা যাবে সবংয়ের এই অকাল ভোটে তৃণমূলকে আসলে খুব স্বস্তিতে রাখেনি তৃণমূলই! একে তো পরম্পরাগত ভাবে সবংয়ে ভোটের নিরিখে তৃণমূল এক নম্বর দল নয়। প্রথম দুই স্থানের লড়াইয়ে চিরাচরিত ভাবে থাকে কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট। বিগত ২০১১ সালে তৃণমূলের সঙ্গে জোটে থেকে আসনটি জিতেছিল কংগ্রেস। আবার ২০১৬-য় বামেদের সমর্থনে এখান থেকে তৃণমূলকে বিপুল ব্যবধানে হারিয়েছিলেন কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়া। মাঝে ২০১৪-র লোকসভা ভোটে কোনও জোট ছিল না। চতুর্মুখী লড়াইয়ে তখন সবং বিধানসভা এলাকায় কংগ্রেস শ’আড়াই ভোটে প্রথম, বামেরা দ্বিতীয়। তৃণমূল ছিল তৃতীয় এবং বিজেপি চতুর্থ। এ বারও লড়াই চতুর্মুখী। এবং এই পাটিগণিত মাথায় রেখেই জমছে ভোট কাটাকাটির অঙ্ক!

কংগ্রেসের প্রস্তাব মেনে সিপিএম সবং তাদের ছেড়ে দিলে এ বারও তৃণমূলের খেল খতম ধরে নিতে হতো! কিন্তু সিপিএম লড়াকু এক প্রার্থীকে ময়দানে রেখেছে। সেই রীতা মণ্ডল জানা নির্ভীক কণ্ঠে বলছেন, ‘‘বুথ আগলাতে কর্মীর চেয়ে মানুষকে বেশি প্রয়োজন। আর কেউ মারতে এলে আগে আমায় মারতে হবে! তার পরে কর্মীদের গায়ে হাত!’’ সিপিএমের লক্ষ্য, তাদের আগেকার ভোট ধরে রাখা। কংগ্রেস এবং বিজেপি-র লক্ষ্য, তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ কর্মীদের ভোট নিজেদের দিকে টেনে আনা। এক সঙ্গে তিন বিরোধী— বাম, কংগ্রেস ও বিজেপি নেতারা তৃণমূল কর্মীদের ‘আত্মসম্মান’ বোধ উস্কে দেওয়ার চেষ্টাই চালিয়েছেন।

ঘরের মধ্যে কাঁটা নিয়ে তৃণমূলের তা হলে ভরসা কোথায়? তাদের অঙ্ক, বামেরা নিজেদের ভোট যতটা পারে ধরে রাখুক। আবার বিজেপি বাকি বিরোধীদের ভোট টেনে কিছুটা বেড়ে উঠুক। বিরোধী ভোট ভাগাভাগির এই অঙ্কেই গীতাদেবীর বিধানসভায় যাওয়ার রাস্তা পরিষ্কার হবে। সঙ্গে সবং কেন্দ্রে মানসবাবুর দীর্ঘ দিনের উন্নয়নমূলক কাজের কিছু প্রভাব তো আছেই। এত অস্বস্তি, বিক্ষুব্ধ কাঁটা সামলে তরী তীরে ভেড়াতে পারবেন? দু’দিকে মাথা নেড়ে মানসবাবু বলছেন, কোনও মন্তব্য নয়। আর মানসবাবুর পরিবার থেকেই প্রার্থী হওয়ায় যিনি খুব ‘খুশি’ বলে স্থানীয় মহলে চর্চা হচ্ছে, সেই অমূল্য মাইতি বলছেন, ‘‘প্রার্থী মনোনয়ন করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর উপরে আর কোনও কথা নেই।’’

নিজের লোকজন, নিজের সম্পদ, নিজের নাটকীয়তা দিয়ে স্ত্রীকে উতরে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন মানসবাবু। ‘বেইমান’ প্রচারের জবাবে কাতর কণ্ঠে বলছেন, প্রদেশ কংগ্রেসের ‘জগাই-মাধাই’ এক গ্লাস জলও না দিয়ে তাঁকে বিতাড়িত করেছে! তৃণমূলের কলকাতার নেতা-মন্ত্রীরা প্রচারে মুখ দেখিয়ে ফিরে এসেছেন। পাশে থেকে লড়াইটা সে অর্থে করছেন শুভেন্দু অধিকারী। যিনি রাজনৈতিক লাইনটাও বেঁধে দিয়েছেন— ‘‘সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি, এসইউসি চারটি দল এক সুরে আমাদের বিরুদ্ধে বলছে। তার মানে আমরাই ঠিক পথে আছি।’’

পথ ঠিক গন্তব্যে পৌঁছল কি না, জানা যাবে ২৪ ডিসেম্বর!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE