Advertisement
E-Paper

দুর্নীতি কত গভীর, তদন্তে সব্যসাচী

দুর্নীতির পাঁকে লবণহ্রদ কতটা ঘোলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনোভাব বুঝে, এ বার তার পূর্ণাঙ্গ তদন্তও শুরু হয়ে গেল। শাসক দল সূত্রই জানাচ্ছে, বিধাননগর পুর এলাকায় অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়দের মতো কিছু কাউন্সিলরের নেতৃত্বে তোলা আদায় ও জুলুম সামগ্রিক অনিয়মের একটা খণ্ডচিত্র মাত্র।

সঞ্জয় সিংহ

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৬ ০৪:১৪

দুর্নীতির পাঁকে লবণহ্রদ কতটা ঘোলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনোভাব বুঝে, এ বার তার পূর্ণাঙ্গ তদন্তও শুরু হয়ে গেল। শাসক দল সূত্রই জানাচ্ছে, বিধাননগর পুর এলাকায় অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়দের মতো কিছু কাউন্সিলরের নেতৃত্বে তোলা আদায় ও জুলুম সামগ্রিক অনিয়মের একটা খণ্ডচিত্র মাত্র। গত পাঁচ বছরে বিধাননগরে বিভিন্ন বাজার, পার্ক, রাস্তা সংস্কারের কাজে ভূরি ভূরি দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে দলের কাছে। নেত্রীর বার্তার পর সেই সব পুরনো ফাইল ঘেঁটে তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত।

আনন্দবাজারকে মেয়র জানিয়েছেন, ২০১০-এর জুন থেকে ২০১৫ সালের মে পর্যন্ত যে সব পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ হয়েছে, তার যাবতীয় দরপত্র, ঠিকাদারদের পাওনা মেটানো থেকে শুরু তামাম লেনদেন খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। তদন্ত করে দেখতে বলা হয়েছে বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং থেকে পুরসভার রাজস্ব আদায়ের বিষয়টিও। কারণ, অভিযোগ হল হোর্ডিংয়ের জন্য প্রাপ্য ভাড়ার সবটা পুরসভার ভাঁড়ারে জমা পড়েনি! তা পকেটস্থ করেছেন দলেরই কিছু কাউন্সিলর ও নেতা।

সল্টলেকের এক বাসিন্দার কাছ থেকে তোলা চাওয়ার অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে দু’দিন আগে গ্রেফতার হয়েছেন বিধাননগরের ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অনিন্দ্য। কিন্তু তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, অনিন্দ্য একাই নাটের গুরু নন! তাঁর ভাই-দোসর-গডফাদাররা রয়েছেন! দুর্নীতির বহরটাও তাই অনেকটা বড়। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ২০১০ থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত বিধাননগরে প্রায় ১২০০ হোর্ডিং ছিল। এর মধ্যে পুরসভার নিজস্ব হোর্ডিং ছিল ২৬২টি। এক একটি হোর্ডিং বাবদ পুরনিগমের বাৎসরিক প্রাপ্য ছিল পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা। সেই টাকা পুরসভায় জমা পড়েনি। স্থানীয় কিছু কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠরা তা হাতিয়ে নিয়েছেন।

অনিয়ম শুধু হোর্ডিংয়ে আটকে নেই! পুরসভার সূত্র জানাচ্ছে, রাস্তা, পার্ক বা বাজার সংস্কারের কাজে ঠিকাদারদের টেন্ডার দেওয়ার ক্ষেত্রেও ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। বহু ক্ষেত্রে ই-টেন্ডার বা যথাযথ ভাবে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়নি। যেমন অভিযোগ, এক বার ৬ লক্ষ টাকা খরচ করে বিডি মার্কেটের সংস্কারের চার মাসের মাথায় আবার ওই বাজারেই সংস্কারের নামে ৬ লক্ষ টাকা খরচ করা হয়। ঠিকাদার নাম-কা-ওয়াস্তে কাজ করে টাকা নিয়েছেন। তার পর নিজে ১০ শতাংশ বখরা রেখে বাকি টাকা স্থানীয় তৃণমূল নেতা বা তাঁর সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দিয়েছেন।

এই ধরনের কী কী দুর্নীতি হয়েছে সেই তথ্য পুর-কর্তৃপক্ষ সংগ্রহ শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে মেয়র নিজে ইসি ব্লকে বেআইনি ভাবে নির্মিত একটি ধাবা বন্ধ করে দিয়েছেন। সিটি সেন্টার সংলগ্ন ফুটপাথ দখল করে একটি নামকরা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ শুরু করেছিল। মেয়র গিয়ে সেই কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।

তবে সব্যসাচীর পদক্ষেপে একটি উপসর্গও দেখা গিয়েছে তৃণমূলে। যে সময়ের লেনদেন ও কাজকর্ম নিয়ে মেয়র তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন, তখন সল্টলেক ছিল শুধুই পুরসভা। সেই সময় প্রথম দিকে পুরসভার চেয়ারপার্সন ছিলেন অনিতা মজুমদার। পরে চেয়ারপার্সন হন মমতা-ঘনিষ্ঠ কৃষ্ণা চক্রবর্তী। দু’জনের আমলেই ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন সব্যসাচী। তাই, তৃণমূলের অন্দরে জল ঘোলা শুরু হয়েছে। দলের কিছু নেতার কটাক্ষ,‘‘অনিন্দ্য-কাণ্ডে যাদের মুখ পুড়েছে, তারাই এখন কৃষ্ণা-অনিতার গায়ে কালি ছেটানোর চেষ্টা করছে। কারণ, সব্যসাচী সিন্ডিকেট চক্রের অন্যতম মাথা। সম্প্রতি দলীয় মঞ্চ থেকে তাঁর নাম করে সতর্ক করেছিলেন দলনেত্রী।’’

এ নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি উত্তর ২৪ পরগনার তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তবে কৃষ্ণা বলেন, ‘‘তদন্ত হোক না! ভালই তো!’’ আর মেয়রের সাফ কথা, ‘‘দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছি বলেই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। পুর আইন মেনেই কাজ করেছি।’’

sabyasachi dutta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy