Advertisement
E-Paper

মমতার বকুনিতে ক্ষুব্ধ সাধন, বাড়ল দ্বন্দ্ব

নেতা-কর্মীদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব মেটাতে বলে দলীয় বৈঠকে নেত্রী ভর্ৎসনা করেছেন। কিন্তু তার জেরে উত্তর কলকাতায় তৃণমূলে অন্তর্দ্বন্দ্বের আশঙ্কা আরও বাড়ল বলেই দলীয় নেতৃত্বের একাংশের অভিমত। কী রকম? দলীয় সহকর্মীদের সামনে তাঁর মতো বর্ষীয়ান নেতাকে দলনেত্রী ধমক দেওয়ায় সাধন পাণ্ডে মানসিক ভাবে ‘আহত’ হয়েছেন। তাঁর সঙ্গে শশী পাঁজার মধ্যে দূরত্ব বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে দলীয় সূত্রে। আবার এই আবহে সাধনবাবুর সঙ্গে উত্তর কলকাতার দাপুটে তৃণমূল নেতা ও কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষের সম্পর্কের উন্নতি ঘটেছে।

সঞ্জয় সিংহ

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৫ ০৪:২৪

নেতা-কর্মীদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব মেটাতে বলে দলীয় বৈঠকে নেত্রী ভর্ৎসনা করেছেন। কিন্তু তার জেরে উত্তর কলকাতায় তৃণমূলে অন্তর্দ্বন্দ্বের আশঙ্কা আরও বাড়ল বলেই দলীয় নেতৃত্বের একাংশের অভিমত।

কী রকম? দলীয় সহকর্মীদের সামনে তাঁর মতো বর্ষীয়ান নেতাকে দলনেত্রী ধমক দেওয়ায় সাধন পাণ্ডে মানসিক ভাবে ‘আহত’ হয়েছেন। তাঁর সঙ্গে শশী পাঁজার মধ্যে দূরত্ব বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে দলীয়
সূত্রে। আবার এই আবহে সাধনবাবুর সঙ্গে উত্তর কলকাতার দাপুটে তৃণমূল নেতা ও কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষের সম্পর্কের উন্নতি ঘটেছে।

উত্তর কলকাতার দলের এই দুই মন্ত্রী ও মেয়র পারিষদের অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়ে শনিবার কালীঘাটে তাঁর বাড়িতে দলীয় বৈঠকে মুখ খোলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরভোটে উত্তর কলকাতায় প্রার্থী দেওয়া নিয়ে অর্ন্তদ্বন্দ্বের জেরে যে কোনও মুহূর্তে বড় অঘটন ঘটে যেতে পারে বলে পুলিশ রিপোর্ট দিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীকে। তার পরেই সাধন-শশীকে সতর্ক করেন মমতা। নির্দেশ দেন, অবিলম্বে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া মেটাতে হবে এবং কেউ কারও ব্যাপারে নাক গলাবেন না।

এই নির্দেশের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রবিবার সাধনবাবু মুখ খুলেছেন। বলেছেন, ‘‘গত কাল সকলের সামনে আমাকে যে ভাবে ভর্ৎসনা করা হয়েছে তাতে আমি আহত। প্রত্যেকের একটা আত্মসম্মান আছে। আমি ৩০ বছরের বিধায়ক। তার পরেও আমাকে যে ভাবে বলা হল, তা কাঙ্খিত নয়।’’ ঘনিষ্ঠ মহলে সাধনবাবু দাবি করেছেন, তাঁকে নিশানা করা সহজ বলেই নেত্রী আঘাত করতে পেরেছেন। পুলিশের রিপোর্টে কোনও অভিযোগ থাকলে মুখ্যমন্ত্রী দুই মন্ত্রীকে তাঁর ঘরে ডেকে সতর্ক করতে পারতেন। দু’জন ক্যাবিনেট মন্ত্রীকে সহকর্মীদের সামনে না বলে দলের জেলা সভাপতি বা দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নিয়ে আলোচনা করে নিতে পারতেন দলনেত্রী। গোটা ঘটনায় সাধনবাবু যথেষ্ট ক্ষুব্ধ।

শশীদেবী অবশ্য সাধনবাবুর মতো প্রকাশ্যে নেত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেননি। বরং তিনি বলেন, ‘‘দিদি তো ভাল কথা বলেছেন। যে যার নিজের এলাকায় কাজ করবেন। আমি তো তা-ই করি।’’ এই মন্তব্যে সাধনবাবুর প্রতি হালকা খোঁচা রয়েছে বলে মনে করছেন সাধন-ঘনিষ্ঠেরা। সব শুনে সাধনবাবুর আবার পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘তা হলে কি আমি নিজের এলাকার বাইরে যাব না? আমার নির্বাচনী কেন্দ্রের বাইরে অনেক সংগঠন, এমনকী দলের নেতা-কাউন্সিলরদের আমন্ত্রণেও সাড়া দেব না?’’ তিনি জানিয়েছেন এ বিষয়ে অতীনবাবুর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, ‘‘অতীনও আমাকে বলল, আমরা কি উত্তর কলকাতার সমস্ত মানুষের সঙ্গে সামাজিক সম্পর্ক রাখতে পারব না?’’

অতীন নিজে অবশ্য এ ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমের কাছে মন্তব্য করতে চাননি। তবে তিনি বিস্মিত পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘পুরভোটে বা তার পরে শ্যামপুকুর এলাকায় কোনও ঘটনা ঘটেনি। তা হলে কীসের ভিত্তিতে পুলিশ আমার নাম রিপোর্টে জুড়ে দিল?’’ এই ঘটনাই সাধনবাবু আর অতীনবাবুকে কাছাকাছি এনেছে। ইতিমধ্যেই সাধন-অতীনের অনুগামীদের একাংশ হাত মিলিয়েছেন বলেও খবর।

উত্তর কলকাতা জেলা তৃণমূল সভাপতি ও সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এর পরেও দাবি করছেন, সাধন-শশীর মধ্যে তেমন কোনও সমস্যা নেই। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁরা দু’জনেই দায়িত্বশীল নেতা। নেত্রী যা নির্দেশ দেবেন তা সকলে অনুসরণ করবেন।’’ দলে কোনও গোলমাল নেই, তার প্রমাণ দিতে তিনি বলেন, ‘‘৫০ নম্বর ওয়ার্ডে মৌসুমী দে-র জয় উপলক্ষে এ দিন মধ্যাহ্ন ভোজনের আয়োজন হয়েছিল। সেখানে শশী এসেছিলেন। আমি, নয়না গিয়েছিলাম। আবার সাধনবাবুর স্ত্রীও এসেছিলেন। খুব হইচই হল। তা হলে গোলমাল কোথায়?’’ এলাকার তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের বেশির ভাগই অবশ্য সুদীপবাবুর মতো নিশ্চিন্ত নন। বরং তাঁরা ঝড়ের পূর্বাভাস টের পেয়ে প্রমাদ গুনছেন।

এর আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ ঢোকার ব্যাপারে দলীয় লাইনের বাইরে গিয়ে মুখ খোলায় সাধনবাবুর উপরে বেজায় চটেছিলেন দলনেত্রী। পরবর্তী সময়ে মুকুল রায়-পর্বে দলের পক্ষে সওয়াল করায় নেত্রীর সঙ্গে সাধনবাবুর সম্পর্কের ফের উন্নতি হয়েছিল। কিন্তু
পুরভোটে প্রার্থী তালিকা নিয়ে শশী-শিবিরের সঙ্গে তাঁর অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে নেত্রীর সঙ্গে সাধনবাবুর সম্পর্কে আবার চিড় ধরেছে বলেই তৃণমূলের অনেকের ধারণা।

ক্ষুব্ধ সাধনবাবু এখন কী করবেন? তাঁর জবাব, ‘‘কী আর করব? আমি যে ঘরটা ধরে রেখেছি, কেউ একটা ভুল কথা বলেছে বলে সেই ঘরকে তো ধ্বংস করে দিতে পারি না!’’

atin ghosh shashi panja Sadhan Pande sanjay singha mamata bandopadhyay trinamool tmc
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy