Advertisement
২১ মে ২০২৪
Gita Jayanti

গীতা পড়তে ব্রিগেড চলো, লক্ষাধিকের সমাবেশ চায় ‘সনাতন’ শিবির, মুখ্যমন্ত্রীকে প্রধান অতিথি করার ভাবনা

পুজোর আমেজ না কাটতেই যেন কলকাতায় নতুন পুজোর প্রস্তুতি শুরু হল। ডিসেম্বরে বড়দিনের আগেই ব্রিগেডে লক্ষ কণ্ঠে গীতা পাঠের আয়োজন হতে চলেছে। থাকতে পারেন রাষ্ট্রপতিও।

Graphical representation

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

পিনাকপাণি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:৫৯
Share: Save:

শীতের কলকাতায় এ বার নতুন আয়োজন। হিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে ব্রিগেডে ‘লক্ষ কণ্ঠে গীতা পাঠ’ হতে চলেছে। সেই আয়োজনে দেশের দুই শঙ্করাচার্যের পাশাপাশি রাষ্ট্রপতিও উপস্থিত থাকতে পারেন। আর দ্রৌপদী মুর্মুর পাশেই প্রধান অতিথি হিসাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পেতে চান আয়োজকেরা। আগামী সপ্তাহেই দ্রৌপদী ও মমতাকে আমন্ত্রণ জানাতে যাওয়ার পরিকল্পনা।

সঙ্ঘ পরিবারের বিভিন্ন সংগঠন এই উদ্যোগের আড়ালে রয়েছে বলে জানা গেলেও কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে ‘অখিল ভারতীয় সংস্কৃত পরিষদ’-এর নামে। সংগঠনের সভাপতি তথা ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের সন্ন্যাসী স্বামী প্রদীপ্তানন্দ বলেন, ‘‘এই কর্মসূচি সকলের জন্য। কোনও রাজনীতি নয়, মানব কল্যাণের লক্ষ্য নিয়েই এই অনুষ্ঠানে আমরা কমপক্ষে এক লাখ মানুষের সমাবেশ করব। সমবেত কণ্ঠে তাঁরা গীতা পাঠ করবেন। এটা অতীতে বিশ্বের কোথাও কখনও হয়নি।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমরা রাজ্যে সনাতন ধর্মের যত সংগঠন, আশ্রম, স‌ংস্থা রয়েছে সকলকেই যোগদানের আবেদন জানিয়েছি। সব রাজনৈতিক দলের সাংসদ, বিধায়কদেরও জানাব। আগামী ২ নভেম্বর রাষ্ট্রপতিকে আমন্ত্রণ জানাতে দিল্লি যাওয়া হবে। তিনি উদ্বোধন করবেন। সেটা ঠিক হয়ে গেলেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যাব আমরা। তাঁকে প্রধান অতিথি হিসাবে পেতে চাই।’’ পরিষদের দাবি, মোট ৩,৬০০ হিন্দুত্ববাদী সংগঠন এই কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে লিখিত সম্মতি দিয়েছে।

যা পরিকল্পনা, তাতে আগামী ২৪ ডিসেম্বর ব্রিগেডে হবে সমাবেশ। হিন্দু সংস্কৃতিতে ওই দিন গীতা জয়ন্তী পালনের রেওয়াজ রয়েছে। মনে করা হয় মাঘ মাসের শুক্ল পক্ষের একাদশী তিথিতে গীতার জন্ম হয়েছিল। এই দিনকে মোক্ষদা একাদশী হিসাবেও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পালন করা হয়। কিন্তু বাংলায় সে ভাবে গীতা জয়ন্তী পালনের রেওয়াজ নেই। তবে কি আগামী লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়েই এই আয়োজন? প্রদীপ্তানন্দ এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগই নেই। বাংলা অনেক মহাপুরুষের জন্ম দিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে আমাদের এই পবিত্রভূমির অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। রাজ্যের মানুষ গৌরবময় অতীত ভুলতে বসেছে। এই কারণেই ‘লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠ’ কর্মসূচি।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘গীতায় যা বলা হয়েছে তা প্রত্যেক মানবকে সংযমী, সুশৃঙ্খল, চরিত্রবান হয়ে উঠতে সহায়তা করে। নির্দিষ্ট ধর্ম বা জাতির সীমানার বাইরে সমগ্র মানবতার জন্য দিব্য জ্ঞান দেয়। দুঃখ, বেদনা, অবসাদ, ঘৃণার মনোভাব থেকে মুক্তি দেয়।’’

২৪ ডিসেম্বর রবিবার হওয়ায় ছুটির দিন। সংগঠনের পরিকল্পনা, রবিবারের সকাল ৯টা থেকে জমায়েত শুরু হবে। সমবেত কণ্ঠে গীতাপাঠ শুরু হবে ১০টায়। ১৮ অধ্যায়ের মধ্যে পাঁচটি বাছাই অধ্যায় পাঠ হবে। অনুষ্ঠান শেষ হবে দুপুর ১২টার মধ্যে। ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলেও এর পরে ভোগ-প্রসাদের আয়োজন থাকছে না। প্রদীপ্তানানন্দ জানিয়েছেন, এক লক্ষ প্যাকেটে শুকনো খাবার, এক লক্ষ বোতল জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে সেটা আরও বাড়াতে হবে বলেও তিনি দাবি করেন। আয়োজকদের পক্ষে জানানো হয়েছে, ওই দিনের অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেন বলে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন পুরীর শঙ্করাচার্য নিশ্চলানন্দ সরস্বতী এবং দ্বারকার শঙ্করাচার্য সদানন্দ সরস্বতী। বাকি দুই মঠের শঙ্করাচার্যরাও যোগ দিতে পারেন বলে আশা সংস্কৃত পরিষদের।

ওই কর্মসূচির আগে একটি প্রতিযোগিতারও লক্ষ্য নিয়েছে পরিষদ। স্কুল পড়ুয়া থেকে যে কোনও বয়সের মানুষ অংশ নিতে পারবেন তাতে। পরিষদের সম্পাদক মানস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘অনেক দিন ধরেই পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু এ বার আমরা প্রচার, অর্থ সংগ্রহ ইত্যাদি শুরু করব। আমাদের প্রতিযোগিতা হবে অনলাইনে। বিভিন্ন স্তর অনুযায়ী আলাদা আলাদা প্রতিযোগিতা রয়েছে। গীতা পাঠের অডিয়ো অনলাইনে আপলোড করতে হবে। আবার গীতা সম্পর্কিত প্রবন্ধেরও প্রতিযোগিতা হবে। পুরস্কার দেওয়া হবে ২৪ তারিখ।’’ প্রদীপ্তানন্দের মতো মানসেরও দাবি, এই কর্মসূচির পিছনে রাজনীতির গন্ধ নেই। তবে রাজ্যের বিজেপি নেতাদের অনেকে এই কর্মসূচির আয়োজনে যুক্ত বলে গেরুয়া শিবির সূত্রে জানা গিয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের আগে ৩,৬০০ হিন্দু ধর্মের মঠ, মিশনকে একত্রিত করার লক্ষ্য কি ভোট ব্যাঙ্কের দিকে তাকিয়ে নয়? মানস বলেন, ‘‘ভোট নয়, তবে সকল হিন্দুত্ববাদী সংগঠনকে জোটবদ্ধ রাখার লক্ষ্য রয়েছে। বাংলায় আমিষ, নিরামিষ থেকে শুরু করে নানা বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের মধ্যে। তাদের সকলকে এক ছাতার তলায় আনাই আমাদের কাজ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee RSS
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE